• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৫ অপরাহ্ন

বঙ্গবন্ধুর পরোক্ষ স্বাধীনতা ঘোষণা ও গেরিলা যুদ্ধের নির্দেশ


প্রকাশের সময় : মার্চ ৬, ২০২৩, ১০:৪৮ PM / ২৪৪
বঙ্গবন্ধুর পরোক্ষ স্বাধীনতা ঘোষণা ও গেরিলা যুদ্ধের নির্দেশ

রণজিৎ মোদক : ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। বাঙালির জীবনের এক অবিস্মরণীয় দিন। বাঙালির হৃদয়ে চিরভাস্বর একটি অনন্য ঘটনা। হাজার বছরের ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে বুকে ধারণ করে যে জাতি বারবার বিদেশিদের হাতে নির্যাতিত হয়েছে, শোষিত-বঞ্চিত হয়েছে, হারিয়েছে স্বকীয়তা ও পথের ঠিকানা, আজকের এই দিনে স্বাধিকার বঞ্চিত বাঙালি জাতি খুঁজে পায় স্বাধীনতার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা।

গোটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসের তুলনায় আজকের দিনে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী, কৌশলী ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতাপূর্ণ এবং প্রজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ। বাংলা ভাষাভাষি মানুষের হৃদয়ে চিরভাস্বর হয়ে থাকা একটি অনন্য ঘটনার জন্ম হয়েছিল এই দিনে। পর্যায়ক্রমে ও ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাওয়া না ঐতিহাসিক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে একাত্তরের এই দিনে বাঙালি জাতির মহাক্রান্তিলগ্নে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোটা জাতিকে দেখিয়েছিলেন মুক্তির পথ, দিয়েছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকনির্দেশনা। শুনিয়েছিলেন শেখ ভাঙার গান। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ মানুষের মুহুর্মুহু করতালি আর গগনবিদারী স্লোগানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর এ বজ্র নিনাদ ঘোষণার পর মুক্তিপাগল বাঙালিকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বাঁধভাঙা ¯্রােতের ন্যায় জনতার উত্তাল উর্মি ছড়িয়ে পড়ে দেশের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে। টগবগে তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর-কিশোরী, গৃহবধূ, পেশাজীবি, কৃষক, শ্রমিক, কামার-কুমার, জেলে-তাঁতী কেউ আর ঘরে বসে থাকেনি। এ নির্দেশনা পেয়েই মূলত সারাদেশে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। এটি শুধু একটি ঐতিহাসিক ভাষণই নয়, এটি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রামাণ্য দলিল ও ঘোষণাপত্রও বটে। মাত্র ১৯ মিনিটের এই অলিখিত ভাষণের প্রতিটি শব্দ মুক্তি সংগ্রাম আর স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত ছিল। এ ভাষণ যেমনি ছিল সারগর্ভময়, তেজস্বী ও যুক্তিপূর্ণ তেমনি ছিল তির্যক, তীক্ষè ও বলিষ্ঠ। সত্যিকার অর্থেই এ ঘোষণার পরই পাকিস্তান সরকারের প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে পড়ে। পূর্ব বাংলাও কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গোটা জাতি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সংগ্রামরত বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায় এমন প্রবলভাবে নাড়া দেয় যে, সংসার, পরিবার, মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী, সন্তান এমনকি জীবনের মায়াকে তুচ্ছ করে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে, সশস্ত্র সংগ্রামে। বঙ্গবন্ধুর এ ঐতিহাসিক ভাষণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যুবক, কৃষক, শ্রমিক, লেখক, কবি, শিল্পী, শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবি-আন্দোলনরত আপামর ছাত্র-জনতা মরনপণ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

মূলত ১৯৪৭ সাল থেকেই বাঙালির মনের মণিকোঠায় যে ছাইচাপা আগুন, বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ ও স্বাধীনতার স্বপ্ন লুকায়িত ছিল তারই বিস্ফোরণ ঘটে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু মুজিবের কন্ঠের মধ্য দিয়ে। ৫২’র ভাষা অন্দোলনে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পরামর্শদান ও ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করার নির্দেশ দিয়ে চিরকুট পাঠানো, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ৬ দফার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও তার দল স্বাধিকার এবং স্বাধীনতার প্রথম ধাপ অতিক্রম করতে অত্যন্ত রাজনৈতিক কৌশলে। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, এ উপমহাদেশ তো বটেই গোটা দুনিয়ার ইতিহাসে এমন ভাষণ নজিরবিহীন। সেদিন ১৯ মিনিটের ভাষণের মধ্য দিয়ে বাংলার কবি, বাঙালির কবি, বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠার সেই মহানায়ক স্বাধীনতার যে বীজ রোপণ করে গিয়েছিলেন, ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সেদিনের সেই অংকুরিত হয়ে রক্ত¯্রােতে ভেসে ফুলে-ফলে পল্লবিত হয়েছিল।