• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৬:০৫ অপরাহ্ন

বাসার পার্টিতে কী খেয়েছিলেন? হুমায়ূন আহমেদ আরো ২০ বছর বাঁচতে পারতেন


প্রকাশের সময় : জুলাই ২৪, ২০১৮, ৮:৪২ PM / ৪২
বাসার পার্টিতে কী খেয়েছিলেন? হুমায়ূন আহমেদ আরো ২০ বছর বাঁচতে পারতেন

দর্পন কবির(নিউ ইয়র্ক) : ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউইয়র্কে মৃত্যুবরণ করেন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর মৃত্যু কি অবধারিত ছিল? তিনি কি আরো কয়েক বছর বেঁচে থাকতে পারতেন না? আপারেশনের পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে কেন আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন হুমায়ূন আহমেদ? প্রশ্নগুলো এখনও অনেকের মনে। এই প্রশ্ন উত্থাপনের কারণও আছে। প্রথম কারণ, ক্যান্সার রোগের সবচেয়ে সফল চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় নিউইয়র্কের যে হাসপাতালে, সেই হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হয়েছিল। অপারেশনও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। তাঁর চিকিৎসক (ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ মিলার) জানিয়েছিলেন-হুমায়ূন আহমেদ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যে স্টেজে ছিলেন, শতকরা ৫ ভাগ রোগীর বিপদ হবার সম্ভাবনা থাকে। হুমায়ূন আহমেদের সফল অপারেশন সম্পন্ন হবার পর চিকিৎসক স্বস্থি প্রকাশ করেছিলেন। কারণ, অতীতে দেখা গেছে এ ধরনের রোগী অনেক বছর (নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণের মধ্য দিয়ে) বেঁচে থাকেন। কেউ ১৫, কেউ ২০, কেউবা এর বেশি বছর বেঁচে আছেন-এমন নজির রয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসক এ সব কথা বলেছিলেন ঐ সময়ের বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ.কে. আব্দুল মোমেনের কাছে। ড. মোমেন সরকারি প্রতিনিধি হিসাবে হুমায়ুন আহমেদের নিয়মিত খোঁজ-খবর নিতেন এবং তাঁর চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। হুমায়ূন আহমেদ আর বাঁচবেন না-এমন আশঙ্কার কথা তিনি নিউইয়র্কের একাধিক সাংবাদিককে জানিয়েছিলেন (চিকিৎসকের বরাতে) তাঁর মৃত্যুর একদিন আগে। সেদিন অব্দি ‘হুমায়ূন আহমেদ ভাল আছেন, সুস্থ আছেন’-এ সব কথা মিডিয়ার কাছে বলছিলেন তাঁর স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং অন্য প্রকাশ-এর প্রকাশক মাজাহারুল ইসলাম। অথচ ১৬ জুলাই (২০১২ সাল) থেকে হুমায়ূন আহমেদ কোমায় ছিলেন। ২০১২ সালের ১৮ জুলাই বিকেলে আমি ম্যানহাটানে বেলভিউ হাসপাতালে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদের স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টাকালে জাফর ইকবাল আশঙ্কার কথা বলতে গেলে মাজাহারুল ইসলাম তাঁকে থামিয়ে দেন। মাজাহারুল ইসলাম ‘হুমায়ুন আহমেদ ভাল আছেন’-বলে দিতে বললে জাফর ইকবাল আমতা-আমতা করে সে কথা বলেছিলেন। এই প্রতিবেদক কৌশলে জানতে চেয়েছিলেন-হুমায়ূন আহমেদের মাকে নিউইয়র্কে আনছেন কিনা। এর জবাবে জাফর ইকবাল বলেছিলেন-এখন সেই সময় নেই। এ কথা থেকে আশঙ্কা প্রকাশ পেলেও মাজাহারুল ইসলাম হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে অসুস্থতার নেতিবাচক খবর প্রকাশ বা সম্প্রচার না করার অনুরোধ করেছিলেন। এর একদিন পর হুমায়ূন আহমেদ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রশ্ন হচ্ছে-হুমায়ূন আহমেদের অবস্থা অবনতির দিকে গেলেও তা কেন গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল? এর নেপথ্য কারণ কি?
কারণ উদঘাটন করতে গিয়ে জানা যায়, হুমায়ূন আহমেদ (সফল অপারেশনের পর) সুস্থ হবার পর জ্যামাইকাস্থ তাঁর বাসায় এক পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। এই পার্টিই ছিল ‘কাল’। পার্টিতে হুমায়ূন আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী শাওন এবং মাজাহরুল ইসলামের স্থানীয় শুভানুধ্যায়ীরা অংশ নিয়েছিলেন। পার্টি উপলক্ষে নানা প্রকার খাবার-দাবার ছাড়াও ছিল পানীয় (হার্ড ড্রিংকস) পরিবেশন। অপারেশনের পর হুমায়ূন আহমেদকে নিরিবিলি পরিবেশে এবং সার্বক্ষণিক দেখশোনার মধ্যে রাখার পরামর্শ ছিল চিকিৎসকের। তা মানা হয়নি।


ঐ সময়ে সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত কাজের বুয়ার বরাতে জানা যায়, পার্টিতে অনেকে মদ পান করেছেন। হুমায়ূন আহমেদকে মদ দেয়া হয়েছিল বলে কাজের বুয়া তার সন্দেহের কথা বলেছিলেন (কাকে বলেছিলেন, তার নাম গোপন করা হল)। তবে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। হুমায়ূন আহমেদকে যে খাবার দেয়া হয়েছিল-ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রযোজ্য ছিল না বলেও বুয়া জানান। গরুর মাংশ খাওয়ানো হয়েছিল বা হুমায়ূন আহমেদ নিজে জোর করে খেয়েছিলেন-এমন কথা পরে শোনা গিয়েছিল। ঐদিন পার্টি চলাকালে চেয়ার থেকে হুমায়ূন আহমেদ পড়ে গিয়েছিলেন। পড়ে যাওয়ায় তাঁর অপারেশনের স্থানে সেলাই ছিঁড়ে গিয়েছিল। এই সেলাই ছেঁড়া স্থানে ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হলে তাঁর মৃত্যু অবধারিত হয়ে যায়। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে-হুমায়ূন আহমেদ চেয়ার থেকে পড়ে যাবার সাড়ে ১১ ঘন্টা পর তাঁকে প্রাইভেট কারযোগে জ্যামাইকা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই হাসপাতালের রেকর্ডবুকে বিলম্বে হাসপাতালে আনার কথা উল্লেখ আছে। হুমায়ূন আহমেদকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে না নেয়ার কারণটি রহস্যাবৃত। হুমায়ূন আহমেদ পড়ে যাবার পর তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে কেন নেয়া হল না? তাঁকে হাসপাতালে নিতে কেন এ্যাম্বুলেন্স কেন কল করা হয়নি? হুমায়ূন আহমেদের অবস্থা আশঙ্কাজন বলে জ্যামাইকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে বেলভিউ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় এবং ঐ হাসপাতালে জনপ্রিয় ও নন্দিত লেখক মারা যান। সেদিনের ঘটনার কথা ভাল বলতে পারবেন শাওন বা মাজাহার। তারা ঐদিনের পার্টি সম্পর্কে কিছু বলেন না। এ সব কথা কিন্তু জাফর ইকবালসহ হুমায়ূন আহমেদের সন্তান ও পরিবারের অপরাপর সদস্যরা জানেন।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বেশ কয়েকজন ক্যান্সার রোগে আক্রান্তকে দেখা গেছে ১৫ থেকে ২৫ বছর অব্দি বেঁচে ছিলেন। ক্যান্সার রোগের প্রকার বা ধরণ অন্যরকম হলেও নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণের মধ্য দিয়ে তারা বেঁচে থাকতে পারেন। দুটি উদাহারণ ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা (কিমো থেরাপী) গ্রহণ করে ১৮ বছর পার করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। এরচেয়ে বেশি বছর বেঁচেছিলেন ড. মনসুর খান। তাঁরা দু’জন-ই কমিউনিটিতে বেশ পরিচিত ছিলেন। একজন ছিলেন সংগঠক ও অপরজন ছিলেন শিক্ষাবিদ। ড. মনসুর খান একুশে পদকও পেয়েছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে পার্টিতে পড়ে না গেলে হয়তো তাঁকে ১৫/২০ বছর বেঁচে থাকতে দেখা যেত-এমন ধারনা অনেকের। তা হলে বাংলা সাহিত্যে তিনি আরো অবদান রেখে যেতে পারতেন। যদিও মৃত্যু নিয়ে অনেকে মনে করেন, যখন সময় হবে-তখনই তাঁর মৃত্যু হবে। বিজ্ঞান বলে-শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে বেঁচে থাকার সময়কালের কথা। যাই হোক, হুমায়ূন আহমেদের আকস্মিক মৃত্যু-রেখে গেছে অনেক প্রশ্ন।
লেখক : প্রবাসী সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৮:৪০পিএম/২৪/৭/২০১৮ইং)