• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন

বাড়ছে জনসংখ্যা, কমছে মানুষ!


প্রকাশের সময় : মে ১১, ২০১৯, ৯:৩৮ PM / ৪০
বাড়ছে জনসংখ্যা, কমছে মানুষ!

সাব্বির আহমেদ : বর্তমান আধুনিক বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার অনুপাতে কমছে মানুষের সংখ্যা। বর্তমান পৃথিবীতে ৭০০ কোটির উপরে জনসংখ্যা হলেও মানুষের সংখ্যা কিন্তু এতো বেশি নয়। কথায় আছে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু পৃথিবীতে এখন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির হার নিম্নগামী। মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির হারের থেকে অনেকগুণ বেশি গতিতে বেড়ে চলেছে জনসংখ্যা। একসময় শোনা যেত দক্ষ জনসংখ্যা একটি দেশের সম্পদ। কিন্তু বর্তমানে অদক্ষ জনসংখ্যা একটি দেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় কথাটির প্রচলন বেশি শোনা যাচ্ছে। আর আধুনিক মানুষের সংস্কৃতির ক্রমাগত পরিবর্তনের গল্পগুলো লেখা হচ্ছে ইতিহাসে।

পৃথিবীতে যে গতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তার ব্যাস্তানুপাতিক হারে মানবতা লোপ পাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হতে পারে তারমানে কি মানুষ আর জনসংখ্যা আলাদা। প্রশ্নটি যেন সকলের গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। প্রশ্নের উত্তরটিও একরকম জটিল। কারণ পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা অনেক কম,তবে জনসংখ্যা ঢের বেশি। আধুনিক মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীর প্রথম আবির্ভাব ঘটে প্রায় ২৫ লক্ষ বছর আগে। এর আগে মানুষ সাধারণ প্রাণীর মতোই জীবন যাপন করে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে বুদ্ধিদীপ্ত আধুনিক মানুষই সমাজের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। কারণ মানুষের জ্ঞানের ভান্ডার পূর্ণ হলেও বিবেক শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। কেউ জানে না মানবজাতির গন্তব্য কী। অন্য যে কোন সময়ের থেকে মানুষ আজ অনেক বেশি ক্ষমতাধর, কিন্তু এতসব ক্ষমতা দিয়ে তাদের কী করা উচিত সে সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই বললেই চলে।
আর একটু বেশি সুখ, আর একটু বেশি আমোদের জন্য মানবজাতি আশেপাশের প্রাণীকুলের জীবন ও পরিবেশের প্রতি ক্রমাগত হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এতকিছুর পরেও কিন্তু আমরা তৃপ্ত নই, সন্তুষ্ট নই। আমরা অশান্ত,অতৃপ্ত। একধরনের না পাওয়ার নেশায় মত্ত সকলে। এ যেন এক অঘোষিত যুদ্ধের ময়দান। যেখানে মানবতার দর্শন পাওয়া একরকম আমাবস্যার চাঁদ দেখার মতো। জনসংখ্যার অনুপাতে মানুষের সংখ্যা যে হ্রাস পাচ্ছে তার প্রমাণ হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া কিছু বর্বর ঘটনা। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড এবং শ্রীলংকায় ঘটে যাওয়া হামলা যেন তারই উদাহরণ।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে ব্রেনটন ট্যারান্ট ভয়াবহ এক হামলা চালায়। এসময় সাউথ আইল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৪৯ জন নিহত এবং ৪৮ জন আহত হয়েছিলেন। টানা ১৫-২০ মিনিট গুলি চালায় বন্দুকধারী। গুলি চালানোর ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করে হামলাকারী। গুলি চালানোর সময় তার মাথায় লাগানো ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করা হয়। কতটা বর্বর হইলে মানুষের উপর গুলিবর্ষণের ভিডিও লাইভ সম্প্রচার করা সম্ভব?

সম্প্রতি শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোসহ অন্যান্য এলাকার তিনটি গির্জা ও চারটি বিলাসবহুল হোটেলে কয়েক দফা বিস্ফোরণে ৩০০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। বিশ্বব্যাপী ‘ইস্টার সানডে’ পালনের দিনে (২১ এপ্রিল) শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো এবং শহরতলির তিনটি গির্জা ও দেশের বড় চার হোটেলে ভয়াবহ বোমা হামলার চালানো হয়। হামলায় ৩০০ জন নিহত এবং ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরে বোমা হামলায় দেশটির সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) অন্তত ৪০ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। পুলওয়ামা জেলার আওয়ান্তিপুরা এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটায় কিছু দুষ্কৃতকারী। এইরকম শতশত হামলার শিকার হচ্ছে মানুষ মানুষের দ্বারা। একসময় মানুষ মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল কথাটি যেন বর্তমানে শিশুদের কাছে রূপকথার গল্প মনে হবে।

প্রতিদিন একরকম আতঙ্কের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে মানুষ৷ আধুনিকতা আমাদেরকে উন্নত জীবন দিয়েছে বটে কিন্তু মনুষ্যত্বকে ছিনিয়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এখন মানুষ এমন একটা অবস্থায় উপনীত হয়েছে যে সে নিজের রক্ত নিজেই পিপাসু। এই সংকটময় অবস্থা থেকে উত্তরণে বিশ্ব মানবতা আবার জাগ্রত হবে সেই প্রত্যাশা সকলের।

লেখকঃ
সাব্বির আহমেদ
বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/৯:৩৮পিএম/১১/৫/২০১৯ইং)