• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩:৪৪ অপরাহ্ন

বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা-৫ গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ


প্রকাশের সময় : মে ২৪, ২০১৮, ৫:৪৪ PM / ৪৪
বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা-৫ গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষক প্যানেল সোনালি দলের সাবেক এ যুগ্ম সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) অভিযোগ করা হয়েছে। ভর্তি বাণিজ্য থেকে শুরু করে নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগ বাণিজ্য, অনৈতিক কর্মকান্ড, ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ওপর বই লিখে পুরস্কার প্রাপ্ত ও ছাত্রদলের যুক্তরাজ্য শাখার সাবেক এই নেতার বিরুদ্ধে এমন কোন অভিযোগ নেই যা তিনি করেন না। তার এ স্বেচ্ছাচারিতায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। তবে ভেতরে ভেতরে অনেকেই ভিসির এ আচরণে ক্ষুব্ধ।
সম্প্রতি কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রামের মো: মোদাচ্ছের খানের ছেলে শাওন খান ভিসি নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেখানে তিনি তার বিরুদ্ধে নানা আর্থিক অনিয়ম, শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছেন। এর পাশাপাশি তিনি ভিসির কবল থেকে পাবলিক এ বিশ্ববিদ্যালয়টি কে রক্ষারও আহ্বান জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন সম্প্রতি ওই অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়ে ছিলেন। যা তিনি দিতে পারেননি।
বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তার আমলে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে এমএলএসএস পদে লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে এসএসসি বা সমমানের পাসের কথা বলা হলেও অষ্টম শ্রেণী পাস প্রার্থীদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে শিক্ষা জীবনে তৃতীয় বিভাগ বা ২ দশমিক ৫০ গ্রেডের প্রার্থীদেরও নিয়োগ প্রদান করেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়োগ বিধির পরিপন্থী। অথচ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ন্যুনতম যোগ্যতা লেখা ছিল দ্বিতীয় বিভাগ।
ভিসির বিরুদ্ধে আরও অভিযোগের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপন প্রকল্পের (অব্যয়িত) প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে তুলে নিয়ে আত্মসাৎ এবং প্রায় ২ কোটি টাকার অধিক মূল্যের বই ক্রয়ের অভিযোগ ছাড়াও দুই থেকে তিনগুণ অধিক মূল্যে কোটি টাকার বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ক্রয়ের বিষয়টিও রয়েছে।
এছাড়াও ভর্তি বাণিজ্যেরও অনেক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ভিসি কোটার নামে তিনি নিয়ম বর্হিভূত ভাবে ফার্মেসি বিভাগ, আইন বিভাগ ও বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানোর অভিযোগ রয়েছে। তথ্য প্রমাণে দেখা যায় যে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ফার্মেসি বিভাগে মেধাক্রম ২০৮৪ নিয়েও ভর্তি হয়েছেন মারিয়া খানম নামের এক শিক্ষার্থী। ১৩৩৩ মেধাক্রম নিয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ওবায়দুর রহমান নামে একজন ছাত্র। ইইই বিভাগের রাফিন রাসা নামের এক ছাত্র ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে ভিসি কোটায় ভর্তি হয়েছেন। এখন রাসা ভিসির একান্ত নিজস্ব ক্যাডার ও দালাল হিসাবে ক্যাম্পাসে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। অথচ এসব বিভাগে এক থেকে ১৫০ জন ছাত্রের বেশি ভর্তি হওয়ার কথা নয়। এর বাইরে বায়ো টেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেও ভর্তি হয়েছেন মো: আকাশ নামে এক শিক্ষার্থী। ভিসি কোটা’র নামে অনেক বিভাগে বিধি বর্হিভূত ভাবে আরও অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ রয়েছে ভিসির বিরুদ্ধে।
একটি সূত্র বলছে, ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য কোটা থাকলেও ভিসি কোটা বলতে কোনো কোঠা নেই। এ সব অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে অনেক শিক্ষকের কপালে জুটেছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের ভিসি প্রফেসর ড. খায়রুল আলম খানের সময় একজন শিক্ষার্থী ৩-৪ হাজার টাকায় ভর্তি হতে পারতেন। এখন ভর্তি হতে লাগছে ২০-২৫ হাজার টাকা। শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে এর আগে আন্দোলন, মানববন্ধন, মিছিল-মিটিং করলেও তাতে তিনি গা-করেননি। অভিযোগ রয়েছে নতুন এ ভিসির স্বেচ্ছাচারিতায় অনেক সিনিয়র শিক্ষক চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের জায়গায় অনভিজ্ঞ শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা ভালো শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালের ১৩ জুলাই বঙ্গবন্ধুর নামে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তী সময়ে ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পরে ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়।
অতি সম্প্রতি “গোপালগঞ্জে অনৈতিক সম্পর্কের প্রতিদানে আবারো অযোগ্যদের চাকুরী দেওয়ার ব্যবস্থা করছে বশেমুরপ্রবি’র ভিসি নাসির উদ্দীন” শিরোনামে দেশের বেশ কিছু অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ৯ এপ্রিল তারিখে অনুষ্ঠিত উপ পরিচালক, সহকারী পরিচালক (অডিট) এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদের নিয়োগ স্থগিত করে দেয়। ওই নিয়োগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. খন্দকার নাসির উদ্দীন নিয়োগের নীতিমালার ও শর্ত পুরনে অযোগ্য এমন দু’জন পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেবার সকল প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করে ছিলেন বলে জানা গেছে। ওই নিয়োগে সহকারী পরিচালক (অডিট) পদে রঞ্জন চন্দ্র বাইন কে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছিল। উল্লেখ্য যে নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী অত্র পদে আবেদন কারীকে অবশ্যই বাণিজ্য সম্মানসহ মাষ্টার্স হতে হবে বা ৪ বছর মেয়াদী ¯œাতক বা এমবিএ ডিগ্রী সম্পন্ন হতে হবে। কিন্তু রঞ্জন চন্দ্র বাইনের আবেদন পত্রে দেখা গেছে যে রঞ্জন চন্দ্র বাইন ১৯৯৪ সালে এসএসসি, ১৯৯৭ সালে এইচএসসি এবং ২০০০ সালে বিএ সম্মান সম্পন্ন করেন অর্থাৎ আবেদন কারীর ৪ বছর মেয়াদী ¯œাতক সম্মান বা বাণিজ্য ¯œাতক ডিগ্রি নেই। প্রকাশ থাকে যে রঞ্জন চন্দ্র বাইন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে মনিটরিং কর্মকর্তা হিসাবে ৬ বছর কর্মের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে ছিলেন। যা সম্পুর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। দর্শনে অর্নাস ও মাষ্টার্সধারী রঞ্জন চন্দ্র বাইন গোপালগঞ্জের এন হক কলেজে দর্শনের প্রভাষক হিসাবে কর্মরত থাকা অবস্থায় দায়িত্ব পালনে অবহেলার দায়ে চাকুরীচ্যুত হন।
অপর দিকে একই নিয়োগে জাহিদুল ইসলাম নামে অপর একজনকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগের ক্ষেত্রেও কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. খন্দকার নাসির উদ্দীন। প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগের শর্তে বয়সসীমা সবোর্”চ ৩০ বছর উল্লেখ থাকলেও ৪০ বছর বয়সী (জন্ম তারিখ ৩১/০৭/১৯৭৮) জাহিদুল ইসলামকে নিয়োগের প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করে ছিলেন। উল্লেখ, উক্ত জাহিদুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. খন্দকার নাসির উদ্দীনের পক্ষে ভর্তি বানিজ্যে এজেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন দীর্ঘ দিন যাবত। জাহিদের হাত থেকে গত কয়েক বছর যাবত ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. খন্দকার নাসির উদ্দীন পেয়েছেন কয়েক কোটি টাকা।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. খন্দকার নাসিরউদ্দীন মোটা অংকের বিনিময়ে মেহেদী হাসান নামে একজনকে শিক্ষক হিসাবে আইন বিভাগে নিয়োগ দিয়েছেন। জনশ্রæতি রয়েছে উক্ত শিক্ষক নাকি নিয়োগের জন্য ভিসি প্রফেসর ড. খন্দকার নাসির উদ্দীন কে প্রায় ১০ লাখ টাকা প্রদান করেন।
এ সকল ব্যাপারে ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল ০১৭১২-৮২৪৮০০ নম্বরে ফোন করে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমার থেকে অনেক যোগ্য লোক থাকার পরও গোপালগঞ্জের ছেলে হিসেবে প্রধানমন্ত্রী আমাকে এ পদে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। কতিপয় বাইরের কিছু শিক্ষক আমার বিরোধিতা করে চলছেন। দুদকে অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ওটার জবাব দেয়া লাগবে না। ওপর থেকে আমি সব ম্যানেজ করে ফেলেছি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে ভিসি বলেন, এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারন মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. খন্দকার নাসির উদ্দীনের এহেন কর্মকান্ডের সমালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রফেসর ড. খন্দকার নাসির উদ্দীনকে প্রত্যাহার পুর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)’র আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।