• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৯:৫৮ অপরাহ্ন

শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ!


প্রকাশের সময় : মার্চ ১৭, ২০১৭, ৪:০৪ PM / ৪১
শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ!

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার পথে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে জাতিসংঘের পর্যালোচনায় যে তালিকা তৈরি করা হবে, তাতে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরোতে জাতিসংঘের দেওয়া তিনটি শর্তের মধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা—দুটি সূচকে বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ দুই সূচক টেকসই হলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সংলাপে এ মতামত উঠে আসে। রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আয়োজিত ‘স্বল্পোন্নত দেশের ধাপ পেরোনোর পরবর্তী চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এ সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০১৮ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। আমরা গবেষণায় দেখেছি, ২০১৮ সালে জাতিসংঘের যে পর্যালোচনাটি করা হবে, বাংলাদেশ বেশ শক্তিশালী এক অবস্থানে থেকে সেখানে যেতে পারবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভঙ্গুরতা, মানবসম্পদের উন্নয়ন ও জাতীয় আয়—এ তিন সূচকের মধ্যে দুটিতে বাংলাদেশ বিবেচনায় আসবে। ২০২১ সালে আবার যখন পর্যালোচনা করা হবে, সেখানে জাতীয় আয় সূচকেও বিবেচনায় যাবে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালে একটা শক্তিশালী অবস্থানে থেকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে বলে বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে। তবে এর মধ্যে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ যে বাজার সুবিধা পায়, সেটা ২০২৭ সালের পর আর থাকবে না। পাশাপাশি বৈদেশিক সাহায্যের শর্ত কঠিন হতে থাকবে। তাই বিশ্ববাণিজ্যে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে হলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ঘটাতে হবে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, গত আট বছরে বাংলাদেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে অনেক উন্নতি করেছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরোতে জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া তিন শর্তের মধ্যে দুটি পূরণ করে ফেলেছে। মাথাপিছু আয় সূচকে নির্ধারিত শর্ত পূরণও এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়ীরা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা বাড়িয়ে পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে শুরু করেছেন। তবে নতুন রপ্তানি বাজার খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের দিক থেকে খুব বেশি উদ্যোগ দেখা যায় না।’ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।

সভাপতির বক্তব্যে রেহমান সোবহান বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতিমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পথে রয়েছে। আগামী ১০ বছর আমরা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ববাণিজ্যে বাজার সুবিধা পাব। তাই এই ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে রপ্তানি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পেয়ে থাকে। রপ্তানি প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন করতে হলে সবার আগে এ ১৫ শতাংশ সুবিধার সমপর্যায়ের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।’

রেহমান সোবহান আরও বলেন, রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে না পারলে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। ভবিষ্যতের সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য গুটিকয়েক পণ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অথচ পণ্যবৈচিত্র্য ও অভ্যন্তরীণ বাজারের প্রসার ঘটিয়ে বাণিজ্য ঝুঁকি কমানো সম্ভব। পণ্যের বহুমুখীকরণ ও রপ্তানি বাজারের প্রসার ঘটাতে হলে সামর্থ্য ও মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।’

মূল প্রবন্ধে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাডের তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার ফলে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে যে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার হারাবে, তাতে সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত রপ্তানি কমে যেতে পারে। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে হলে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। নীতি গ্রহণ ও নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এসব বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে।

জাতিসংঘের শর্ত অনুযায়ী, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে ৬৬ পয়েন্টের বেশি পেতে হয়। সেখানে বাংলাদেশের নম্বর প্রায় ৬৯। আর অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের অবস্থান থাকতে হবে ৩২ পয়েন্টের নিচে। সেখানেও বাংলাদেশ নির্ধারিত সীমার নিচে রয়েছে।

বর্তমানে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় রয়েছে ৪৮টি দেশ। প্রতি তিন বছর পরপর জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসোক) কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) এ তালিকাটি পর্যালোচনা করে। ২০১৮ সালের পর ২০২১ সালে এ তালিকা পর্যালোচনা করা হবে। দুবারই তালিকায় শর্ত অনুযায়ী মান ধরে রাখতে পারলে ২০২৪ সালে গিয়ে জাতিসংঘের উন্নয়নশীল দেশের তালিকাভুক্ত হবে বাংলাদেশ।

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম /০৪:০৬পিএম/১৭//২০১৭ইং)