• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৪ অপরাহ্ন

না’গঞ্জে ইভটিজারদের অত্যাচারে এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা(ভিডিও)


প্রকাশের সময় : মার্চ ৬, ২০২৩, ৫:১৭ PM / ৪৯৫
না’গঞ্জে ইভটিজারদের অত্যাচারে এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা(ভিডিও)

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : এলাকার কিশোর গ্যাং এর অত্যাচারে অকালে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হলো লামিয়া আক্তার (১৫) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর। গত ১ লা মার্চ (বুধবার) নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার বক্তাবলী কানাইনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

লামিয়া একই এলাকার ‘কানাইনগর সোবহানিয়া স্কুল এন্ড কলেজ’ এর ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, কানাই নগর দক্ষিণ পাড়ার আব্দুর রহিম (৫৫) ও মৌসুমি বেগমের একমাত্র কণ্যা সন্তান মোছা. লামিয়া আক্তার (১৫) গত ১ লা মার্চ বুধবার এলাকার বখাটেদের রোশানলে পরে। সেদিন দুপুরে স্কুল থেকে ফেরার পথে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত প্রেমিক মাহিন ওরফে মোহনের সাথে বাড়ি ফেরার পথে এলাকার আওলাদ হোসেনের ছেলে আলামিন (২০), আনোয়ার হোসেনের ছেলে শাওন (১৮), প্রবাসী শফিকুলের ছেলে মেহেদী (১৭) ও প্রবাসী নাজিমুদ্দিনের ছেলে রনি(১৮) সহ প্রায় ১৫/১৬ জন ছেলে তাদের গতি রোধ করে ইভটিজিং, মারধর সেসবের ভিডিও ধারন সহ নানাভাবে তাদেরকে উত্যাক্ত করতে শুরু করে। পরবর্তীতে লামিয়া বাসায় ফিরলে তার মাকে এসে সেসব ইভটিজাররা মোবাইলে সেই ভিডিও দেখিয়ে তার মেয়েকে সাবধান করে দিতে হুশিয়ারি দিয়ে যায়। এ ঘটনায় তীব্র মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে লামিয়া তৎক্ষনাৎ তার রুমের সিলিং ফ্যানের সাথে উড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। মেয়ের মৃতদেহকে আর কষ্ট না দিয়ে দ্রুত দাফনের ব্যবস্থা করে বাবা মা ও আত্মীয় স্বজনরা।

এদিকে কাউকে কিছু না জানিয়ে দাফন করলেও, মৃত্যুর কয়েকদিন পর বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। লামিয়ার পরিবার বখাটেদের ভয়ে মুখ না খুললেও এলাকায় মৃত্যুর রহস্য নিয়ে গুঞ্জন শুরু হলে মা তার মেয়ের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে মুখ খুলেন।

লামিয়ার মা মৌসুমি বেগম বলেন- ‘‘ সেদিন লামিয়া স্কুল থেকে বাসায় আসার পর স্থানীয় প্রায় ১৫/১৬ জন কিশোর সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের বাসায় প্রবেশ করে এবং লামিয়া কোথায় জানতে চান। আমি এর কারন সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন আপনার মেয়েকে সাবধান করে দিবেন, ওর কিছু ভিডিও আছে আমাদের কাছে। আমরা এগুলো ফেসবুকে প্রচার করে দেবো। লামিয়ার মা কিসের ভিডিও দেখতে চাইলে তারা উত্তেজিত হয়ে লামিয়া সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের বাজে মন্তব্য করতে থাকে। লামিয়ার মা সমাজের লোক লজ্জার ভয়ে যুবকদের হাতে পায়ে ধরে কাকুতি মিনতি করে। কিশোররা বাসা থেকে বের হয়ে গেলে তিনি ঘরে প্রবেশ করে লামিয়াকে ডাকতে থাকলে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে অন্য রুমে ডুকলে দেখে লামিয়া তার গায়ে জড়ানো ওড়না ফ্যানে প্যাচিয়ে ঝুলে আছে। কোন উপায়ন্তর না দেখে সে লামিয়াকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে মাটিতে নামালে কিছুক্ষণ পরেই লামিয়া মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

মেয়ের এমন মৃত্যুতে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে প্রকৃত ঘটনার কিছু কাউকে না বলে তার মৃত দেহ দাফন করে দেন।’’

মৌসুমি বেগম আরও বলেন- ‘‘ছেলেগুলোর হাতে থাকা মোবাইলে আমি শুধু দেখতে পাচ্ছিলাম যে লামিয়া সেখানে বলছে- আপনারা আমাদের মারতেছেন কেনো, আর ভিডিও করতেছেন কেনো, কি সমস্যা আপনাদের। এর বাইরে আর কিছুই ছিলনা সেই ভিডিওতে।’’

লামিয়ার বাবা আব্দুর রহিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন- ‘‘লামিয়া আমার একমাত্র মেয়ে ছিল। আমার মেয়েকে লাঞ্ছিত করে যারা তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে, আমি তাদের শাস্তি চাই।’’

লামিয়ার এ অসাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান খান বলেন- ‘‘সে খুব ভালো ছাত্রী ছিলো। আমরা এমন মৃত্যু আশা করিনি।’’ তবে খোলা ময়দানে স্কুল পরিচালনা করে স্কুল কতৃপক্ষ বখাটেদের হাত থেকে মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কতটুকু দায়িত্ব পালন করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি।

বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শওকত আলী বলেন- ‘‘আমি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাশাপাশি এই স্কুল প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। আজ কদিন যাবৎ এই মেয়েটির মৃত্যুর বিষয় সম্পর্কে এলাকাবাসীর কাছ থেকে শুনছি। মেয়ের পরিবার থানায় অভিযোগ করেছেন। আমি চাই রহস্যের উন্মোচন করে প্রকৃত সত্যি বেরিয়ে আসুক। আর অপরাধী যেই হোক তার শাস্তি চাই। কেননা এই অপরাধীরা সমাজে ঘুরে বেরালে আমাদের সমাজের মেয়েরা নিরাপদভাবে লেখাপড়া করতে পারবে না।’’

এলাকার মেম্বার মো. রাসেল চৌধুরী বলেন- ‘‘এলাকার সবাই জানেন এসব বখাটে কারা এবং যতটুকু শুনেছি এরা এর আগেও লামিয়াকে নানাভাবে উত্যাক্ত করেছে। সুতরাং একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি চাই এদের মতো বখাটেদের শাস্তি হোক এবং আমার এলাকার মা বোনেরা নিরাপদে থাকুক।’’

এ বিষয়ে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।

এলাকাবাসীর দাবি- অতি দ্রুত দোষিদের গ্রেফতার করে যথাযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা করে এলাকার মা বোনদের নিরাপত্তা জোড়দার করা হোক। সেই সাথে লামিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে ভুলবশত লামিয়ার প্রেমিক (সেদিন ইভটিজারদের দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়া) মাহিন ওরফে মোহনকে ২ নং আসামী করা হয়েছে, যা অন্যায়। সুতরাং প্রকৃত ঘটনা জেনে নিরপরাধ মোহনকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

ভিডিও সংবাদটি দেখতে অপেক্ষা করুন-