• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন

রাউধার দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন মা!


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২২, ২০১৭, ৩:১৯ PM / ৮৮
রাউধার দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন মা!

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী মালদ্বীপের মডেল রাউধা আতিফের মৃত্যুর কারণ উৎঘাটনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগও (সিআইডি) হিমশিম খাচ্ছে। প্রথম ময়নাতদন্ত ও কলেজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু এমন প্রতিবেদন উড়িয়ে দিয়ে হত্যা মামলা করেছেন রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ।

এজন্য রাউধার লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে সিআইডি। কিন্তু এতে আপত্তি জানিয়েছেন রাউধার মা আমিনাথ মুহাররিমা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আসমাউল হককে মালদ্বীপ থেকে ফোন করে তিনি এই আপত্তি জানিয়েছেন। তবে তার এই আপত্তি আমলে নেয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সিআইডির এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে রাউধার মা তাকে ফোন করেন। এ সময় তিনি বলেন, তার মেয়ে আল্লাহর কাছে শান্তিতে আছে। তার লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করা হোক, এমনটি তিনি চান না। তবে তার এই কথা আমলে নেয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

আসমাউল হক বলেন, ‘রাউধার মায়ের যুক্তি আমরা কোনোভাবে মানতে পারি না। মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিতর্ক এড়াতে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করতে হবে। ময়নাতদন্ত করতে সিআইডির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞ তিন চিকিৎসককে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। আগামি সোমবার নাগাদ লাশ কবর থেকে তোলা হতে পারে।’

তিনি জানান, সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আমিরুল চৌধুরী ও নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ডা. মাহবুব হাফিজ এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাফিজুর রহমানকে এই চিঠি দেয়া হয়েছে। এই তিন চিকিৎসক রাজি হলে তাদেরকে দিয়ে রামেকের মর্গে রাউধার লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করা হবে।

এর আগে গত ৩১ মার্চ রামেকের মর্গে রাউধার লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল। ময়নাতদন্তকারী মেডিকেল বোর্ডের তিন সদস্যর দু’জন ছিলেন ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের শিক্ষক। ময়নাতদন্তের পরদিন তারা পুলিশের কাছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে বলা হয়, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। তবে এই প্রতিবেদন মানতে নারাজ রাউধার বাবা।

গত ২৯ মার্চ ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেল থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রাউধা এ কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। নীলনয়না রাউধা ছিলেন মালদ্বীপের একজন উঠতি মডেল। মাত্র একুশ বছরের রাউধার ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি।

রাউধার লাশ উদ্ধারের দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানায়, রাউধা ভেতর থেকে দরজা আটকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। শিক্ষার্থীরা দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত লাশ নামান। এ ঘটনায় ওই দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে শাহমখদুম থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে।

পরে ময়নাতদন্ত শেষে ১ এপ্রিল মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাজশাহী নগরীর হেতেমখাঁ কবরস্থানে রাউধাকে দাফন করা হয়। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, রাউধাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এরপর মালদ্বীপের দুই পুলিশ কর্মকর্তা রাজশাহীতে এসে ঘটনা তদন্ত করেন। দেশে ফিরে গিয়ে তারা জানান, রাউধাকে হত্যার কোনো প্রমাণ তারা পাননি।

রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় কলেজের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে কমিটিও তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। তবে গত ১০ এপ্রিল রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ রাজশাহীর আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে তিনি রাজশাহীতে অবস্থান করছেন।

রাউধা হত্যা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রাউধাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ মামলায় রাউধার সহপাঠি সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২১) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। সিরাতের বাড়ি ভারতের কাশ্মিরে। সিরাতের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

সিআইডি বলছে, হত্যার প্রমাণ না মিললে গ্রেপ্তার করা হবে না সিরাতকে। তবে এরই মধ্যে তার পাসপোর্ট অকার্যকর করে দেয়া হয়েছে। সিরাত দেশত্যাগ করতে পারবেন না। পাশাপাশি তাকে নজরদারির ভেতরেও রাখা হয়েছে।

রাউধার মৃত্যুর কারণ উৎঘাটনে তার কক্ষ থেকে জব্দ করা ল্যাপটপ ও মোবাইলের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সেগুলো সিআইডির পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। সে প্রতিবেদন এখনও ঢাকা থেকে আসেনি। পরে রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলা দুটি তদন্তের জন্য গত ১৩ এপ্রিল সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।

তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে সিআইডির পরিদর্শক আসমাউল হক রাউধার লাশের পুনরায় ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেন। এ জন্য তিনি আদালতে আবেদন করেন। আদালত তার আবেদন মঞ্জুরও করেন। কিন্তু চিকিৎসক সংকটে এখনও পর্যন্ত লাশ কবর থেকে তোলা যায়নি। এরই মধ্যে লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে আপত্তি জানালেন রাউধার মা। স্বামীর কাছ থেকে আলাদা থাকেন রাউধার মা। তার সঙ্গে বিরোধের কারণে তিনি এই আপত্তি জানাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সিআইডির উচ্চ পর্যায়ের একটি দল রাউধার হোস্টেল কক্ষ থেকে পরীক্ষার জন্য ওই ফ্যানটি জব্দ করে, যে ফ্যানে ঝুলে রাউধা আত্মহত্যা করেন বলে বলা হচ্ছে। পাশাপাশি ওই দিন পুরো হোস্টেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও জব্দ করা হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে, ৫০-৫৫ কেজির রাউধা আদৌ ফ্যানে ঝুলেছিল কী না এবং সিসি ক্যামেরায় কেন ঘটনার দিনের কোনো ফুটেজ নেই।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম ০৩.১৮পিএম/২২//২০১৭ইং)