• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:৪০ পূর্বাহ্ন

স্মৃতি মনে পড়ে …


প্রকাশের সময় : মে ১১, ২০১৮, ৮:২৪ PM / ৩৬
স্মৃতি মনে পড়ে …

গৌতম রায় : ১৯৯৬ সাল। আজ থেকে ২২ বছর আগের কথা। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীদের ভয়ংকর একটি বছর। জহুর বারুর একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মালয়দের সাথে দ্বন্দ্ব বাঁধে বাংলাদেশীদের। একরাতেই প্রচুর বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয় সেখানে। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশী বিদ্বেষ। যেখানে সেখানে বাংলাদেশী নির্যাতন নিপীড়ন ছিল নৈমত্তিক ঘটনা। ঘটনার পরদিন ঘটনাস্থলে বাংলাদেশীদের পরিস্থিতি দেখতে যাই মরহুম গোলাম আহাদ ও আমি। পরিবেশ সেখানে এত ভয়ংকর ছিল যে বাংলাদেশীদের ঘরে তালাবদ্ধ করে থাকতে হতো। স্থানীয়রা বাংলাদেশী পেলেই যা খুশী তাই করতো। পুলিশ সেদিন কাউকে বাঁচাতে আসেনি। পথে ঘাটে থম থমে পরিবেশ। আজকের মতো ফেইসবুক ও বাংলাদেশীদের এত প্রাইভেট গাড়ি ছিল না। তাই পথে কেউ আমাদের বুঝতে পারেনি বা গাড়ী থামায়নি কেউ। গাড়ী থেকে নামার পর কিছু বাংলাদেশী আমাদের বুঝতে পেরে গেট খুলে ঘরে নিয়ে যায়। এর পর নিরাপত্তার কথা ভেবে রাতে আর বের হইনি। সকালে বের হয়ে চলে আসি কুয়ালালামপুর। পরে হাইকমিশনে গিয়ে পরিস্থিতি জানাই। এর কয়েকদিন পর মালয়েশিয়া সফরে আসেন তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। সেদিন মার খেয়েও কয়েক লাখ বাংলাদেশীকে রক্ষার জন্য ওনার মাধ্যমে মালয়েশিয়াকে আমরা Sorry বলি। তারপর শান্ত হয় পরিস্থিতি।
কিন্তু ক্ষোভ থেকে যায় প্রশাসনে। তখন হাতে গোনা কয়েকজন বাংলাদেশী আমরা এদেশে বিয়ে করেছি। সেই ২২ বছর আগেই আমি ৪ সন্তানের বাবা। মালয়েশিয়ার জনৈক মন্ত্রী মেগাত জুনিত ঘোষনা দিলেন যে সব বাংলাদেশী মালয়েশিয়ায় বিয়ে করেছে তাদের স্ত্রী সন্তানসহ এদেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে। আমি বিদ্রোহ করলাম। TV-3, The star, NST সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ্যে বললাম- ঠিক আছে আমাকে পাঠিয়ে দাও। চলে যাবো। কিন্তু স্ত্রী সন্তান আমি কাউকে নেবো না। টিভি সাক্ষাৎকারে আমার স্ত্রী বললেন- আমার মা, বাবা, সন্তানদের জন্ম মালয়েশিয়ায়। আমি কেন এদেশ থেকে যাবো? আমি কোথাও যাবো না। এদিকে পরিস্থিতি নজরে রাখছিল আমেরিকা এম্বেসী। প্রস্তাব এলো ওরা বের করতে চাইলেই আমাদের লুফে নিবে আমেরিকা। কিন্তু আমি The Star পত্রিকার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মাহাথীরের কাছে এদেশে থাকা ও সুযোগ সুবিধা দেবার দাবী জানালাম। এ নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা চলে অনেক। সেইদিন আমরা মালয়েশিয়ার মিডিয়া, আইনজীবী, এমপি, এনজিও সংস্থার ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিলাম। আমাদের সাথে আরো যুক্ত ছিলেন মালয়েশিয়ায় বর্তমান বিএনপি নেতা বাদেলুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা জামিল হোসেন নাসির প্রমুখ। ওনারাও সে সময় এদেশে বিবাহিত। সারাদেশে সেদিন আমরাই ছিলাম জাতীয় ইস্যু। পক্ষে বিপক্ষে অনেক আলোচনা হয়। জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান Heart to heart এ স্বপরিবারে আলোচনায় বসি আমি। সবশেষে প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথীর মোহাম্মদ সংসদে আমাদের এদেশে থাকার পক্ষে ঘোষনা দিলেন। মালয়েশিয়ায় যুক্তিগত মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে বিজয়ী হলাম আমরা। সেদিনগুলতে আমি হয়ে গেলাম বিজয়ের নায়ক। তারপর থেকে বহু বাংলাদেশী এদেশে বিয়ের অনুমতি পেয়েছে, আইসি পেয়েছে, দাতুক হয়েছে। আরো কত কি! কিন্তু ইতিহাস জানে বা মনে রাখে ক’জন?

আমার দু:খ
———
বিবাহিত যে বাংলাদেশীরা এদেশে বাংলাদেশের সুনাম উজ্জল করতে পারতো, শ্রমিকদের বিপদে হাত বাড়াতে পারতো ওদেরই অনেকে আজ বিভিন্ন অপকর্ম করছে। সাবেক নাজিব সরকারের প্রশাসনের সাথে মিশে বাংলাদেশী শ্রমিকদের শোষনে এগিয়ে আছে। আমার বন্ধু আমিন আজ ‘দাতুক শ্রী’। বর্তমানে G To G ভিসার ১০ লাইসেন্স তার মাধ্যমেই চালিত হচ্ছে। শ্রমিকদের ৩/৪ লাখ টাকায় এদেশে আসতে হচ্ছে। সেদিন আমরা বিজয়ী না হলে আজ তাদের এতকিছু হতো না। কিন্তু প্রবাসে সে ইতিহাস কি মনে আছে কারো?

ড. মাহাথীরের ফান
————–
এই বয়সেও খুব রসিক মাহাথীর। এক সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি বলেন-  বাংলাদেশী কর্মী পাঠান ভালো। কিন্তু শাহরুখ খান পাঠাবেন না।

চিরকৃতজ্ঞ অবিস্মরনীয় নেতা ড. তুন মাহাথীর মোহাম্মদ আপনাকে। আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। অভিনন্দন!
লেখক : গৌতম রায় (প্রবাসী সাংবাদিক, কলামিস্ট)

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৮:২৫পিএম/১১/৫/২০১৮ইং)