• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন

বর্ষাকালে ঝিনাইদহের যে গ্রামের মেয়েদের বিয়ে হয় না!


প্রকাশের সময় : জুন ১১, ২০১৮, ২:২৩ PM / ৫৭
বর্ষাকালে ঝিনাইদহের যে গ্রামের মেয়েদের বিয়ে হয় না!

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ঝিনাইদহ : হঠাৎ এই ধরনের শিরোনাম দেখলে যে কেউ চমকে উঠবেন! ভাবতে পারেন ডিজিটাল ও চরম সভ্যতার যুগে এমন ভূতুড়ে গ্রাম কি আছে? জ্বী হ্যাঁ! এমন দুটি গ্রাম হচ্ছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের ভাদালীডাঙ্গা ও হলিধানী ইউনিয়নের নাটাবাড়িয়া। বর্ষা আসলে ঝিনাইদহের দুইটি গ্রামে বিয়ে বন্ধ থাকে। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন এমন দুইটি গ্রামের নাম হচ্ছে ভাদালীডাঙ্গা ও নাটাবাড়িয়া। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ও হলিধানী ইউনিয়নে গ্রাম দুইটি অবস্থিত। রাস্তাঘাটে কাদার কারণে এমনকি স্কুলেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায়। গ্রামে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান হয় না। কারো মৃত্যুর সংবাদ পেলে একান্ত আপন ছাড়া গ্রাম দুইটিতে যেতে চান না। কেউ অসুস্থ হলে কাঁধে করে হাসপাতালে নিতে হয়। ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ব্যবসা শেষে বাড়ি ফেরে না, নিকটস্থ বাজারের দোকানের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েন অনেকে। বর্ষা মৌসুম আসলে অনেকে বাইরে গিয়ে বসবাস করেন। গ্রাম দুইটির কাচা রাস্তায় এতো কাঁদা যে বর্ষার ৪ থেকে ৫ মাস চলাচল করা যায় না। দুই গ্রামের মানুষ জুতা হাতে নিয়ে খালি পাঁয়ে চলাচল করতে হয়। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের ভাদালীডাঙ্গা গ্রামটি কৃষি নির্ভর। ধানসহ ব্যাপক ফসল উৎপাদ হয়। কিন্তু পরিবহনের কোন উপায় থাকে না। গ্রামের মানুষ শীত মৌসুমে ছাড়া সাচ্ছন্দে চলাচল করতে পারেন না। ভাদালীডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি মেম্বর আবুল কালাম জানান, দুর্গাপুর মল্লিক বাড়ির মোড় থেকে বেতাই গ্রাম ভায়া ভাদালীডাঙ্গা সড়কটি চলাচলের অযোগ্য। তিনি বলেন, কাদাপানির কারণে কোন বাড়িতে বিয়েও হয়না। এমনকি বাড়ি থেকেও কেও বের হয়না। বলা যায় কাদাপানিতে অবরুদ্ধ দশা গ্রামবাসির। ভাদালীডাঙ্গা গ্রামের আনিছুর রহমান জানান, দুর্গাপুর কচাতলার মোড় থেকে ভাদালীডাঙ্গা গ্রামের রায়হানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটি এতটাই খরাপ যে রোগী ও বৃদ্ধ মানুষ কোলে করে নিয়ে চলাচল করতে হয়। কাদার জন্য মানুষ ঘর তেকে বের হতে পারে না। তিনি বলেন, ডিজিটাল ও সভ্যতার এই যুগে এমন রাস্তার কথা কেও কল্পনাও করতে পারে না। ভাদালীডাঙ্গা গ্রামের রাস্তা নিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এড আব্দুল আলীম জানান, রাস্তাটির আইডি না থাকায় প্রকল্প ভুক্ত করা যাচ্ছে না। আশা করা যায় দ্রুত আইডি করা হবে। এদিকে হলিধানী ইউনিয়নের আরেকটি গ্রাম হচ্ছে নাটাবাড়িয়া। এই গ্রামে আনুমানিক ২৫ শ মানুষের বসবাস। গ্রামের অর্ধেক মানুষ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের মানুষগুলোর ব্যবহারের জন্য গ্রামে দুইটি রাস্তা রয়েছে। একটি রাস্তা গেছে পশ্চিমপাড়ায়, আরেকটি পূর্বপাড়ায়। নাটাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ শামীম হোসেন জানান, তাদের গ্রামের মানুষের একটাই সমস্যা কাঁচা রাস্তা। বর্ষা মৌসুমে রাস্তা দুইটি দিয়ে লোকজন বা যানবাহন কোনো কিছুই চলাচল করতে পারে না। তিনি জানান, তাদের গ্রামের আসাদুল ইসলাম নামের এক শিশু অসুস্থ হলে তার মা তাকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান। আর বাদশা তার অসুস্থ স্ত্রীকে কোলে তুলে হাসপাতালে নিয়েছিলেন। নাটাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম জানান, বর্ষার সময় স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ৩০ শতাংশ কমে যায়। গ্রামের স্কুল হলেও রাস্তায় এতোটাই কাঁদা হয় যে গ্রামের শেষ প্রান্তের শিশুরা ওই কাঁদা পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসতে পারে না। গ্রামের আরেক বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, বর্ষা মৌসুমের সময়গুলোতে তাদের গ্রামে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান হয় না। কারো বিয়ে ঠিক হলেও বর্ষা শেষে তা সম্পন্ন করা হয়। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মালেক জানান, ভাদালীডাঙ্গা গ্রামের রাস্তার খবরটি আমি বরতে পারবো না।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/২:২২পিএম/১১/৬/২০১৮ইং)