• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে বিশ্বনেতাদের প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২৮, ২০২২, ২:৩৫ PM / ৫৬
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে বিশ্বনেতাদের প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ

যে কোনো যুদ্ধের পরিণাম তথা ভয়াবহতা ও ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে তিনি বলেছেন, আমরা যুদ্ধ এবং সংঘাতের ক্ষতিটা বুঝি। সেজন্য আমি বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানাই, দয়া করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামান।

শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো যুদ্ধ-সংঘাত রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে। আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না। আমরা চাই না কোনো মানুষ উদ্বাস্তু হোক। কারণ, আমার সব অভিজ্ঞতা আছে।

সোমবার (২৮ নভেম্বর) সকালে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে ইন্টারন্যাশনাল উইমেন পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি (ডব্লিউপিএস) সেমিনার-২০২২ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

যে কোনো সংঘাত ও দুর্যোগকালে নারীদের দুর্দশা বহুগুণ বেড়ে যায় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। নারীদের শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক এ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকারপ্রধান ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেন।

এসময় বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নে সরকারের নানা উদ্যোগের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায়ন না হলে সমাজে নারীর অবস্থান বাড়তো না।

তিনি বলেন, আমার সরকার নারী নীতি ২০১১ প্রণয়ন করেছে। ওই নীতির অধীনে, আমরা মূলধারার আর্থ-সামাজিক কার্যক্রমে নারীদের উন্নয়ন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত এবং তাদের ক্ষমতায়নের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করার ব্যবস্থা নিয়েছি। রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, ব্যবসা, খেলাধুলা, সশস্ত্র বাহিনী ইত্যাদি খাতে তাদের অংশগ্রহণ ও অবদান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক দৃশ্যপটকে বদলে দিয়েছে।

আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশে লিঙ্গ সমতা উন্নত হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে লিঙ্গ সমতায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। শান্তিরক্ষা, শান্তি-নির্মাণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে নারীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল।

সরকারপ্রধান আরও বলেন, আমার সরকারই ১৯৯৬ সালে প্রথম মেয়াদে সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের নিয়োগের দ্বার উন্মুক্ত করেছে। বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নারীরা শীর্ষ স্থানে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মোট ৭০৪ জন নারী শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তমানে ৩৭৩ নারী সদস্য বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত।

বাংলাদেশে নারীরা এখন সচিব, বিচারপতি, ভিসি এবং অনেক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের মোট এক হাজার ৬২৪ জন নারী পুলিশ কর্মকর্তা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন এবং বর্তমানে ১৫০ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে নারীরা সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশ দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা, অপুষ্টি, অশিক্ষার শিকার। যে কোনো সংঘর্ষ ও দুর্যোগের সময় তাদের দুর্দশা বেড়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ জাতীয় জীবনের সবক্ষেত্রে নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের রাষ্ট্র গঠনের শুরুতেই লিঙ্গ সমতার সারমর্মটি সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন যে, সমান সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া জাতীয় উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত স্তর অর্জন করতে পারবো না। তার নির্দেশনায় প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধান নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করেছে।

এসময় রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা তাদের দুর্দশা বুঝতে পেরেছিলাম। কারণ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের একই ধরনের অভিজ্ঞতা এবং ধাক্কা সহ্য করতে হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ, কানাডা এবং ইউনাইটেড কর্তৃক চালু হওয়া প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রধান হিসেবে আমরা ডব্লিউপিএস এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা ডব্লিউপিএস-এ জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৯-২২ প্রণয়ন এবং এটির বাস্তবায়ন করছি। এটি ২০২৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।