• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০১:৩২ অপরাহ্ন

‘হোক না এবার গর্বিত নারী দিবস ওদের মতো পুরুষের জন্য’


প্রকাশের সময় : মার্চ ৮, ২০১৮, ১১:৪৯ AM / ৩৯
‘হোক না এবার গর্বিত নারী দিবস ওদের মতো পুরুষের জন্য’

 

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : ভরা মাসের অন্তসত্ত্বা মেয়েটা। বেশ কিছুক্ষণ ফাঁকা বাসের জন্য অপেক্ষা করল, কিন্তু অফিস ছুটির সময় বাধ্য হয়ে উঠেই পড়ল। কোনরকম ভেতরে ঢুকে মহিলা সিট ঘেঁষে দাঁড়াল। একটা সিটও খালি নেই যথারীতি। আচমকা পিঠে হাতের স্পর্শ, ঘুরে তাকাতে.. একটা কমবয়সী ছেলে। মেয়েটা রেগে কিছু বলতে যাবে…ম্যাডাম আমার সিটে বসুন প্লিজ।

স্তব্ধ মেয়েটা। দু চোখ জ্বালা করে উঠল…..। হোক না এবার গর্বিত নারী দিবস ওদের মতো পুরুষের জন্য।

রেডলাইট এরিয়াটার নাম করা মেয়েছেলে ও। বাবুদের খুশি কি করে রাখতে হবে, সেসব ছলাকলা ওর নখদর্পণে।একটা লাফাঙ্গা এসছে আজ।
পয়সাওয়ালা বাপের বখে যাওয়া ছেলে। মদ টেনেই এসেছে শালা। আবার…
..কই মালের ব্যাবস্থা কই?
..আবার খাবেন?
..হম, আনো।
বিরক্ত মেয়েটা, খুব চেনা আছে এদের..একগলা মাল টেনে বিছানায় বমি, অগত্যা…
..শোন তোমার বাড়ি কোথায়? এখানে কেমন করে এলে?
সবে শাড়ির আঁচল আলগা করছিল মেয়েটা,হকচকিয়ে গেল…
..মানে?
..আরে রাখো ওসব। গল্প করি এসো, আমার সাথে আড্ডা মারার লোকের বড্ড অভাব।
কোথা দিয়ে রাত গড়িয়ে ভোর হল কে জানে…..হোক না এবার গর্বিত নারী দিবস ওদের মতো পুরুষের জন্য।।

বিয়ে হওয়া ইস্তক মেয়েটা অসুস্থ শাশুড়ির সেবা করছে, শয্যাশায়ী উনি।সংসারের যাবতীয় কাজ, তার সাথে ওনার সেবা… মেয়েটা নাজেহাল।স্বামীকে বলতে পারেনি কিছু লজ্জায়, যদি ভুল বোঝে। কলিং বেলের আওয়াজে দরজা খুলল মেয়েটা। একজন মাঝবয়সী মহিলা দাঁড়িয়ে…
..বলুন, কাকে চান?
..আপনাকেই বউদি। আমি আয়া সেন্টার থেকে আসছি।
..আয়া সেন্টার?
..দাদাবাবু যোগাযোগ করেছিলেন তো, ওনার মা অসুস্থ বললেন। আপনাকে বলতে ভুলে গেছেন হয়তো। ফোন করে নিন না।
ফোনে যখন শুনল সব মেয়েটা স্বামীর কাছে, একটা কথাই মনে হল..কত ভুল বুঝি আমরা মানুষকে…..। হোক না এবার গর্বিত নারী দিবস ওদের মতো পুরুষের জন্য।

পাগলি টা লোকের দোরে দোরে খাবার চাইছিল, দেখেও দেখছেনা কেউ।পরনের বস্ত্রটা যে ঠিক কি, বোঝার উপায় নেই। বেশিরভাগ শরীর খোলা, যুবতি পাগলি নগ্ন পেট দেখিয়ে খিদে বোঝাচ্ছিল…
..এই এদিকে আয়।
পাগলি ঘুরে দেখল, চারটে ছেলে। মেয়েদের সহজাত বোধেই হয়ত, থুতু ছুঁড়ে দিল ওদের দিকে। হাত ধরে টানতে টানতে ওরা চারজন নিয়ে গেল পাগলিকে, পরিত্যক্ত গোডাউনে…
..এই নে, এই প্যাকেটে দু’জোড়া পোশাক আছে। পড়ে ফেলবি। আর এই প্যাকেটে খাবার আছে… আর আজ থেকে এখানেই থাকবি। রাস্তায় ঘুরবিনা। কোন দরকার হলে ওই ক্লাবে গিয়ে আমাদের ডাকবি কেমন?
পাগলি বোধহয় দ্বিতীয়বার বোধগম্য হারাল…..হোক না এবার গর্বিত নারী দিবস ওদের মতো পুরুষের জন্য।

মেয়েটা কবিতা লেখে, নিজের মতো। ছেলেটাকে বলেছে দু একবার, উৎসাহ নেই। আর বলেনা, শুধু লেখে। একদিন রাতে…
..আচ্ছা তোমার একটা বই হলে কেমন হয়?
..পাগল নাকি? আমার কবিতা কে ছাপবে?
..কেন, আমি?
..তুমি?কত খরচ জানা আছে তোমার?
..হম, আছে। নিয়েছি খোঁজ।
..তুমি, মানে……
..মুখে বলতে হয় বুঝি সব? নাকি রোজ তোমার লেখা পড়লে বুঝবে যে আমার খুব ভালো লাগে, তুমি লেখালেখি কর?
কবিতা লেখা মেয়েটা, ভাষাই হারিয়ে ফেলল…….হোক না এবার গর্বিত নারী দিবস ওদের মতো পুরুষের জন্য।

খুব কাঁদে মেয়েটা। যবে থেকে ডাক্তার বলেছে ও কোনদিন মা হতে পারবেনা, তবে থেকেই। সমস্যা ওর নিজের সেটাও বলেছে ডাক্তার। কি লজ্জা, মরন হয়না কেন?
..কাল তৈরী থেক, বেরোব।
..আবার নতুন ডাক্তার? কি হবে? দোষ তো আমার, তুমি বিয়ে কর আর একটা।
পরদিন ওরা নামল গাড়ি থেকে, সাইনবোর্ড চোখ টানল মেয়েটার, ‘সেন্ট মেরী হোম এন্ড স্কুল’…
..এখানে?
..আমাদের মেয়েকে নিতে এলাম। তোমার তো মেয়ের শখ…..
আবারও কেঁদে উঠলো মেয়েটা, আনন্দে…….হোক না এবার গর্বিত নারী দিবস, ওদের মতো পুরুষের জন্য।

নারী দিবস তো প্রতিবারই সেই গতানুগতিক ভাবেই পালন করি, শপিং মলের আর গয়নার দোকানের ডিসকাউন্ট বুঝে…নারী দিবস তো প্রতিবারই পালন করি, জবাব চাই, অধিকার চাই এসব বলে…বাকি সারাটা বছরের জন্য না হয় তোলা থাক এসব। অন্য কোন সময় শপিং করব,আর অধিকার? আজ নয় কাল….ছিনিয়েই নেব না হয়। এবারটা হোক না নারী দিবস, সেই সব পুরুষদের সম্মানে। সব ঝেড়ে ফেলে বলি এবারটা, তোমাদের জন্যই হয়ত অনেক ক্ষেত্রে ভালো আছি আমরা।তোমাদের মধ্যেও ভালো খারাপ আছে, ঠিক যেমন আমাদের মধ্যেও।(সংগৃহীত )
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/নুরুজ্জামান/এসডিপি/১১:৪৮পিএম/৮/৩/২০১৮ইং)