• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০১:০৮ অপরাহ্ন

রাজনৈতিক মতবাদ নিয়ে কিছু কথা


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২২, ২০২১, ১২:০১ PM / ৪৩
রাজনৈতিক মতবাদ নিয়ে কিছু কথা

মোঃ আজিজুল হুদা চৌধুরী সুমন : আধুনিক রাষ্ট্রগুলোতে, মানুষ প্রায়ই নিজস্ব মতবাদ তুলে ধরতে রাজনৈতিক দল গঠন করে।আজকে ২৬ রাজনৈতিক মতবাদ নিয়ে আলোচনা শুরুতেই মতবাদ গুলো নিম্নে তুলে ধরছি- (১.) ইসলামবাদ‎ (২.) কর্তৃত্ববাদ‎ (৩.) জাতীয়তাবাদ‎ (৪.) জায়নবাদ‎ (৫.) পুঁজিবাদ‎ (৬.) প্রজাতন্ত্রবাদ‎ (৭.) ফ্যাসিবাদ‎ (৮.) মার্কসবাদ (৯.) রাজাবাদ‎
(১০.)সমানাধিকারবাদ‎ (১১.)সাম্যবাদ‎ (১২.) স্বতন্ত্রতাবাদ‎ (১৩.)অসাম্প্রদায়িকতাবাদ (১৪.)উদারনীতিবাদ (১৫.) ঐতিহাসিক বস্তুবাদ (১৬.) শূন্যবাদ (১৭.) দ্বন্দ্ববাদ (১৮.) নারীবাদ (১৯.) নাসেরবাদ (২০.) নৈরাজ্যবাদ (২১.)মৌলবাদ
(২২.) সমাজতন্ত্রবাদ (২৩.)সম্প্রসারণবাদ (২৪.)সাম্রাজ্যবাদ
(২৫.)লেনিনবাদ (২৬.) বাঙালি জাতীয়তাবাদ

(১.) ইসলামবাদ: ইসলামবাদ কী? ইসলামবাদ মূলত মুসলমানদের মধ্যে জাতিকেন্দ্রিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করার একটি রাজনৈতিক আন্দোলন, যেখানে সাংস্কৃতিক বা ভৌগলিক জাতীয়তাবাদের চেয়ে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।উনিশ শতকের শেষদিকে যখন মুসলমানদের সর্বশেষ ‘খিলাফত’ উসমানী সাম্রাজ্য পতনের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল, তখন মূলত খিলাফত টিকিয়ে রাখতে ও মুসলিম বিশ্বে ঔপনিবেশিক আধিপত্য প্রতিরোধের প্রয়োজনে জামাল উদ্দিন আফগানি ইসলামবাদের ধারণা সামনে নিয়ে আসেন।

ইসলামবাদ বলতে মোটামুটি ধারণা ছিল, একটি একক ইসলামি রাষ্ট্র তথা খিলাফত (সাম্রাজ্য) ইসলামি আদর্শ অনুযায়ী পরিচালিত হবে। তবে এ মতবাদ এখনও কট্টর শরিয়াহপন্থীরা ধারণ করে। এর ধারণা কিছুটা বিবর্তিত হয়েছে, বর্তমানে মনে করা হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের দ্বারা মুসলমানদের জাতিকেন্দ্রিক ঐক্যের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা সম্ভব।

(২.) কর্তৃত্ববাদ‎: কর্তৃত্ববাদ বলতে সেই মতবাদকে বােঝানাে হয় যেখানে জনগণের সম্মতি অপেক্ষা কোনও ব্যক্তি অথবা গােষ্ঠীর কর্তৃত্বে সরকার পরিচালিত হয়।কর্তৃত্ববাদীরা মনে করেন যে তাঁদের মনােমত সুশৃঙ্খল পথে সরকার পরিচালিত হওয়া মঙ্গলজনক অথবা নিদেনপক্ষে প্রয়ােজনীয়। দুটি বিশ্বাস থেকে ধারণাটি গড়ে ওঠে ১. লােকের কর্তৃত্বাধীন থাকাই কল্যাণকর, এবং ২. কর্তৃত্ব জনগণের সম্মতিসাপেক্ষ নয়, বরং বলা ভালাে যে কর্তৃত্ব সম্মতির পূর্বশর্ত।
উগ্র কর্তৃত্ববাদীদের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রিক বাধ্যতার যুক্তিসিদ্ধ কোনও উৎস নেই। সেজন্য অসন্তোষের প্রতিকার তথা রাষ্ট্রের সুস্থিতির জন্য কর্তৃত্ববাদের প্রয়ােজন থাকে,প্রচলিত অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্যের তাগিদেও কর্তৃত্ববাদ অপরিহার্য বলে তাঁদের অভিমত। উল্লিখিত তাত্ত্বিক প্রত্যয় ছাড়াও অনেক সময়ে ক্ষমতাসীন কায়েমি শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি অথবা গােষ্ঠীর আচরণেও কর্তৃত্ববাদ ফুটে ওঠে।

(৩) জাতীয়তাবাদ‎: জাতীয়তাবাদ একটি আদর্শ যেখানে জাতিকে মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয় এবং অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়া হয়। জাতীয়তাবাদ একটি জাতির সংস্কৃতি রক্ষার্থে ভূমিকা পালন করে এবং জাতির অর্জনসমূহকে সামনে তুলে ধরে। এসব বিষয় বিবেচনা করলে জাতীয়তাবাদ ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুইই হতে পারে।

(৪.) জায়নবাদ‎: জায়োনিজম হলো এক ধরণের ভাবাদর্শ এবং জাতীয়দাবাদি আন্দোলন। জায়নবাদ নামের এই ভাবাদর্শ যা ইহুদি শ্রেষ্ঠত্ববাদকে লালন করে সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করে। লেভাণ্টের একটি বিস্তৃত জায়গা নিয়ে ইহুদিদের জন্য একটি নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা জায়োনিজম বা জায়নবাদি জাতীয়তাবাদি আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য। জায়োনিজম (Zionism) শব্দটি এসেছে হিব্রু জায়ন (zion) শব্দ থেকে। হিব্রু ভাষার শব্দ ‘জায়ন’ দিয়ে বোঝানো হয় জেরুসালেম শহরকে। তবে জায়ন হলো মূলত জেরুসালেমের একটি পাহাড়ের নাম। পাহাড়টি মাউন্ট জায়ন (Mount Hill) বা জায়ন’স হিল ((Zion’s Hill) নামে পরিচিত।

সত্যিকার অর্থে জায়োনিজম একক কোনো মতবাদ, ভাবাদর্শ বা জাতীয়তাবাদ নয়। বিভিন্ন রকমের জায়োনিজমের উপস্থিতি চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। সাধারণ জায়নবাদ, রাজনৈতিক জায়নবাদ, ধর্মীয় জায়নবাদ, শ্রমিক বা সমাজতান্ত্রিক জায়নবাদ (বামপন্থী), সংশোধনবাদি জায়নবাদ, সবুজ জায়নবাদ ইত্যাদি। বিশ্বজড়ে যে জায়নবাদ নিয়ে চর্চা হচ্ছে তা হলো রাজনৈতিক জায়নবাদ। সাধারণভাবে চর্চিত এই জায়োনিজম বা জায়নবাদ অর্থ হলো জায়ন পাহাড়কে কেন্দ্র করে বা কেনানের আশেপাশে বিস্তির্ণ এলাকা নিয়ে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও প্রতিরক্ষামূলক প্রত্যয়।

জায়োনিজম বা জায়নবাদ হলো এমন একটি রাজনৈতিক ভাবাদর্শ যা গড়ে উঠেছে ইহুদিবাদ বা জুদাইজম (Judaism) থেকে। জায়নবাদে বিশ্বাসীরা চায় নিজেদের জন্য এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে, যেখানে তারাই হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাঁরা কোথাও সংখ্যলঘু হয়ে থাকতে চায় না।

(৫.) পুঁজিবাদ‎: পুঁজিবাদ তার আধুনিক রূপে দেখা গেছে রেনেসাঁস আমলে কৃষিভিত্তিক পুঁজিবাদ এবং ব্যবসাবাদ আবির্ভূত হওয়ার সময় থেকে।পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্র বলতে এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বোঝানো হয় যেখানে বাজার অর্থনীতিতে মুনাফা তৈরির লক্ষ্যে বাণিজ্য, কারখানা এবং উৎপাদনের উপকরণসমূহের উপর ব্যক্তিগত মালিকানার নিয়ন্ত্রণ থাকে। পুঁজিবাদের কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত করে পুঁজির সঞ্চয়ন, প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার এবং শ্রমিকের মজুরি। এটি হলো সেই সমাজ সংগঠন যাতে পণ্য সম্পর্ক, মানে কেনাবেচার সম্পর্ক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে। এখানে পরিবার ও রাষ্ট্র থাকে। তবে পরিবার ক্রমাগত ক্ষুদ্র নিঃসঙ্গ পর্যায়ে নিছক বাণিজ্যিক বোঝাপড়ার জায়গায় গিয়ে ঠেকে। রাষ্ট্র এখানে জবরদস্তির হাতিয়ারগুলো ধরে রাখে। তবে ক্রমেই সে বাণিজ্যিক স্বার্থের খপ্পরে পড়ে, তার কার্যক্রম সম্প্রদায়ের পক্ষ হতে সেবা কেনাবেচার দালালিতে গিয়ে ঠেকে। এটি সমাজতন্ত্রের বিপরীত একটি অর্থব্যবস্থা।

(৬.) প্রজাতন্ত্রবাদ‎:সাধারণভাবে প্রজাতন্ত্রবাদ বলতে প্রজাতন্ত্রের সদস্যদের দ্বারা গৃহীত মতামতকে বোঝায়, যা প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের একটি রূপ যা নাগরিকদের অগ্রগতির দ্বারা নেতাদের একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য নির্বাচিত করা হয়, এবং এই নেতারা তাদের সুবিধার্থে আইন পাস করেন। কোনও শাসক শ্রেণীর বা অভিজাতদের সদস্যদের চেয়ে গোটা প্রজাতন্ত্র।একটি আদর্শ প্রজাতন্ত্রে, নেতারা শ্রম নাগরিকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হন, একটি নির্ধারিত সময়ের জন্য প্রজাতন্ত্রের সেবা করেন, তারপরে তাদের কাজে ফিরে যান, আর কখনও সেবা দিতে পারেন না।

প্রত্যক্ষ বা “খাঁটি” গণতন্ত্রের বিপরীতে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের বিধি বিধানিত হয়, একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিটি নাগরিকের একটি নির্দিষ্ট বেসিক নাগরিক অধিকারের একটি নির্দিষ্ট গ্যারান্টি দেয়, একটি সনদ বা সংবিধানে অনুমোদিত, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধি দ্বারা বাতিল করা যায় না।

(৭.) ফ্যাসিবাদ‎: দেশের সকল শ্রেণীর মানুষকে একাত্ব করাই অর্থাৎ শ্রেণীবিভাজন দূর করে রাষ্ট্র পরিচালনা করাই ফ্যাসিবাদের লক্ষ্য। অনেক বিশ্লেষকের মতে ফ্যাসিবাদ পুঁজিবাদ ও সাম্যবাদের মাঝখানে অবস্থিত বা তৃতীয় “অবস্থান’’ বলেও উল্লেখ করেছেন। ফ্যাসিবাদী অর্থনীতি স্বনির্ভরতার উপর গুরত্ব দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফ্যাসিবাদী সরকার সামরিকায়নিত হয় বা সামরিক বাহিনীর ওপর অতিনির্ভর ও আস্থাশীল।

( ৮.) মার্কসবাদ:মার্কসবাদ হ’ল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং দার্শনিক মতবাদের নাম, যা মহাবিশ্বের বস্তুবাদী তত্ত্বের ভিত্তিতে তৈরি। এই শিক্ষার নামকরণ করা হয়েছে এর প্রতিষ্ঠাতা জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্ক্সের নামে। তাঁর সমমনা অর্থনীতিবিদ ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের সাথে একত্রে মার্কস ইতিহাস, অর্থনীতি এবং কমিউনিজমের মতবাদ সম্পর্কে বস্তুবাদী বোঝার বিকাশ করেছিলেন। মার্কসবাদই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নে স্বীকৃত দর্শনের একমাত্র শাখা।

(৯.) রাজাবাদ‎:

(১০.) সমানাধিকারবাদ‎:লেভেলারস এর মত ধর্মীয় সমানাধিকারবাদী সংগঠনগুলো লৈঙ্গিক সাম্যের পক্ষে ছিল, এবং তাই তাদের রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল।১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব-এর আবির্ভাবের পরে, ওয়েব সংস্কৃতিটি ডট-কম বুম এবং বুস্ট চক্রের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় সুবিধা হয় বিকেন্দ্রীকরণ যা আরও বেশি ব্যবহারকারী-কেন্দ্রিক সমাজ তৈরি করে, বৈচিত্র্য, বাস্তবতাকে গ্রহণ করে, বিশ্ব জুড়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকদে মাঝে স্বতঃস্ফূর্ততা আনে এবং সমানাধিকারবাদ প্রতিষ্ঠা করে।

(১১).সাম্যবাদ‎:মাম্যবাদী অর্থ হলো সমানাধিকার মতাবলম্বী। রাষ্ট্রের সকল লোকের সমান অধিকার প্রাপ্য।যার অর্থ “সাধারণ, চিরন্তন হল শ্রেণীহীন, শোষণহীন, ব্যক্তি মালিকানাহীন এমন একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবাদর্শ বা ধর্ম[৩] যেখানে ব্যক্তিগত মালিকানার স্থলে উৎপাদনের সকল মাধ্যম এবং প্রাকৃতিক সম্পদ (ভূমি, খনি, কারখানা) রাষ্ট্রের মালিকানাধীন এবং নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে। সাম্যবাদ হল সমাজতন্ত্রের একটি উন্নত এবং অগ্রসর রূপ, তবে এদের মধ্যেকার পার্থক্য নিয়ে বহুকাল ধরে বিতর্ক চলে আসছে।

উভয়েরই মূল লক্ষ্য হল ব্যক্তিমালিকানা এবং শ্রমিক শ্রেণীর উপর শোষণের হাতিয়ার পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার অবসান ঘটানো।[৫]কার্ল মার্কস যে মতাদর্শ উপস্থাপন করেছিলেন সেই মতে সাম্যবাদ হল সমাজের সেই চূড়ান্ত শিখর, যেখানে পৌঁছাতে হলে বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য স্থাপন করতে হবে এবং সেই ক্রান্তিকালে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে, সমাজে সামগ্রী ও সেবার অতিপ্রাচুর্য সৃষ্টি হবে। কোনো দেশে সাম্যবাদ থাকলে সেখানে ধনী গরীবের ব্যবধান থাকবে না। নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করার দ্বায়িত্ব সরকার নেবে।

(১২.)স্বতন্ত্রতাবাদ‎

(১৩.)অসাম্প্রদায়িকতাবাদ: অসাম্প্রদায়িকতাবাদ বা অসাম্প্রদায়িকতা (ইংরেজি: Cosmopolitanism) হল একটি আদর্শিক মতবাদ যেখানে সকল মানুষ পারস্পারিক নৈতিকতা ভাগাভাগির বা বিনিময়ের মাধ্যমে একটি একক সম্প্রদায়ের সদস্য হবে। যে ব্যক্তি অসাম্প্রদায়িকতার ধারণাকে যে কোন আকারে নিজের মাঝে ধারণ করেন তাকে একজন অসাম্প্রদায়িক বা ইংরেজিতে cosmopolitan বা cosmopolite বলা হয়।

একটি অসাম্প্রদায়িক সম্প্রদায় বা সমাজব্যবস্থা সার্বজনীন নৈতিকতা, বিনিময়মূলক অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং বিভিন্ন জাতি দ্বারা পরিবেষ্টিত রাজনৈতিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে। একটি অসাম্প্রদায়িক ব্যবস্থায় বিভিন্ন স্থান বা দেশ থেকে আগত ব্যক্তিগণ পারস্পারিক শ্রদ্ধার মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি করেন। উদাহরণস্বরূপ, কোয়ামি অ্যান্থনি এপিয়াহ এমন একটি অসাম্প্রদায়িক ব্যবস্থার পরামর্শ দেন যেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ব্যক্তিগণ তাদের ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাস বা মূলনীতি থাকা সত্ত্বেও পারস্পারিক শ্রদ্ধার একটি সম্পর্কে প্রবেশ করবে

(১৪.)উদারনীতিবাদ:উদারনীতিবাদ বা উদারপন্থী মতবাদ (ইংরেজি: Liberalism)) সাম্য ও মুক্তির উপর নির্ভর করে সৃষ্ট একধরনের বৈশ্বিক রাজনৈতিক দর্শন।[১][২] এ দুইটি নীতির উপর ভিত্তি করে উদারতাবাদকে অনেক বিস্তৃত আকার দেওয়া হয়েছে। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, জনগণের অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, মুক্তবাণিজ্য, ব্যক্তিগত মালিকানা প্রভৃতি ধারণার উদ্ভব ঘটেছে এ দর্শনের উপর ভিত্তি করে।[৩][৪][৫][৬][৭] উদারতাবাদের ইংরেজি Liberalism উদ্ভব হয়েছে লাতিন শব্দ liberalis থেকে।সাংকেতিক ভাষায় উদারনীতিবাদ
উদারনীতিবাদের সাধারণ অর্থ হলো রাষ্ট্রীয় কতৃত্ববাদ এর বিরুদ্ধে ব্যক্তিস্বাধীনতা নীতি প্রতিষ্ঠা করা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হব হাউসের মতে উদারনীতিবাদ হলো এমন একটি মতবাদ যেখানে প্রতিটি মানুষের স্বাধীনতা জীবনের কণ্ঠস্বর তাদের চিন্তা বিকাশ-এ বিকশিত হয়। উদারনীতিবাদের প্রধান ও প্রতিপাদই হলো স্বাধীনতা। উদারনীতি এমন একটি রাজনৈতিক মতবাদ যেখানে ব্যক্তির স্বাধীনতাকে রক্ষা করা ও এর উন্নতিসাধন করাকে রাজনীতির মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উদারপন্থীরা বিশ্বাস করেন ব্যক্তিবিশেষকে অন্যদের সৃষ্ট ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সরকারের প্রয়োজনীয়তা আছে, কিন্তু তারা এও বিশ্বাস করেন যে সরকার নিজেও ব্যক্তিস্বাধীনতার জন্য হুমকি হতে পারে। মার্কিন বিপ্লবী লেখক টমাস পেইন ১৭৭৬ সালে লিখেছিলেন যে সরকার এক ধরনের “প্রয়োজনীয় মন্দলোক”। ব্যক্তির স্বাধীনতা ও জীবন সুরক্ষার জন্য আইন, বিচারব্যবস্থা ও পুলিশের দরকার আছে, কিন্তু এগুলির দমনমূলক ক্ষমতা ব্যক্তির বিরুদ্ধেই প্রযুক্ত হতে পারে। সুতরাং সমস্যা হচ্ছে এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করা যাতে ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার জন্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা থাকবে কিন্তু একই সাথে সেই ক্ষমতার যাতে অপব্যবহার না হয়, সেটিও প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকবে।

রাজনৈতিক দর্শনের একটি বিশেষ মতবাদ হিসেবে উদারতাবাদের বয়স দেড়শ বছরের কিছু বেশি হলেও এর উৎস মূল ষোড়শ শতাব্দীর রেনেসাঁ ও রিফর্মেশন আন্দোলন পর্যন্ত বিস্তৃত। রেনেসাঁ ও রিফর্মেশন আন্দোলনে ব্যক্তিকে তার স্বকীয় সত্তায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যে প্রয়াস চালানো হয় তার পরোক্ষ ফলশ্রুতি হিসেবে উদারতাবাদের জন্ম হয়। উদারতাবাদ তার বিকাশপথে প্রথমে একটি নেতিবাচক আন্দোলন হিসেবে, এবং পরে একটি ইতিবাচক আদর্শ হিসেবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। নেতিবাচক আন্দোলন হিসেবে এটি যুগ যুগ ধরে মানুষের প্রগতি ও মুক্তির পথে সৃষ্ট বাধাসমূহকে দূর করার কাজে নিয়োজিত হয় এবং ইতিবাচক আদর্শ হিসেবে মানুষের মধ্যে যে বিপুল শক্তি ও সম্ভাবনা প্রোথিত রয়েছে তার সার্থক বিকাশ সাধনের মাধ্যমে মানুষকে তার স্বকীয় সত্তায় প্রতিষ্ঠিত করার কাজে ব্রতী হয়। উদারতাবাদ যদিও মূলত একটি রাজনৈতিক আন্দোলন, তবু তা শুধুমাত্র রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনেও সম্প্রসারিত হয়েছে। জন হলওয়েলের মতে, উদারতাবাদ নিছক একটি চিন্তাধারা নয়, এটি একটি জীবনদর্শনও বটে। জীবনদর্শন হিসেবে তা মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষাসমূহকে প্রতিফলত করে।

ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে উদারতাবাদ রোমান ক্যাথলিকবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় এবং ক্যালভিনপন্থীদের, ফরাসী হুগুয়েনটদের ও অন্যান্য প্রটোস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতার সংগ্রামকে রাজনৈতিক সমর্থন প্রদান করে। সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধকালে উদারতাবাদ ব্রিটিশ নন-কনফর্মিস্ট আন্দলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং রোমান ক্যাথলিক চার্চের বিশেষাধিকারের দাবিকে নস্যাৎ করে দেয়। মোট কথা, সপ্তদশ শতাব্দী থেকে উদারতাবাদ শুধু যে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ থেকে স্বাধীন ধর্মাচরণের অধিকারকে রক্ষা করার চেষ্টা করে তাই নয়, চার্চের প্রভাব থেকে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে মুক্ত করার প্রয়াসেও লিপ্ত হয়

(১৫.)ঐতিহাসিক বস্তুবাদ :ঐতিহাসিক বস্তুবাদ (ইংরেজি: Historical materialism)হচ্ছে সমাজজীবনের অনুশীলনে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের মূলনীতিগুলোর প্রয়োগ। সামাজিক জীবনধারা এবং সমাজ ও সমাজের ইতিবৃত্তের বিচারে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের মূলনীতিগুলোর প্রয়োগ ও ব্যবহারকে বলে ঐতিহাসিক বস্তুবাদ।

কার্ল মার্কস “ঐতিহাসিক বস্তুবাদ” অভিধাটি নিজে প্রয়োগ করেননি। তিনি যে শব্দগুচ্ছ প্রয়োগ করেছেন তা হচ্ছে ইতিহাসের বস্তুবাদী ধারণা।ইতিহাসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদী তত্ত্ব,হচ্ছে সমাজব্যাখ্যার পদ্ধতি। মার্কসের কাছে সমাজের বৈপ্লবিক রূপান্তরণের জন্যই সমাজের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার প্রয়োজন অনুভূত হয়।মার্কস ও এঙ্গেলস ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যার প্রথম প্রবক্তা। সমাজের দার্শনিক ব্যাখ্যায় মার্কসবাদ যে মৌলিক বিপ্লব ঘটিয়েছিলো এটা ছিলো তার ভিত্তি

(১৬.)শূন্যবাদ:শূন্যবাদ (/ˈnaɪ(h)ɪlɪzəm, ˈniː-/; টেমপ্লেট:Etymology) মূলত একটি সংশয়বাদী দার্শনিক মতবাদ যেখানে সবকিছুই শূন্য এবং শূন্য থেকেই সবকিছুর সৃষ্টি বলে মনে করা হয়। পাশ্চাত্য দর্শনের অন্যতম প্রধান শূন্যবাদী দার্শনিক ফেডারিক নীটশে তাঁর দর্শনে ঈশ্বরকে মৃত বলে ঘােষণা করেন। আর ভারতীয় দর্শনে শূন্যবাদ অনুযায়ী সবকিছুই শূন্য, মিথ্যা বা মায়া।

(১৭.)দ্বন্দ্ববাদ:দ্বন্দ্ববাদ বা দ্বন্দ্ব (গ্রিক: διαλεκτική, dialektikḗ; সংলাপ সম্পর্কিত), দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি হিসাবেও পরিচিত, হচ্ছে আলোচনার ভিত্তি যাতে দুজন বা আরও বেশি লোকের মধ্যে একটি বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে প্রজ্ঞাসম্পন্ন যুক্তির মাধ্যমে সত্য প্রতিষ্ঠিত করতে ইচ্ছুক। দ্বন্দ্ববাদ বিতর্ককে সাদৃশ্যযুক্ত করে, তবে এই ধারণাটি আত্মগত উপাদান যেমন আবেগগত কামনা এবং অলঙ্কারশাস্ত্রের আধুনিক নিন্দাসূচক চেতনাকে বাদ দেয়।দ্বন্দ্ববাদ অবরোহ পদ্ধতির সাথে বিপরীত হতে পারে, যেখানে কথোপকথনের একপাশ অন্যদিকটিকে শেখায়। দ্বন্দ্ববাদ বিকল্প হিসেবে গৌণ যুক্তি হিসাবে পরিচিত যা প্রধান যুক্তি বা সমালোচনার বিরোধিতা অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে দ্বান্দ্বিকতার আসল অর্থ হল দুটি পরস্পর বিরোধী সংঘাতজনিত প্রক্রিয়া। হেগেল এই প্রক্রিয়ার কথা প্রথম বলেন।

হেগেলিয়ানবাদের মধ্যে, দ্বান্দ্বিক শব্দটির বিশেষ অর্থ রয়েছে যার দ্বারা ধারণাগুলির মধ্যে দ্বন্দ্বের অবস্থা বিরাজ করে এবং এই দ্বান্দ্বিকতা ধারণাগুলোর সম্পর্কের ক্ষেত্রে নির্ধারক কারণ হিসাবে কাজ করে। হেগেলের মতে সৃষ্টির সবকিছুর পেছনেই রয়েছে দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্ববাদ বিকাশের তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত: প্রথমত, একটি ধারণার বিশ্লেষণ বা একটি বিবৃতি, যা একটি দ্বিতীয় পদক্ষেপের জন্ম দেয়, দ্বিতীয়ত একটি প্রতিক্রিয়া বা প্রতিবিশ্লেষণ যা বিশ্লেষণটির বিরোধিতা বা নেতিকরণ করে এবং তৃতীয়ত, সংশ্লেষণ, একটি বিবৃতি যার মাধ্যমে দুটি পয়েন্ট বা দফার মধ্যে পার্থক্যগুলি সমাধান করা হয়। মূলত কার্ল মার্কস এবং ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস দ্বারা সৃষ্ট তত্ত্বের একটি সংকলন হচ্ছে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ যা ঐতিহ্যগত বস্তুবাদ সম্পর্কিত যুক্তি থেকে হেগেলীয় দ্বান্দ্বিকতাকে মানিয়ে নিয়েছে।

দ্বন্দ্ববাদ বিবর্তন প্রক্রিয়া বোঝায় এবং তাই স্বাভাবিকভাবেই আনুষ্ঠানিক যুক্তির সাথে মানানসই নয়। এই প্রক্রিয়াটি বিশেষত হেগেলীয় দ্বান্দ্বিকতা এবং তার চেয়েও বেশি চিহ্নিত করা হয়েছে মার্কসবাদী দ্বান্দ্বিকতার ক্ষেত্রে যা বাস্তব জগতের দীর্ঘ সময়ের জন্য ধারণাগুলির বিবর্তনের উপর নির্ভর করে; দ্বান্দ্বিক যুক্তি এটিকে ধারণ করার চেষ্টা করে

(১৮.)নারীবাদ:নারীবাদ বিংশ শতাব্দীতে উদ্ভূত একটি আন্দোলন যা নারীর ক্ষমতায়ন, ভোটদানের অধিকার এবং নারী পুরুষ সমান এই দাবী থেকে শুরু হয়।

জাতীয় মহিলা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র আয়োজিত ঢাকায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস সমাবেশ, ৮ মার্চ ২০০৫ বাংলাদেশ।কালের পরিক্রমায় অনেক নারীবাদী আন্দোলন এবং আদর্শ তৈরী হয়েছে যেগুলোর প্রত্যেকটি ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী এবং লক্ষ্য উপস্থাপন করে। এর মাঝে কতগুলো ধারা সমালোচিত হয়েছে যেমন, নাগরিক অধিকার আন্দোলন বা বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন যেগুলোকে বলা হয় যে, এগুলো শুধুমাত্র সাদাদের, মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কথা তুলে ধরে। এই সমালোচনা থেকে পরবর্তীতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কেন্দ্রীক নারীবাদের সূচনা হয় যার মাঝে কালো নারীবাদ এবং ইন্টারসেকশনাল নারীবাদ অন্তর্ভুক্ত

( ১৯.)নাসেরবাদ:নাসেরবাদ (আরবি: التيار الناصري‎‎ at-Tayyār an-Nāṣṣarī) হল জামাল আবদেল নাসেরের চিন্তাধারার উপর প্রতিষ্ঠিত সমাজতান্ত্রিক আরব জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আদর্শ। নাসের ছিলেন মিশরীয় বিপ্লব ১৯৫২ এর দুই প্রধান নেতার অন্যতম এবং মিশরের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি। নাসেরবাদে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত এবং এর উপাদানে আরব সমাজবাদ, প্রজাতান্ত্রিকতা, জাতীয়তাবাদ, সাম্রাজ্যবাদবিরোধীতা, বৈশ্বিক সৌহার্দ উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক জোটনিরপেক্ষতা রয়েছে। ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে নাসেরবাদ ছিল আরব বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আদর্শগুলোর অন্যতম। বিশেষত ১৯৫৬ সালে সুয়েজ সংকটের পর এর প্রভাব দেখা দেয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময় আফ্রিকার অন্যান্য অংশ ও উন্নয়নশীল বিশ্বে এর প্রভাব দেখা যায়

(২০.)নৈরাজ্যবাদ:নৈরাজ্যবাদ বা অরাজবাদ (ইংরেজি: Anarchism) এক ধরনের রাজনৈতিক দর্শন যা মনে করে রাষ্ট্র অপ্রয়োজনীয়, অনাকাঙ্খিত ও ক্ষতিকর এবং তার পরিবর্তে দরকার রাষ্ট্রবিহীন সমাজ। মানুষের সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে এটি চায় কর্তৃপক্ষের বিলোপ বা ধ্বংস। নৈরাজ্যবাদীরা অবশ্য একমত না যে কি উপায়ে এটা করা যাবে।দ্যা অক্সফোর্ড কম্পানিওন টু ফিলোসফি অবশ্য বলেছেঃ একটা নির্দিষ্ট সংজ্ঞায়িত অবস্থান নেই যাকে নৈরাজ্যবাদীরা আকড়ে ধরতে পারে এবং তারা বড় জোড় একটা পরিবারের তুল্য। নৈরাজ্যবাদের অনেক রকম প্রকারভেদ ও ধরন আছে সেগুলো সব পারস্পরিকভাবে স্বতন্ত্র নয়। সামাজিক ও ব্যক্তিগত নৈরাজ্যবাদ এই ২ ভাগে ভাগ করা যায়। নৈরাজ্যবাদককে সংস্কারপন্থী বাম ধারার আদর্শবাদ হিসেবে ধরা যায়।বেশির ভাগ নৈরাজ্যবাদী অর্থনীতি ও নৈরাজ্যবাদী আইনি দর্শন প্রতিফলন করে কমিউনিজম , সমবায়, সিন্ডিকেলিজম ও অংশীদারত্বের অর্থনীতির রাষ্ট্রবিহীন ব্যাখা।যাইহোক নৈরাজ্যবাদ ব্যক্তিগত চেষ্টাকে অন্তঃর্ভূক্ত করে যা বাজার অর্থনীতি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদকে সমর্থন করে বা নৈতিকভাবে অপ্রতিরোধ্য অহমবোধকে ।কিছু নৈরাজ্যবাদীরা আবার সমাজতন্ত্রী

(২১.)মৌলবাদ:মৌলবাদ (ইংরেজি: Fundamentalism) হচ্ছে গোঁড়া ধর্মীয় মতবাদসমূহের কঠোর অনুগমনের চাহিদা যা সাধারণত বোঝায় উদার ধর্মতত্ত্বের বিরুদ্ধে একটি প্রতিক্রিয়া।এই শব্দটি ইংরেজি ফান্ডামেন্টালিজম শব্দের অনুবাদ। মৌলবাদ শব্দটির সাধারণ অন্য অর্থ হল মূলজাত। এখানে মূল শব্দটি দ্বারা ধর্ম বোঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ আদি কাল থেকেই ধারনাটি ধর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে। মৌলবাদীরা আক্ষরিক অর্থের সব কিছু গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মৌলবাদ নতুনভাবে তৈরি হয়েছে। সেসব দেশে মৌলবাদের রাজনৈতিক রূপের উদ্দেশ্য রাষ্ট্রনৈতিক ক্ষমতা দখল।

মৌলবাদ বা Fundamentalizm শব্দটি সর্বপ্রথম ১৯২২ সালে ব্যবহৃত হয় আমেরিকায়।

(২২.)সমাজতন্ত্রবাদ:সমাজতন্ত্র বা সমাজবাদ (ইংরেজি: Socialism) হচ্ছে এমন একটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উৎপাদনের উপকরণের সামাজিক মালিকানা এবং অর্থনীতির একটি সমবায়ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা,এছাড়াও একই সাথে এটি একটি রাজনৈতিক মতবাদ ও আন্দোলন যার লক্ষ্য হচ্ছে এই ধরনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।অর্থাৎ এটি এমন একটি সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সম্পদ ও অর্থের মালিকানা সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিমালিকানা থাকে না। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনসাধারণের প্রয়োজন অনুসারে পণ্য উৎপাদন হয়। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে একটি দেশের কলকারখানা, খনি, জমি ইত্যাদি সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

এটি সমাজতন্ত্রের গ্রাফিকাল চিত্রণ সমাজতন্ত্র হল সাম্যবাদী সমাজের প্রথম পর্যায়। উৎপাদনের উপায়ে সমাজতান্ত্রিক মালিকানা হলো এর অর্থনৈতিক ভিত্তি। সমাজতন্ত্র ব্যক্তিগত মালিকানার উৎখাত ঘটায় এবং মানুষে মানুষে শোষণ, অর্থনৈতিক সঙ্কট ও বেকারত্বের বিলোপ ঘটায়, উন্মুক্ত করে উৎপাদনী শক্তির পরিকল্পিত বিকাশ ও উৎপাদন সম্পর্কের পূর্ণতর রূপদানের প্রান্তর। সমাজতন্ত্রের আমলে সামাজিক উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল জনগণের স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি ও সমাজের প্রতিটি লোকের সার্বিক বিকাশ সাধন। সমাজতন্ত্রের মুলনীতি হলো ‘প্রত্যেকে কাজ করবে তার সামর্থ্য অনুযায়ী এবং প্রত্যেকে গ্রহণ করবে তার প্রয়োজন অনু্যায়ী। সমাজতন্ত্র দুই ধরনেরঃ কল্পলৌকিক সমাজতন্ত্র ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র। সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করা হয়েছিলো ১৯১৭ সালে। সমাজতন্ত্রে বৈরি শ্রেণি নাই, কেননা কলকারখানা, ভূমি, সবই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সম্পত্তি। সমাজতন্ত্রে শ্রেণি শোষণ বিলুপ্ত হয়।শুরু হয় সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি।

(২৩.)সম্প্রসারণবাদ:সম্প্রসারণবাদ (ইংরেজি: Expansionism) সাধারণভাবে গঠিত হয় রাষ্ট্রের ও সরকারের সম্প্রসারণবাদী নীতিগুলোর বাস্তবায়নের মাধ্যমে। কেউ কেউ এটিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর সাথে যুক্ত শব্দ হিসেবেও ব্যবহার করেন। আরো সচরাচরভাবে সাধারণত সম্প্রসারণবাদ নির্দেশ করে রাষ্ট্রের ভূখণ্ডগত ভিত্তি বা অর্থনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির মতবাদ, যদিও সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে এটি করা প্রয়োজনীয় নয়। এটি সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও আবাসভূমিবৃদ্ধিবাদের (Lebensraum) সাথে তুলনীয়।

কিন্তু যখন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে আগের ভূমি দখল বা হারানো ভূমি পুনর্দখল করা তখন শাসনবাদ (Irredentism), প্রতিশোধবাদ (Revanchism), অথবা প্যান-জাতীয়তাবাদ মাঝে মাঝে সম্প্রসারণবাদকে ন্যায্য এবং বৈধ করতে ব্যবহৃত হয়। একটি সরল ভূখণ্ডগত বিরোধ, যেমন সীমান্ত বিরোধ সচরাচর সম্প্রসারণবাদকে নির্দেশ করে না

(২৪.)সাম্রাজ্যবাদ:সাম্রাজ্যবাদ হলো পররাজ্যের উপর অধিকার বিস্তারের নীতি।এটিকে প্রায় নঞর্থকভাবে বিবেচনা করা হয়, যেহেতু এতে স্থানীয় জনগণকে শোষণের মাধ্যমে অল্প আয়াসে ধনী হবার উদ্দেশ্য থাকে।

সেসিল রোডেস এবং কেপ-কায়রো রেলপথ প্রকল্প। রোডেস গঠন করেছিলেন দ্য বিয়ারস খনি কোম্পানী, মালিক হয়েছিলেন ব্রিটিশ দক্ষিণ আফ্রিকা কোম্পানী এবং তার নামানুসারেই রোডেশিয়া রাষ্ট্রের নাম দেয়া হয়। তিনি পছন্দ করতেন “ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মানচিত্রকে লাল রঙে আঁকতে” এবং তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “all of these stars … these vast worlds that remain out of reach. If I could, I would annex other planets.
আধুনিককালে এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রহণ করা হয় যে উপনিবেশবাদ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের বহিঃপ্রকাশ এবং পরেরটি ছাড়া তার অস্তিত্ব থাকতে পারে না। বিদ্যমান বৈধ উপনিবেশ ছাড়া “অনানুষ্ঠানিক” সাম্রাজ্যবাদ হচ্ছে ঐতিহাসিকদের মধ্যে একটি বিতর্কিত বিষয়

(২৫.)লেনিনবাদ:মার্কসবাদী দর্শনে, লেনিনবাদ হচ্ছে একটি বিপ্লবী অগ্রবর্তী দলের গণতান্ত্রিক সংগঠনের জন্য রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রধান অংশ। এটি সমাজতন্ত্র এবং প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক পূর্বসূচক।

লেনিনবাদ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ এবং শ্রমিক-বিপ্লবের যুগের মার্কসবাদ। আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, লেনিনবাদ হচ্ছে সাধারণভাবে শ্রমিক-বিপ্লবের মতবাদ ও রণকৌশল এবং বিশেষভাবে এটি হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণির একনায়কত্বের মতবাদ ও রণকৌশল।[১] অন্যভাবে বলতে গেলে লেনিনবাদ হলও সাম্রাজ্যবাদ ও শ্রমিক বিপ্লবের যুগ, উপনিবেশিক ব্যবস্থা ধ্বসে পড়ার যুগ, পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে মানবজাতির উত্তরণ, বিশ্বায়তনে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদে জয়যাত্রার যে যুগ, সেই যুগের মার্কসবাদ। বৈপ্লবিক তত্ত্বে লেনিনের অবদান এতোই বিপুল যে উত্তরকালে তার নাম হয়েছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ হলও সারা বিশ্বের প্রলেতারিয়েতের আন্তর্জাতিক মতবাদ। স্তালিনের মতে, ‘সাম্রাজ্যবাদ ও সর্বহারা বিপ্লবের যুগে লেনিনবাদই হল মার্কসবাদ

(২৬.) বাঙালি জাতীয়তাবাদ: একটি রাজনৈতিক অভিব্যক্তি যার মাধ্যমে প্রাচীন কাল থেকে দক্ষিণ এশিয়াতে বসবাসরত বাঙালি জাতি, তথা বাংলা ভাষাগত অঞ্চলের অধিবাসীদের বুঝানো হয়ে থাকে। বাঙালি জাতি উপমহাদেশের একটি অন্যতম জাতীয়তাবাদী চেতনায় প্রভাবিত এক প্রভাবশালী জাতি। বাঙালি জাতিকে উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের রূপকার বলা হয়ে থাকে। অবিভক্ত বাংলা পরবর্তীতে ব্রিটিশ চক্রান্তে বিভক্ত করা হয়। প্রাচীন বঙ্গদেশ অর্থাৎ বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম ও আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বসবাসকারী মানব সম্প্রদায়ের একতাবদ্ধ পরিচয়কে বাঙালি জাতীয়তাবাদ বলা হয় যাদের ইতিহাস অন্তত চার হাজার বছর পুরোনো।

লেখক ও রাজনীতিবিদ
মোঃআজিজুল হুদা চৌধুরী সুমন
সদস্য,কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি জাতীয় পার্টি
কেন্দ্রীয় সহসভাপতি,জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি
সভাপতি,জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ

 

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/কেএস/১২:০০পিএম/২২.১১.২০২১ইং)