• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৫:০৩ অপরাহ্ন

বিলিনের পথে দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজ


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ৬, ২০২২, ৭:০৭ PM / ৫৮
বিলিনের পথে দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজ

এস এম রাফি, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নদী বেষ্টিত নয়ারহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজটি ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে বিলিনের পথে। ইতিমধ্যে মুল ভবনটি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলানো হলেও থামানো যাচ্ছে না ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করা না গেলে ওই ইউনিয়নের প্রায় ৭ শতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। যেকোনো মূল্যে ভাঙন ঠেকানো জরুরী দরকার। তা না হলে প্রতিষ্ঠানসহ ওই এলাকার কয়েক’শ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়বেন বলেও জানিয়েছেন তারা। এদিকে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদ্যালয়টির জন্য ওই এলাকায় জায়গা কিনে একটি টিনসেট ঘর করা হয়েছিলো কিন্তু আকস্মিক ঝড়ে সেটিও দুমড়ে মুচরে যায়। তবে নদী ভাঙনরোধে নানা মুখী পদক্ষেপ নিলেও ভাঙনের ঠিক সামনেই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলোন করছেন বালু দস্যুরা। যার ফলে তিব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছেন ওই এলাকার প্রতিষ্ঠান সহ কয়েক’শ বসতবাড়ি।
গত বন্যায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজটির মুল ভবন নদী গর্ভে চলে গেছে। সম্প্রতি এবারও পানি বৃদ্ধির ফলে টিনসেটের অন্য আরেকটি ভবনও নদীতে ভেঙে যায়। এখন ভাঙনের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটির অপর আরেকটি ভবন। ভাঙন ঠেকানো না গেলে যেকোনো সময় অবশিষ্ট সেই ভবনটিও নদীতে বিলিন হবে। দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজটিতে বর্তমানে ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। শ্রেনী কক্ষের অভাবে ঠিক মতো হচ্ছে না পাঠদান কার্যক্রম। এতে ব্যহত হচ্ছে ওই এলাকার লেখাপড়ার মান। দেখা দিয়েছে বাল্যবিয়ের প্রবনতা।

শিক্ষার্থী আকিবুল, রাসেল জানায়, গতবছর থেকে ভাঙছে আমাদের স্কুল এন্ড কলেজটি। প্রতিবার বন্যার আগে এবং পরে ভাঙন দেখা দেয়। যার ফলে দুইটি ভবন নদীতে গেছে। এই জন্যে আমাদের ক্লাস করতে সমস্যা হয়। স্কুল সহ আশেপাশের বাড়িগুলোকে রক্ষা করা দরকার।

শাহ্আলম নামে এক অভিভাবক বলেন, নদীতে ভবন ভেঙে যাওয়ার ফলে আপাতত এখানে ক্লাস ঠিকভাবে হচ্ছেনা। যার ফলে দেখা যায় ছেলে মেয়েরা স্কুল যেতে চায় না। এখন ভাঙন একটু কমেছে। তবে হয়তো সামনের বন্যায় এই ভবনটি রক্ষা করা যাবে না।

ওই এলাকার আলমগীর বলেন, একদিকে নদী ভাঙছে আর এর সামনেই ড্রেজার বসিয়ে বালু বিক্রি চলছে । তাহলে ভাঙন রোধ হবে কিভাবে? কখন জানি স্কুলের শেষ ভবনটাও এই ভাঙনের কবলে পড়ে।

দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম বলেন, এখানে ক্লাস নেয়া সমস্যা হচ্ছে। আর যেকোনো সময় এই ভবনটিও নদীতে চলে যাবে। আমরা প্রতিষ্ঠানটির জন্য জায়গা কিনে ঘর বানাচ্ছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে হয়তো সেখানে ক্লাস নেয়া যাবে।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমান যে ভবনটি আছে সেটি নদীর উপরে আছে। তবে জিও ব্যাগ ফেলানোয় কিছুটা কমেছে ভাঙন। প্রতিষ্ঠানটি স্থানন্তর করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এর আগে ওই ইউনিয়নেই জায়গা কিনে ক্লাসরুম করা হয়েছিলো কিন্তু ঝড়ের কারণে সবকিছু ভেঙে যায়। এরপর আবারো সেখানে পাঠদানের জন্য ক্লাস রুম করা হচ্ছে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে নতুন সেই টিনসেটে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবো। এখানে যদি আরো কিছু জিও ব্যাগ ফেলানো হতো তাহলে ভাঙন থাকতো না। তবে ভাঙন হুমকিতে থাকা সেই ভবনটি নিলামের বিষয়ে এখনো কথা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, বর্তমানে ভাঙন কমেছে। তবে এরপর ভাঙন শুরু হলে ভবনটি রক্ষা করা যাবেনা । সাথে ওই এলাকার বাড়িঘরও রক্ষা হবে না। তবে বিদ্যালয়ের ভবনটি যদি নিলামে না দেয়া হয় তাহলে প্রতিষ্ঠানে ভালো কমিটি করে দিতে হবে যাতে মালামাল নয়ছয় না করতে পারে। শক্তিশালী কমিটি টির মাধমে বিদ্যালয় টি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু তাহের বলেন, আপাদত অবশিষ্ট ভবনটির জানালা খুলে নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। নিলামের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠান রক্ষা করার চেষ্টা চলছে। ভাঙন ঠেকাতে ইতিমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরেও যদি নির্দেশ না মেনে বালু উত্তোলন করে তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু’একদিনের মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।