• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩৭ অপরাহ্ন

সাংবাদিক পুলিশ সহযোগি নাকি সাংঘর্ষিক?


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৯, ২০২৩, ১০:১৭ PM / ৩৬৭
সাংবাদিক পুলিশ সহযোগি নাকি সাংঘর্ষিক?

নজরুল ইসলাম দয়া : পুলিশ এবং সাংবাদিক পরস্পরের সহযোগি। পুলিশ অপরাধ দমনের জন্য অপরাধীকে আইনের আওতায় আনে, আর সাংবাদিকরা শান্তিপ্রিয় মানুষদের কল্যানে এলাকাটি অপরাধ-অপরাধী মুক্ত রাখার জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পুলিশকে সহযোগিতা করে। সাংবাদিক-পুলিশ ছায়াসঙ্গী। একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। তবে ওয়ারেন্টের আসামি বা মামলার আসামি গ্রেফতারের জন্য সাংবাদিকরা পুলিশের সোর্স না! যারা সাংবাদিকদের পুলিশের সোর্স ভেবেছেন, তাদের জন্য প্রথম জবাব। কিছু অপরাধী নিজের দোষ ঢাকতে অন্যের নাম ছড়ায়.. সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। কান কথা বিশ^াস করলে ঈমানে দাগ লাগবে। কৈফিয়ত দিতে হবে পরপারে। যাকে সোর্স বললেন! সে কি আপনার বাড়ি চিনে? আপনাকে গ্রেফতারের সময় সে কি আপনার গ্রামে বা আশপাশে ছিল? সরাসরি চোখে দেখা আর কান কথা! চোখ বিশ^াস করুন, কান কথায় গুরুত্ব দিলে দুরত্মই বাড়বে, নিজের গুরুত্ব হারাবেন! অনেক সংবাদকর্মী আছেন, যারা গোপনে এবং প্রকাশ্যে পুলিশকে তথ্য দেওয়াসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেন। যেন পরস্পরের সারথি! কেউ কেউ ভাবেন, সাংঘর্ষিক! আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময়ও অনেক সংবাদকর্মী সরাসরি উপস্থিত হন। এবার একটি ফোন রেকর্ডের কথা বলি, (ঘটনা- ২০১৫, ২০১৬ ডকুমেন্টস সংরক্ষন রয়েছে।) পুলিশের কাছে একজন বড় মাপের অপরাধীর তথ্য ছিল। যে একাধারে নারী দিয়ে অনৈতিক কাজের করাতো। গোপনে এবং কৌশলে অস্ত্র বেচাকেনা করতো। চিঠির মাধ্যমে হুমকি পাঠিয়ে অর্থ আদায় করতো! এমন তথ্য পেয়ে সেই অপরাধীকে যাচাই করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে একজন সাংবাদিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সামাজিক দায়বদ্ধতা বিষয়ে নানাভাবে বুঝানোর পর পুলিশকে সহযোগিতার কাজে সাংবাদিক রাজি হয়। পুলিশ কর্মকর্তা একটি নতুন মোবাইল ফোনও কিনে দেয়। সেই সংবাদকর্মী আমি (নজরুল ইসলাম দয়া)। সেই অপরাধীর মোবাইল নম্বর দেওয়া হলো এবং যোগাযোগ রাখতে বলা হলো। অপরাধীর সঙ্গে একজন অপরাধী রুপে মোবাইলে কথা বলা শুরু। (অপরাধীকে যদি বলা হয়, আমি সাংবাদিক! তোমাকে যাচাই করছি! এসব বিষয় টের পেলে কোনো অপরাধী মুখ খুলবে? কথা বলবে?)।
অপরাধীর বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল, কয়েকজন ব্যক্তির জন্য সে বিরক্ত। ওই অপরাধীর নারী এবং অ স্ত্র বেচকেনাসহ চিঠির মাধ্যমে হুমকি পাঠিয়ে অর্থ আদায় করার তথ্যের কিছুটা সুত্রও মেলে। অপরাধীর সঙ্গে একদিন বেশ কিছু সময় ধরে কথা হলো (যে ফোন রেকর্ড নিয়ে একটি চ-ক্র অপতৎপরতায় মেতেছে)। অপরাধীর মোবাইলে কল রিসিভ হতেই সালাম দিলাম। অপরাধীর বিরক্তির কারণ হওয়া কয়েকজন ব্যক্তির বিষয়ে নানা বা-জে কথা বলে তার বিশ^াস অর্জন করে নারী-অস্ত্র বিষয়ে অনেক কথা হয়। (অপরাধীকে বস করতে যা যা করণীয় ছিল, সবাই প্রয়োগ করা হয়)। বিষয়গুলো পুলিশ কর্তাও জানতেন। কিছুদিন পর পুলিশ কর্তা বদলি হতে না হতেই! অপরাধী যাচাই করার সাংবাদিকের সেই কৌশলী ফোনালাপ রেকর্ডও চলে যায় নন্দীগ্রামের দুর্নীতিবাজ, জুয়া ও মাদক কারবারিদের নিয়মিত বখরা হজম করা এক ব্যক্তির কাছে। তার সঙ্গে উপজেলার কদমা গ্রামের শীর্ষ এক মাদক কারবারির একান্ত ঘনিষ্ঠতার তথ্য ছিল পুলিশের কাছে, যদি তদন্ত করা হয়, সেই সুত্রের সত্যতা মিলবে। পুলিশ কোথাও অভিযানে গেলে ওই ব্যক্তি অপরাধীদের সতর্ক করে দিতো। পুলিশের অভিযানও ভেস্তে যেতো। থানার তৎকালিন এক কর্তা নিজে বাদী হয়ে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী জিডি করেছিলেন। ওই ব্যক্তির নেতৃত্বে মাদক কারবারিরা সাংবাদিককে (আমাকে) গ্রেফতার করা হয়েছে বলে গুজব ছড়ায় এবং ছবি এডিটিং করে ছড়িয়ে দেয়। পুলিশ কর্তা বদলি হওয়ার পূর্বে পুলিশের অভিযানে অপরাধীসহ ওয়ারেন্ট ও মামলার আসামি গ্রেফতার হওয়ার পরপরই গ্রেফতারকৃত আসামিদের পরিবারকে বলা হতো, ওই সাংবাদিক ধরিয়ে দিয়েছে (যা সত্য নয়)। এমনকি কারাগারেও একই গুজব রটিয়ে গ্রেফতারকৃত আসামিদের উত্তেজিত ও ক্ষিপ্ত করা হয়। থানার গেটে সাংবাদিকের (আমার) ওপর মাদক কারবারিরা হামলা করে। সেই ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেছিলাম। পুলিশ কর্তা বদলি হওয়ার পর মাদক কারবারিদের অত্যাচারে পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে সেসময়ে কর্মরত পত্রিকার সম্পাদক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে ঢাকা এলাকার নিয়োগ গ্রহণ করি। ঘটনার এলাকায় তখন নয়া পুলিশ কর্তার যোগদান হয়। অপরাধীর সঙ্গে সাংবাদিকের সেই কৌশলী ফোনালাপ রেকর্ড নিয়ে পুলিশ কর্তার কাছে যায় ওই সিন্ডিকেট। পুলিশ কর্তা সেটি যাচাই না করেই জিডি গ্রহন করেন। সেই জিডি আদালতে পৌঁছায়। পুলিশের কাজে সহযোগিতার জন্য অপরাধীর সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি আদালতে জানানো হলে জিডি খারিজ করে দেন বিচারক। বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি হলেও মাঝেমধ্যেই একটি চক্র ছবি এডিটিং করে গ্রেফতার গুজব ছড়ায় এবং পুলিশের কাজে সহযোগিতায় অপরাধীর সঙ্গে সেই ফোনালাপের অডিও রেকর্ড নিয়ে অপতৎপরতা চালায়। যেহেতু আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি (খারিজ) হয়েছে। পূর্বের সেই বিষয়টি নতুন করে অপপ্রচার বা অপতৎপরতা কি আদালত অবমাননা নয়? আইনশৃঙ্খলা বাহীনিকে সহযোগিতা করতে গিয়ে ভূক্তভোগী হওয়া গণমাধ্যমকর্মীর পাশে কি কেউ থাকবেন? নাকি দায়সাড়া জবাব দেবেন! এমন ঘটনায় যদি গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা বা মিথ্যা মামলা এবং অপপ্রচার শুরু হয়, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ নেবে কি!
পুলিশ ও সাংবাদিকের পেশাগত লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। উভয়েই জনগণের স্বার্থে দেশের জন্য কাজ করে থাকে। জনমত গঠনে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মানুষের জানার অধিকার এবং গণমাধ্যমের তথ্য জানানোর গভীর দায়বদ্ধতার প্রশ্নে সামাজিক অঙ্গীকার নিয়ে সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত কাজ করছেন। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র কাঠামোয় গণতন্ত্র ও সংবাদ মাধ্যম পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলতে হয়। সঙ্গত কারণেই সাংবাদিকতাকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। আইন-আদালত, আইন শৃঙ্খলা, মানবাধিকার এবং আইনি সেবা সংক্রান্ত তথ্য আইনে সাংবাদিকতার মাধ্যমে উঠে আসে। সাংবাদিকরা সাধারণ জনগণ তথা বিচারপ্রার্থী জনগণের আশা-আকাঙ্খা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করার গুরু দায়িত্ব পালন করে। ফলে আইনাঙ্গনের সঙ্গে সাংবাদিকতার সম্পর্ক অত্যন্ত নির্বিষ্ট। সাংবাদিকরা মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জাতি গঠনে সচেষ্ট।