• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৫:১২ পূর্বাহ্ন

পাওনা না পেয়েই মৃত্যুবরণ করলেন প্যারাডাইজ কেবল্সের শ্রমিক আব্দুল মজিদ


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৭, ২০১৯, ৮:৪৯ PM / ৩৪
পাওনা না পেয়েই মৃত্যুবরণ করলেন প্যারাডাইজ কেবল্সের শ্রমিক আব্দুল মজিদ

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা : ফতুল্লা থানাধীন কুতুবাইল এলাকায় অবস্থিত প্যারাইডজ কেবল্স লিঃ এর শ্রমিক মোঃ আব্দুল মজিদ প্রশাসন শাখায় ক্লিনার হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করলেও অসুস্থ সময়ে কোন ধরনের কোন সুযোগ সুবিধা প্রতিষ্ঠান থেকে পাননি। বরং তার আইনগত ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন শ্রমিক আব্দুল মজিদ। ন্যায্য পাওনা আদায়ে এবং সুচিকিৎসার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে আবেদন দিয়েও কোন সুফল পাননি। অবশেষে বিদায় নিয়ে ১৭ এপ্রিল বুধবার সকাল সাড়ে ৮ টায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন। যার ফলে অন্যান্য শ্রমিকদের মাঝে দারুন ক্ষোভ দেখা দিলেও আব্দুল মজিদের পরিবারটি এখন অসহায় এবং নিরুপায় হয়ে পড়েছে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন এনায়েতনগর এলাকায় বসবাসরত মোঃ আব্দুল মজিদ মিয়া ২০০২ সালের ২৬ জুন কুতুবাইলের প্যারাডাইজ কেবল্স লিমিটেড কর্মস্থলে যোগদান করেন। তার সর্বশেষ বেতন ছিল সাড়ে ৮ হাজার টাকা। তিনি প্রতিষ্ঠানে সবসময় আন্তরিক হয়ে কাজকর্ম চালিয়ে গেছেন। বিগত ২০১৮ সালে ৩ মে শারিরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মোবাইল ফোনে এবং লোক মারফত প্রতিষ্ঠানের কাছে অসুস্থ্যতার সংবাদটি পৌছে দেন। ঐ সময় নারায়ণগঞ্জ খানপুরে ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে আব্দুল মজিদ চিকিৎসাধীন ছিলেন। দীর্ঘ এক মাস চিকিৎসা চালিয়ে ৬ জুন আবার কাজে যোগদান করতে গেলে কারখানার সুপারভাইজার ভুলুমিয়া কর্মস্থলে যোগদান করতে দেয়নি। বারংবার চেষ্টা করেও আব্দুল মজিদ ব্যর্থ হয়ে প্যারাডাইজ কেবল্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর বরাবর ১৩ আগষ্ট একটি লিখিতভাবে চাকুরীতে যোগদানের প্রত্যাশায় আবেদন করেন। সেই অনুলিপি নারায়ণগঞ্জ কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক এর বরাবর আরেকটি অনুলিপি প্রদান করেন। কিন্তু তারপরেও কোন সাড়া শব্দ না পাওয়ায় ১৮ সেপ্টেম্বর পরবর্তীতে উপ-মহাপরিদর্শকের বরাবর বকেয়া বেতনের জন্য টার্মিনেশন কারনে আইসঙ্গত যাবতীয় পাওনাদি আদায় প্রসঙ্গে একটি লিখিত আবেদন প্রেরণ করেন। কিন্তু অদ্যবধি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উক্ত বিষয়ে কোন সমাধান হয়নি। যার ফলে আব্দুল মজিদের পরিবারটি দীর্ঘদিন নিদারুন কষ্ট ও যন্ত্রনা নিয়ে দিনযাপন করেছেন। আর সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন আব্দুল মজিদ। চিকিৎসার অভাব তাকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে ইন্সপেক্টর মোঃ কামাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে মোবাইল ফোনে জানান, প্যারাডাইজ কেবল্স যেখানে অন্যান্য শ্রমিদেরই বেতন দিতে পারছে না সেখানে আব্দুল মজিদকে কিভাবে দিবে। তবে আব্দুল মজিদের আবেদনটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ঐ প্রতিষ্ঠান যখনই বেতন দিবে তখনই তাকে তার পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। উল্লেখ্য যে, ইন্সপেক্টর কামালকে নিয়ে শ্রমিকদের অনেক অভিযোগ রয়েছে। মালিক পক্ষের সাথে তার দহরম মহরম থাকায় কোন শ্রমিক ইন্সপেক্টর কামাল থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শ্রমিক নেতা ইকবাল হোসেন বলেন, প্রচলিত শ্রম আইনের মধ্য থেকে শ্রমিকের আইনী পাওনা ও ন্যায্য অধিকার আদায় করা খুবই কঠিন। আমাদের দেশে আইনের যথাযথ ব্যবহার না থাকায় শ্রমিকের জীবনে প্রতিনিয়ত সংকট নেমে আসছে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ আব্দুল মজিদ মিয়া, বেতন ভাতা ও শ্রম আইনগত পাওনাদি না পেয়েই বিনা চিকিৎসায় খাদ্য সংকটে মৃত্যুবরণ করলেন।
প্যারাডাইজ কেবল্স এর শ্রমিক নেতা রাসেল বলেন, আব্দুল মজিদ যদি সত্যিকার অর্থেই মারা যান তাহলে তার পরিবার পরিজন আসলে আমরা তার জন্য মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে যথেষ্ট সহযোগিতা করব।

বাদ আছর এনায়েতনগর জামে মসজিদে তার নামাজে জানাজা শেষে পাঠানটুলী পৌর কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৮:৫০পিএম/১৭/৪/২০১৯ইং)