• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫১ পূর্বাহ্ন

সনজীদা খাতুন : ৯০ বর্ষীয়ান এক সাংস্কৃতিক কিংবদন্তি


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৫, ২০২৩, ১:১২ PM / ২১০
সনজীদা খাতুন : ৯০ বর্ষীয়ান এক সাংস্কৃতিক কিংবদন্তি

রিপন শান : সনজীদা খাতুন। বাংলাদেশ ও বাঙালি সংস্কৃতির জীয়ল কিংবদন্তি। তিনি একাধারে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক, সঙ্গীতজ্ঞ এবং শিক্ষক। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বর্তমানে সভাপতি। এছাড়া তিনি জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। প্রচলিত ধারার বাইরে ভিন্নধর্মী একটি শিশুশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দা-র সভাপতি।

ছায়ানট সভাপতি বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী অধ্যাপক সনজীদা খাতুনের ৯০তম জন্মদিন আজ। ১৯৩২ সালের ৪ এপ্রিল তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব ড. কাজী মোতাহার হোসেনের কন্যা। তার মায়ের নাম সাজেদা বেগম। তিনি সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার কাজী আনোয়ার হোসেনের বোন এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের স্ত্রী।

সনজীদা খাতুন ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ১৯৭৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
সনজীদা খাতুনের কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষক হিসেবে। শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হন। দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসরগ্রহণ করেন।

ভাষা আন্দোলনে সহযোগ, রবীন্দ্র-শতবর্ষ উদযাপন, বটমূলে বাংলা বর্ষবরণের আয়োজন ইত্যাদির মাধ্যমে বাঙালিত্বের দৃঢ় ভিত গঠনে সনজীদা খাতুনের অবদান অবিস্মরণীয়।
ছোটবেলা থেকেই তিনি সঙ্গীত ও সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়েই বেড়ে উঠেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন।
তিনি ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৬১ সালে স্বামী বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ও সাংবাদিক ওয়াহিদুল হকের সাথে ছায়ানট প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংগঠনের মধ্যদিয়ে ষাট দশক থেকে সঙ্গীত ও বাঙালি সংস্কৃতি জাগরণের আন্দোলনে কাজ করে যাচ্ছেন। শিল্পী কামরুল হাসানের নেতৃত্বে ব্রতচারী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। মুকুল ফৌজে কাজ করেছেন, আবার ছেড়েও দিয়েছেন। তাঁর প্রথম গানের গুরু ছিলেন সোহরাব হোসেন। তাঁর কাছে তিনি শিখেছিলেন নজরুলসংগীত, আধুনিক বাংলা গান এবং পল্লিগীতি। পরে রবীন্দ্রসংগীত শিখেছেন হুসনে বানু খানমের কাছে। পরে আরও অনেকের কাছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার, আবদুল আহাদ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেনসহ কয়েকজন।

দেশ স্বাধীনের পর ছায়ানটের মাধ্যমে সারাদেশে সঙ্গীত ও সংস্কৃতি কর্ম ছড়িয়ে দেন। রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ গঠন করেন। তিনি এই সংগঠনের সভাপতি। সঙ্গীত, সংস্কৃতি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সনজীদা খাতুনের বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে আছে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাসম্পদ, ধ্বনি থেকে কবিতা, রবীন্দ্রনাথ: তাঁর আকাশ ভরা কোলে, নজরুল-মানস, রবীন্দ্র কবিতার গহনে, সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে ছন্দে, প্রভাতবেলার মেঘরৌদ্র, শান্তিনিকেতনের দিনগুলি।

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- একুশে পদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত), দেশিকোত্তম পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)। এছাড়া কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট ১৯৮৮ সালে তাকে ‘রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য’ উপাধি, ২০১৯ সালে ‘নজরুল মানস’ প্রবন্ধ গ্রন্থের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে। ২০২১ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে।

সনজিদা খাতুন ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে তার জীবনের পুরো সময়ই কাটিয়েছেন রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি, লোক সঙ্গীত প্রসারের জন্য। ১৯৬২ সালে রবীন্দ্র সঙ্গীতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী সরকারের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়, তাতে তিনি নেতৃত্ব দেন। ছায়ানট প্রতিষ্ঠা করে সঙ্গীত ও সংস্কৃতির উন্নয়নেই তিনি বেশি সময় কাটান। ৬৮ বছর ধরে সন্‌জীদা খাতুন বাংলাদেশ বা বাঙালি সাংস্কৃতিক স্বাধিকার সংরক্ষণের কাজ করে চলেছেন নিরবধি।