• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন

নির্বাচন পদ্ধতির মৌলিক পুনর্বিন্যাস প্রয়ােজন : আজিজুল হুদা চৌধুরী সুমন


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ২৮, ২০২২, ১১:৪৪ AM / ৭২
নির্বাচন পদ্ধতির মৌলিক পুনর্বিন্যাস প্রয়ােজন : আজিজুল হুদা চৌধুরী সুমন

প্রেস বিজ্ঞপ্তি : বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাচনের পরেই জালভােট, ব্যালট বাক্স ছিনতাই,ভূয়া ভােট প্রদান, গােনা-গুনতিতে কারচুপি, শক্তি প্রয়ােগে প্রকৃত ভােটারদের ভােট প্রদানে বাধাদান ইত্যাদি হরেক রকমের অভিযােগ শােনা যায়। কিন্তু কেন
এমন হয়?এজন্যে নির্বাচনের ব্যবস্থাপনাকেই সচরাচর দায়ী করা হয়।কেবল কি ব্যবস্থাপনার ত্রুটির জন্যই এমনটি হচ্ছে? না-কি প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতির ভেতরেই কোন গলদ রয়েছে?

নির্বাচনের অর্থ যদি হয় দেশ শাসনের জন্য জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি বেছে নেয়া,তাহলে নির্বাচন যাতে ত্রুটিমুক্ত এবং যথার্থ হয় তার নিশ্চয়তা বিধান করা অত্যন্ত গুরুপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিতে হয়। প্রথমতঃ
জনপ্রতিনিধিত্বের ধরণটা কেমন হবে, অর্থাৎ নির্বাচন পদ্ধতি কোন ধরণের হবে তা ঠিক করা দরকার। দ্বিতীয়তঃ নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, অবাধ এবং ত্রুটিমুক্ত হয় সে দিকে লক্ষ্য রেখে নির্বাচনের ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নিচ্ছিদ্র প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করতে হবে।

একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের প্রশ্নে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলাের এভাবে মরিয়া হয়ে ওঠার জন্য দায়ী প্রচলিত ‘গরিষ্ঠ ভােট পদ্ধতি। যার অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে সংঘাতমূলক রাজনীতি।এই পদ্ধতিতে সামান্য ভােটের ব্যবধানে হেরে গিয়ে একটি ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে বহুদূরে ছিটকে পড়তে পারে। আবার ছলে-বলে-কলে-কৌশলে অন্যদের চাইতে বেশী ভােট সংগ্রহ করতে পারলেই একজন প্রার্থী একটি এলাকার দন্ডমুন্ডের কর্তা হয়ে বসতে পারেন-সামগ্রিক ভােটের ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ পেয়েও। অর্থাৎ,এই পদ্ধতিতে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে সকল পক্ষেই থাকে চরম ঝুঁকি। যা জন্ম দেয়
পরাজয়ের ভীতি জণিত প্রচণ্ড মানসিক অস্থিরতা। ফলে প্রাথীগণ এবং তাঁদের সমর্থকগণ হিতাহিত জ্ঞান শূণ্য হয়ে পড়েন এবং বিজয়লাভের জন্য নীতিবােধ পুরাে পুরি বিসর্জন দিয়ে বসেন।

নির্বাচন যদি প্রার্থীর ব্যক্তিগত মান-সম্মান বা বাঁচা-মরার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়,তাহলে এক্ষেত্রে কাউকে সংযত হবার উপদেশ দিয়ে কোন কাজ হবে বলে মনে হয় না।

এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে হলে নির্বাচন পদ্ধতির মৌলিক পুনর্বিন্যাস প্রয়ােজন আর তা হতে পারে কেবলমাত্র ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা গরিষ্ঠ ভােট পদ্ধতি ব্যবহার করছি ব্রিটিশ শাসনের উত্তরাধিকার হিসাবে। দেশের বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করে স্থানীয় প্রয়ােজনের নিরীখে।
এই ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেনি। ব্রিটিশ শাসনের প্রতি আমাদের প্রেম-ঘৃণা দৃষ্টিভংগীর কারণে গণতন্ত্রের তথাকথিত প্রতীক হিসেবে ওয়েষ্ট মিনিষ্টারের যে ভাবমূর্তি আমাদের চিন্তা-চেতনাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে তার ফলেই সম্ভবতঃ এই চরম অগণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থাকে আমরা বিনা-প্রতিবাদে এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছি।

এমনকি এই নির্বাচন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা, কিংবা বিকল্প নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে আলােচনা-পর্যালােচনা থেকেও আমরা এ যাবৎ বিরত থেকেছি। পৃথিবীতে বৃটেন এবং তার কলােনী সমূহ ছাড়া আর কোথায়ও হবহু এই ধরণের নির্বাচন পদ্ধতি প্রচলিত নেই এবং অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশ বহু পূর্বে এই পদ্ধতি বর্জন করে আনুপাতিক পদ্ধতি গ্রহণ করেছে।

এই তথ্যটি বােধ হয় আমাদের রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী মহলে ব্যাপকভাবে পরিজ্ঞাত নয়।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচন পদ্ধতির প্রশ্নটিকে একটি প্রধান জাতীয় রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে দেখা প্রয়ােজন। মনে রাখা দরকার ‘গরিষ্ঠ ভােট পদ্ধতি দ্বিমুখী রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে সহনীয় হলেও, ত্রিমুখী বা
বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অবশ্যম্ভাবীরূপে চিরস্থায়ী অস্থিতিশীলতার জন্ম দেয়। বাংলাদেশের রাজনীতিকে স্থিতিশীল দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সীমাবদ্ধ করার
সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন করেই কেবল বাংলাদেশে প্রকৃত জন প্রতিনিধিত্ব মূলক শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।