• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

বাবার ঋণ পরিশোধ করতে কন্যা যখন পুরুষ!


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৮, ২০১৮, ১:৪৮ PM / ১০৫
বাবার ঋণ পরিশোধ করতে কন্যা যখন পুরুষ!

 

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : পরিবারের পাঁচ বোনের মধ্যে বড় সিতারা ওয়াফাদার। আফগানিস্তানের নানগড়হারের বাসিন্দা সিতারা’র কোনো ভাই না থাকায় তাকেই হতে হয়েছে পরিবারের বড় ছেলে। এমনিতেই আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চল ‘‌বাচাপোসি’‌ নিয়ম কানুন বেশ বিচিত্র। আঞ্চলিক প্রথা অনুযায়ী সেখানে কোনো পরিবারে ছেলে সন্তান না থাকলে বড় মেয়েকেই পুরুষ সেজে থাকতে হয়।

কিন্তু সিতারা ওয়াফাদারকে সেই নিয়ম আরও একটি বিশেষ কারণে কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়। আর সেটি হচ্ছে বাবার ঋণ! নারী পরিচয় ঝেড়ে ফেলে তাই তাকে পুরুষদের মতো পোশাক পরতে হয়। এমনকি পুরুষদের পারিবারিক রীতিও মেনে চলতে হয় কিশোরী সিতারাকে।

এই কাহিনী যে শুধু সিতারার একার তা কিন্তু নয়, ওই অঞ্চলের পুত্রহীন অনেক পরিবারের সন্তানকেই এই জীবন কাটাতে হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ও দি হিন্দু সম্প্রতি আফগানিস্তানের এমন করুণ চিত্রই তুলে ধরেছে।

পূর্ব আফগানিস্তানের নানগড়হার এলাকায় দরিদ্র পরিবারের ১৮ বছরের সিতারা বাড়ির পুরুষদের মতোই কায়িক পরিশ্রম করেন। ফলে ভোর হলেই পুরুষদের মতো পোশাক পরে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ইঁটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতে যান সিতারা। এমনকি মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময়েও ইচ্ছাকৃতভাবে কণ্ঠস্বর মোটা করে নেন তিনি।

সিতারা বলেন, ‘নিজে যে মেয়ে তা এখন ভুলেই গেছি। নিজেকে এখন পুরুষ বলেই মনে হয়।’

কিন্তু বাবার সঙ্গে পুরুষ সেজে ইটভাটায় কাজ করলেও কোনো বেতন পান না সিতারা। যে ইঁটভাটায় তিনি কাজ করেন সেখানে তার বাবা অতীতে টাকা ধার করেছিলেন। সেই ঋণ পরিশোধ করতেই এখন বিনা বেতনে বাপ-মেয়েকে কাজ করতে হয়। এভাবেই দীর্ঘদিন কাজ করার পর তাদের সেই ঋণ শোধ হবে।

মেয়েকে নিয়ে পরিশ্রম করে ঋণ শোধ করতে গিয়ে‌ সিতারার বাবাও সব জায়গায় তাকে নিজের ছেলে বলেই পরিচয় দেন। এমন অবস্থায় পুরুষদের ধর্মীয় আচার আচরণও সিতারাকে মেনে চলতে হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের ‘‌বাচাপোসি’র দীর্ঘ ইতিহাস আছে। কথিত আছে, অতীতে পুত্রহীন দম্পতিরা তাদের পরলৌকিক ক্রিয়াকর্ম যাতে সুষ্ঠুভাবে হয়, সেই উদ্দেশ্যে বড় মেয়েকে ছেলের মতো করে বড় করতেন। ফলে তাদের উপর পর্দাপ্রথা প্রযোজ্য হতো না।

পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সেই সমাজে পুরুষের মতোই তাদের সমান অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া হতো। কিন্তু পরবর্তীকালে অধিকার ও মর্যাদা লাভের ইচ্ছায় কিছু নারী স্বেচ্ছায় এই প্রথাকে মেনে চলা শুরু করেন।

সিতারা নিজেই জানান ‌বাড়ির বাইরে বের হলে প্রথমে কেউ বিশ্বাসই করতে পারেন না যে সে পুরুষ নয় নারী। যদিও সিতারা নিজেও নারী পরিচয় প্রকাশ করতে আগ্রহী নন। কেননা তার নারী পরিচয় প্রকাশ পেলে তার জীবনে দেখা দেবে নানা সমস্যা। এমনকি তাকে ধর্ষণ কিংবা অপহরণ করাও হতে পারে।

সিতারা জানান, মাত্র ৮ বছর বয়স থেকে ইট ভাটায় কাজ করছেন। ফলে স্কুলে যাওয়া বা খেলাধুলা করার সুযোগ তার কখনোই হয়নি।’‌

সিতারা জানান, প্রতিদিন তাকে প্রায় ৫০০ ইঁট বানাতে হয়। ঋণ শোধে তাকে সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটুনি করতে হয় তাকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সিতারার বাবার ঋণের পরিমাণ ২৫হাজার আফগানি। সেই ঋণ বহু আগেই শোধ হয়েছে। যদিও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত সিতারা’র বাবাকে ইট ভাটার মালিক জানিয়েছে, সুদে আসলে ঋণ যে অংকে দাঁড়িয়েছে তা সহসাই শোধ হবে না।

সিতারার বাবার আক্ষেপ, ‘‌ঈশ্বর তার পরিবারে ছেলে সন্তান দেননি। দিলে এভাবে মেয়েকে দিয়ে কাজ করাতে হতো না।’‌

আর সিতারা’র কথা হচ্ছে,‘পরিবারে ‌আমার একটা ভাই থাকলে জীবনটা হয়তো এমন হতো না।’ সিতারা জানায়, শিশুকাল থেকেই ছেলে সেজে জীবনযাপন করছে সে। যখন বয়স ১৩ বছর তখন বুঝতে পারে কি অন্যায় তার সঙ্গে করা হচ্ছে।

অবশ্য সেসময় প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয়নি। কেননা ততদিনে পুরো সংসারের দায়িত্ব তার কাঁধে! এখন তার একটাই চাওয়া, যত দ্রুত সম্ভব ধার শোধ করে পরিবারকে মুক্ত করা। ছোট বোনদের ভালো জায়গায় বিয়ে দেওয়া।‌

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১:৪৬পিএম/২৮/৪/২০১৮ইং)