• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০১:৩৮ অপরাহ্ন

বারবার কমিটি স্থগিত করেও ঠেকানো যাচ্ছে না সংঘর্ষ


প্রকাশের সময় : মে ৬, ২০১৭, ১:৫৪ PM / ৪৭
বারবার কমিটি স্থগিত করেও ঠেকানো যাচ্ছে না সংঘর্ষ

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

 

কমিটি গঠন করার পৌনে দুই বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কার্যক্রম দুবার স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি। ২০১৫ সালের ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠনের পর থেকে একের পর এক সংঘর্ষে জড়ান নেতা-কর্মীরা। বাধ্য হয়ে সাত মাস পর কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। পাঁচ মাস পর স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হয়। এর নয় মাস পর গত বৃহস্পতিবার রাতে আবারও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি।

অভ্যন্তরীণ সংঘাত, দরপত্র নিয়ে মারামারি, ছিনতাই, ছাত্রী উত্ত্যক্তসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। প্রায় একই কারণে এই কমিটির আগের কমিটিকে ২০১৪ সালের ১০ জুন বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। এর পর টানা ১৩ মাস চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটিই ছিল না।

কেন বারবার সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন নেতা-কর্মীরা, জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি (১৯৯৮-২০০১ মেয়াদ) জিল্লুর রহমান মুঠোফোনে  বলেন, ক্যাম্পাসে কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সংগঠনের কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। আর আগের মতো কোনো প্রতিপক্ষও নেই। ফলে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যেই অশুভ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন। এতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি অবসানের জন্য সংগঠনে বিশুদ্ধকরণ অভিযান চালানোর পরামর্শ দেন তিনি।

কমিটি স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়ার আগের নয় মাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি হামলার অন্তত ১৭টি ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ৬০ জন। এই সময়ের মধ্যে পরীক্ষা পণ্ড করে দেওয়ার মতোও ঘটনা ঘটিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এসব ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের ১৬ জন নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় বহিষ্কার করে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বহিষ্কার করে আটজনকে। সর্বশেষ গত ২০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আবদুল্লাহ আল কায়সার ও উপদপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমানকে বহিষ্কার করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলায় অন্তত আটজন আহত হন। এ ঘটনার পর রাতেই কমিটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান গতকাল মুঠোফোনে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ যাতে সুন্দরভাবে চলে, সে ব্যবস্থা নোওয়া হবে।

গত বছরের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট এলাকার নিজ বাসা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর ২২ দিন আগে ২৮ অক্টোবর রাতে দিয়াজসহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চার নেতার বাসায় তাণ্ডব চালায় দলের আরেক পক্ষ। ৯৫ কোটি টাকার দরপত্রের ভাগ-বাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী নেতা-কর্মীরা ওই হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে সামাল দিতে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় প্রাতরাশ বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে তিন মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কোন্দল মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু তাঁর নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি বলে ছাত্রলীগের নেতারা মনে করছেন।

 চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে দুটি পক্ষ সক্রিয়। এক পক্ষ মহিউদ্দিনের অনুসারী। অন্য পক্ষ সিটি মেয়র নাছিরের অনুসারী। দুই নেতার অনুসারীদের মধ্য সংঘর্ষের পাশাপাশি ছাত্রলীগ নেতাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ, চাওয়া-পাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণেও বেশ কয়েকবার পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

২০১৫ সালের জুলাই মাসে আলমগীর টিপুকে সভাপতি ও ফজলে রাব্বিকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি (সদ্য স্থগিত) গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

স্থগিত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু  বলেন, একটি বিশেষ মহল বারবার ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ লাগিয়ে সংগঠনকে এবং তাঁদের কমিটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে। এর সঙ্গে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে দাবি করেন তিনি।

 ক্যাম্পাসে তল্লাশি, অস্ত্রসহ আটক ৩, অস্ত্র উদ্ধার

বৃহস্পতিবার দুপুরে সংঘর্ষের পর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ছয়টি হলে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তল্লাশিতে ৪০টি রামদা, রডের ৩০টি টুকরা ও পটকা উদ্ধার করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র প্রথম আলোকে বলেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে তল্লাশি চালায় পুলিশ।

এদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কটেজগুলোতে তল্লাশি চালানো হয়। দুপুরে একটি কটেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত হওয়া কমিটির সহসম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম এবং উপত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক নিয়াজ উদ্দিনকে একটি শটগানসহ আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া বিশ্বিবদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার একটি বাসা থেকে পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক আবু বকরকে আটক করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় তিনটি মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

তিন ছাত্রলীগ নেতাকে আটকের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মশিউদ্দোলা রেজা।

 

 

 (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম ০১.৫১পিএম/০৬//২০১৭ইং)