• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:৪২ পূর্বাহ্ন

শরীয়তপুরের ৫০ শয্যার হাসপাতালে মাত্র ২জন ডাক্তার!


প্রকাশের সময় : মার্চ ১৫, ২০১৮, ১০:৪৯ AM / ৪৪
শরীয়তপুরের ৫০ শয্যার হাসপাতালে মাত্র ২জন ডাক্তার!

ঢাকারনিউজ২৪.কম, শরীয়তপুর : শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নানা সমস্যায় জর্জরিত। আয়া নেই, নেই নার্স। মাত্র দু’জন ডাক্তার দিয়ে চলছে ডামুড্যা হাসপাতাল। রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে ঢিলেঢালা ভাবে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। কেউ যেন দেখার নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলছেন, বার বার তাগিদ দেয়ার পরেও কোনো ডাক্তার পোস্টিং দেয়া হচ্ছে না।

ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী বাবুল জানান, শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল। এ হাসপাতালটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। এখানে মাত্র দুইজন ডাক্তার রয়েছে। তার মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহ মো. বদরুদ্দোজা ও গাইনী কনসালটেন্ট হোসনে আরা রোজী। এ দু’জন ডাক্তারের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহ মো. বদরুদ্দোজাই কেবল সব সময় হাসপাতালে থাকেন। ডাক্তার হোসনে আরা রোজী অফিস সময়ে যান আবার অফিস ছুটি হলে শরীয়তপুর শহরে বাসায় চলে যান। মাত্র একজন ডাক্তারই কেবল জরুরী বিভাগ ও বহির্বিভাগ সবইতো সামাল দিতে হচ্ছে। যদিও এ হাসপাতালে ইমরান হোসেন নামের একজন ইউনানী ডাক্তার রয়েছেন। সেতো ইউনানী নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। তাকে তো জেনারেল রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়।

তিনি আরো জানান, প্রতিদিন গড়ে এ হাসপাতালে বহির্বিভাগে কমপক্ষে ৩০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। এর মধ্যে অনেক মূমূর্ষ রোগী থাকে। কেউবা প্রসূতি মা, আবার কেউ ছোট শিশু নিয়ে আসেন চিকিৎসা নিতে। অনেক সময় দেখা যায় দাঙ্গা হাঙ্গামার কাটা ছেড়া রোগী নিয়ে আসে জরুরী বিভাগে। তখন কি করে এ দু’জন ডাক্তার এত রোগী সামাল দিবে। তারপরে আবার ভর্তি রোগীদেরকে ওয়ার্ডে গিয়ে রাউন্ড দিয়ে চিকিৎসাপত্র দিতে হয়। বিশেষ করে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তি বেশী সময় কাটাতে হয় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে। তার জন্য থাকে সভা সমাবেশ সহ নানা কর্মকাণ্ড। এত কিছুর পরেও তাকে বহির্বিভাগের রোগী দেখে চিকিৎসা করতে হচ্ছে।

বাবুল আরো জানান, এ হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে ৩১ শয্যার কার্যক্রম। ২০১৫ সালে এ হাসপাতালটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও আজওবদি ৫০ শয্যার কোনো লোকবল বা কোনো যন্ত্রপাতি বরাদ্ধ করা হয়নি। ফলে ৩১ শয্যার কর্যক্রমই চালু রয়েছে। এ হাসপাতালের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। এখানে ৪ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী দরকার। আছে মাত্র ১ জন। এ একজন কর্মীর পক্ষে হাসপাতালটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই দুষ্কর। পাশাপাশি ভর্তিকৃত রোগী থাকার কথা ৩১ জন। গড়ে প্রতিদিনই রোগী ভর্তি থাকে কমপক্ষে ৪০/৫০ জন। বাধ্য হয়ে এসব রোগীদের খাটে বিছানা দিতে না পেরে তাদেরকে ফ্লোরে বিছানা দিতে হচ্ছে। আর এসকল ভর্তি রোগীদের নার্সিং করা বা তাদের দেখা শুনার জন্য প্রয়োজনীয় সেবিকা বা নার্স নেই। পুরো হাসপাতালে আছে মাত্র ৪ জন নার্স। তারা পর্যায়ক্রমে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এখানে কমপক্ষে ৮ জন নার্স প্রয়োজন। ডামুড্যা উপজেলায় প্রায় ২ লাখ লোকের বসবাস। আর এ ২ লাখ লোকের জন্য মাত্র দুইজন ডাক্তার। কি করে সম্ভব এত লোকের চিকিৎসা সেবা দেয়া। তাই জরুরী ভিত্তিতে এ হাসপাতালে ৫০ শয্যার লোকবল যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় স্টাফ নিয়োগ দেয়ার জন্য এলাকাবাসী জোর দাবি জানিয়েছেন।

ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তিকৃত রোগী সিধলকুড়া গ্রামের আকলিমা বেগম বলেন, আমি তিন দিন ধরে ভর্তি আছি, কোনো চিকিৎসা সেবা পাইনি। ডাক্তারইতো নেই। কোনো সেবা নেই এ হাসপাতালে। ২/১দিন থেকে চলে যাব।

পূর্ব ডামুড্যা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আজাহারুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করছি। কোনো ডাক্তার নাই। ২ জন মাত্র ডাক্তার। এর মধ্যে পুরুষ ডাক্তার রাউন্ডে গেছে। এ জন্য দাঁড়িয়েছি। এভাবে হাসপাতাল চলতে পারে না। জরুরী এখানে ডাক্তার দেয়া দরকার।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহ মো. বদরুদ্দোজা বলেন, দীর্ঘ ছয় মাস যাবত ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ কোনো ডাক্তার নেই। আমরা ২ জন ডাক্তার। এ দু’জন ডাক্তারই সব বিভাগ দেখাশোনা করতে হচ্ছে। এতে আমাদের পক্ষে খুবই কষ্টকর। রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব নয়। আমি কর্তৃপক্ষকে বার বার জানানোর পরেও কোনো ডাক্তার বা স্টাফ দেয়া হচ্ছে না।

ডামুড্যা উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন মাঝি বলেন, হাসপাতালের নানা সমস্যার কথা বলতে আমি ও শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। এমপি সাহেব ডিও লেটার জমা দিয়েছেন। মন্ত্রী আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন। অতি শীঘ্রই কার্যকরী ব্যবস্থা নিবেন।

শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডাক্তার নির্মল চন্দ্র দাস বলেন, এ সমস্যার কথা প্রতিনিয়ত আমি ঢাকা বিভাগীয় পরিচালককে লিখিত ও টেলিফোনে জানিয়েছি। তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন অতি শীঘ্রই লোকবল নিয়োগ দিবেন।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১০:৫০এএম/১৫/৩/২০১৮ইং)