• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন

শিক্ষা নয় সুশিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড


প্রকাশের সময় : জুলাই ১৮, ২০১৯, ১০:০৭ PM / ৮৬
শিক্ষা নয় সুশিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড

সাব্বির আহমেদ : শিক্ষা অমূল্য সম্পদ। একটি জাতির বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য শিক্ষার ভূমিকা অপরিহার্য। শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড ও উন্নতির পূর্বশর্ত। আর সুশিক্ষা একটি জাতির উন্নতির চাবিকাঠি। বাংলায়
ভাবসম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়গুলো অত্যন্ত সুপরিচিত তাদের মধ্যে একটি হলো শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই মনে হয় এই ভাবসম্প্রসারণের প্রচলন শুরু হয়েছিল। ছোটবেলায় এই ভাবসম্প্রসারণ টি শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত ছিল। সকলের কাছেই এই ভাবসম্প্রসারণের এক অন্যরকম মাহাত্ম্য ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে তা একরকম ভুল হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে। দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে সাক্ষরতার হারও। দশ বছর আগেও যেখানে বাংলাদেশের সার্বিক সাক্ষরতার হার ছিল অর্ধেক জনগোষ্ঠীরও কম, বর্তমানে তা দুই-তৃতীয়াংশে ওঠে এসেছে। এতো বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠী শিক্ষিত হলেও দেশের উন্নয়ন রেখা নিম্নমুখী। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে বর্তমানে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু শিক্ষিতের হার?

কিছু সংস্থার পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে সার্বিক সাক্ষরতার হার ২৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭২ দশমিক ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। সবার জন্য শিক্ষার অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য সরকার জাতীয় শিক্ষা নীতিমালা-২০১০ প্রণয়ন করেছে। এতোকিছু করার পরেও কি আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে? একবার এক লোক অত্যন্ত চমৎকার একটি বাড়ি বানালো। বাহারি ডিজাইনের আসবাপত্র দিয়ে বাড়িটি সাজালো। কিন্তু লোকটি ভুলবশত বাড়ির নিচের অংশটির দিকে নজর কম দিয়েছিলেন। ফলাফলস্বরূপ কয়েকদিন পরে বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দৃষ্টিগোচর হয়। তাহলে লোকটির এতো পরিশ্রমের মূল্য কি মাটিতে মিশে গেল।

চলতি বাজেটে গত অর্থবছরের তুলনায় শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। বাজেটে শিক্ষক নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, শিক্ষা পরিবেশের নানা রকম উন্নয়ন, ছাত্রছাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির তুলনায় অবকাঠামো নির্মাণের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বেশি। অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা মুখ্য হলে শিক্ষা উন্নয়নে প্রত্যাশিত অর্জন ব্যাহত হবে, সুফল হবে সুদূরপরাহত।যতই সুদৃশ্য ভবন কিংবা ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হোক, তা সর্বাংশে সার্থক হবে না শ্রেণীকক্ষে একজন সুশিক্ষক না দেয়া পর্যন্ত। অথচ সেদিকে আমাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। আমরা সকলেই সুশিক্ষার অভাবে বিষয়গুলো অনুধাবন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছি প্রতিনিয়ত। আর পরিমাণে গল্পের লোকটির বাড়ির মতো শিক্ষাব্যবস্থার ধ্বংসাবশেষ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।

যে দেশের তরুণসমাজ শিক্ষাখাতের বরাদ্দ ২% কেন তা নিয়ে চিন্তিত না হয়ে সিগারেট আর কলরেট নিয়ে সোচ্চার হয় সেই দেশের ভবিষ্যৎ যে সুখকর হবে না তা সহজেই অনুমেয়। আমরা পারি শুধু নকল ধরলে মাস্টার পিটাইতে! যেদেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে শিক্ষাগুরু কে বেদম প্রহার করা হয় সেদেশে শিক্ষার প্রকৃত মূল্য নাই বললেই চলে।দেশের শিক্ষিত সমাজকে এই বিষয়ে কথা বলতে হবে। অন্যথায় জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হবে। আমাদেরকে শিক্ষার প্রকৃত মূল্য অনুধাবন করে সুশিক্ষার প্রতি দৃষ্টিপাত করতে হবে।

মানুষের মূল্য কোথায়? চরিত্রে, মনুষ্যত্বে,জ্ঞানে ও কর্মে? মানুষের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণের মাপকাঠি গুলো আজকে প্রশ্নবিদ্ধ। তার প্রধান কারণ হলো সুশিক্ষার অভাব। সাক্ষরতাই শিক্ষার সোপান। যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি তত উন্নত ও ক্ষমতাবান। এজন্য সমাজ, দেশ তথা পৃথিবীতে একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী পরিবেশ বিনির্মাণে সাক্ষরতার কোনো বিকল্প নাই। আর বাংলাদেশের পেক্ষাপটে সুশিক্ষার কোন বিকল্প নাই।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১০:০৮পিএম/১৮/৭/২০১৯ইং)