• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন

নজরুলের আমি: সৃষ্টির চূড়ায় মানব-বিজয়-কেতন


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ২৯, ২০১৯, ১২:৪৭ PM / ৩২
নজরুলের আমি: সৃষ্টির চূড়ায় মানব-বিজয়-কেতন

 
গ্রীকজাতিসহ পৃথিবীর অনেক জাতিরই আদি ইতিহাস অতিপ্রাকৃতিক ও প্রাকৃতিক শক্তির কল্পকাহিনীতে বিশ্বাস স্থাপনের ইতহাস রয়েছে।
তবে গ্রীকরা বরাবরই বীরের জাত। তাদের নিজেদের ইতিহাস দেবতাদের মহিমার পাশাপাশি মানবীয় বীরত্বের গাঁথায়ও পরিপূর্ণ। বাঙালি জাতির নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় অতিপ্রাকৃত শক্তি এবং প্রাকৃতিক শক্তির কাছে তাকে বারবার মাথা নোয়াতে হয়েছে।

সে দেবতার পূজা করেছে; দেবতার অন্যায়কে মাথা পেতে নিয়ে তার কাছে নতি স্বীকার করেছে। বাংলা ভূভাগটা তুলনামূলকভাবে বেশি দুর্যোগপ্রবণ। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, কালবোশেখী, মহাবন্যা, খরা, নদীভাঙ্গন, দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর সঙ্গে তার পরিচয় অতি নিবিড়। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস বারবার কেড়ে নিয়েছে তার প্রিয় বসতবাটি, কালবোশেখী ভেঙ্গে ফেলেছে তার সংসারের বাতাবরণ, নদীভাঙ্গন করেছে তাকে সর্বস্বান্ত , দুর্ভিক্ষ আর মহামারীতে তার জনপদ হয়েছে উজাড়। বাঘ-ভালুক-বিষধর সাপ-কুমির বারবার কেড়ে নিয়েছে তার প্রাণ।

বেঁচে থাকার আকুতি তাকে করে তুলেছে অসহায়। অসহায় মন কল্পনা করেছে বহুবিধ দেবতার অস্তিত্ব। আর তাদের কাছে নিজের অসহায়ত্বেও কথা তুলে ধরে প্রার্থনা করেছে কৃপাভিক্ষা। সে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য সূর্যের পূজা করেছে; সে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার মানসে বরুণের পূজা করেছে; সে একটু ছায়ার জন্য বটবৃক্ষের পূজা করেছে; সে প্রাণ রক্ষার তাগিদে হিংস্র বন্যপ্রাণীর পূজা করেছে; সে মহামারীর হাত থেকে বাঁচার জন্য ওলাওঠা দেবীর পূজা করেছে; সে সাপের দংশন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মনসাদেবীকে পূজা দিতে বাধ্য হয়েছে; সন্তানের মঙ্গলকামনায় সে দুধেভাতের প্রার্থনায় নত হয়েছে; সে ভূতপ্রেতে বিশ্বাস করে ঝাড়ফুঁক আর পানিপড়ার আশ্রয় নিয়েছে। পীর-ফকির-পুরোহিতের ভূয়া কেরামতিকে সত্যজ্ঞান করে তাদের কাছে সন্তান প্রার্থনাসহ রোগ-ব্যাধি-সমস্যার সমাধান চেয়ে সবকিছু সঁপে দিয়েছে। সে প্রাকৃতিক শক্তি এবং অতিপ্রকৃত শক্তির কাছে নতি স্বীকার করতে করতে অন্তরেবাহিরে পরাজিত হয়ে গড়ে উঠতে অভ্যস্ত হয়েছে। একসময় যখন বহিরাগত মানবশক্তি এসে বাংলা ভূখণ্ডে জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ করেছে, তখন সে শক্তির কাছেও সে স্বভাবসুলভ পরাজয় গ্রহণ করেছে এবং অধীনতা মেনে নিয়ে নিজঘরে শাসিতের অধীনজীবন যাপন করেছে। এটা তার ততোটা মর্মবেদনার কারণও হয়নি। কারণ, সে ‘দাস্যসুখে হাস্যমুখ’ হয়ে বাঁচতে শিখেছে। তার রচিত সাহিত্যশিল্পেও বিভিন্ন শক্তির পায়ে নিজেকে স্বেচ্ছায় সমর্পণের ছবি ফুটে উঠেছে। শিল্পসাহিত্যে মাটির নিজস্বমানুষের অর্থাৎ নিজেদের জয়গান গাওয়ার বিষয়টি তার কাছে অকল্পনীয় থেকেছে যুগের পর যুগ, কালের পর কাল। বিরল ব্যতিক্রম ব্যতীত প্রেমগাঁথা বা যুদ্ধবৃত্তান্ত ‘সবখানেই নায়ক রয়ে গেছে অ-মানবীয় চরিত্র।

এমন ঐতিবাসিক-নৃতাত্ত্বিক-ভৌগৌলিক প্রেক্ষাপটে কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব। সাহিত্যের মঞ্চে আচমকা উঠেই তিনি ঘোষণা দিয়ে বসেন: “আমি চিরউন্নতশির”। সে শির হিমালয় ছাড়িয়ে, খোদার আসন আরশ অতিক্রম করে বিশ্ববিধাতার চিরবিস্ময় হয়ে উঠে গেছে সবার ওপরে, সবকিছুর ঊর্ধে। এবং তার নিজেকে এই চেনা হঠাৎ করেই:“আমি সহসা আমারে চিনেছি আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ।” এই চেনার কোনো পূর্বধারাবাহিকতা নেই, কোনো পরম্পরা নেই। তার আগে সে ছিল নানাবিধ শক্তির শেকলে বাঁধা; নানাবিধ প্রভুর কাছে কাছে নতজানু। নানাবিধ প্রভুর চরণতলে মাথা নত করাই ছিল তার নিত্যনিয়তি। তার গানে, তার কবিতায়, তার প্রার্থনায় সেসব অতিপ্রাকৃত ও বৈশ্বিক শক্তির কল্পকাহিনী ও স্তুতি সবটুকু স্থান জুড়ে থেকেছে। নিজেকে প্রশংসিত করার মতো কোনোকিছুই নিজের মধ্যে খুঁজে পায়নি। অথচ ব্যক্তিমানুষের ভিতরে রয়েছে অন্য সকল শক্তিতে বশে আনার শক্তি; সকল উচ্চতা অতিক্রম করে যাওয়ার উর্ধমুখি সামর্থ্য। পদার্থের ভেতরে লুক্কায়িত অণু-পরমাণু যেমন অপরিমেয় শক্তির আধার, তেমনি মানুষের ব্যক্তিত্বে ও মেধায় সুপ্ত রয়েছে প্রকৃতি জয় করার অমিত তেজ-শক্তি। প্রয়োজন সে শক্তির অনুসন্ধান এবং সময়োচিত উদ্বোধন। নজরুল ব্যক্তির সে শক্তির অগ্নি-উদ্বোধন ঘটালেন। আমিত্বের অগ্নিগিরির বিস্ফোরণ ছেয়ে ফেললো চারদিক; ঊদ্গীরিত লাভা ভীরুপ্রাণের পল্বলকে ভরে তুললো সামুদ্রিক-শক্তির পূর্ণতায়।

আর তার শিখা ছুঁয়ে ফেললো সাত আকাশের সর্বশেষ সীমা। সেখান থেকে চোখ মেলে ব্যক্তি দেখতে পেলেন: “শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির।” উদ্বোধিত আমি আপন শক্তিতে বিকশিত হয়ে চ্যালেঞ্জ করে বসলো এতদিন যাবৎ ভ্রান্ত উপাসনায় উপাসিত ভূয়া শক্তিকে, ভীত পূজায় পূজিত অলীক দেবতাকে। সে ঘোষণা দিয়ে বসলো: সে নিজেই দেবতা, নিজেই সাইক্লোন, নিজেই ঘূর্ণি, নিজেই টর্পেডো, নিজেই ভীম-ভাসমান মাইন। সে নিজেই প্রলয়ের নটরাজ, নিজেই মহামারী। অর্থাৎ সে নিজেই সকল শক্তির আধার। সে-ই বেদুঈন, সে-ই চেঙ্গিস এবং আপনাকে ছাড়া আর কাউকেই কুর্নিশ করা তার কাজ নয়। সে নিজেই শাসন-ত্রাসন সংহার। সে বিধির দর্পহারী। এতদিন যাবৎ যারা দেবতা আর শক্তি বলে সনাক্ত হয়ে আসছিল, যাদের অন্যায় আদেশ আর বিধিনিষেধ তামিলে তাকে থাকতে হতো নতজানু ও ব্যক্তিত্বহীন, তারা সবাই হয়ে গেল খারিজ। যে সাপের দংশনে সে ছিল প্রাণহারা, ভয়ে পূজো দিতে বাধ্য হয়েছিল যার দেবী মনসাকে, সেই বাসুকীর ফণা ধরে ফেললো সে। ধরে ফেললো দেবদূত জীবরাইলের আগুনের ডানাও। যে-দোজখের ভয় দেখিয়ে তাকে দাবিয়ে রাখা হতো, সেই হাবিয়া দোজখকে ফুৎকারে নিভিয়ে ফেলার শক্তি অর্জন করলো সে; জাহান্নামের আগুনকে তুচ্ছজ্ঞান করে সেখানে বসে ফুটিয়ে তুললো পুষ্পের হাসি। সে নিজের দিকে দৃষ্টি মেলে চিনে নিলো নিজেকে। যে-দেবতাদের ভয়ে তাকে তটস্থ থাকতে হয়েছে যুগের পর যুগ, কালের পর কাল, যে-মানবরূপী দানবেরা তাকে দাবিয়ে রেখোছিল পায়ের নিচে, সে দেখেতে পেলো তারা তার কাছে অতি তুচ্ছ; তারা মূলতঃ মেকি প্রভু। আর সে নিজেই মানব-দানব-দেবতার ভয়। কাজেই এখন থেকে আর সূর্যপূজা নয়; কারণ তার নিজেরই একহাতে সূর্য আর হাতে চাঁদ। সে ইচ্ছেমেতা এসব নিয়ে খেলা করতে পারে, প্রয়োজন মতো এদের সেবা আদায় করে নিতে পারে। সে নিজেই অগ্নিগিরি, অতএব অগ্নিগিরিকে তার ভয় পাওয়ার কিছুই নেই; সে নিজেই মহাপ্লাবন, কাজেই জলোচ্ছ্বাস বা সাইক্লোন অথবা এসবের মেকি দেবতা বরুণকে তার ভয় করার কিছুই নেই; সে যখন ইচ্ছে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে পারে বলে তাকে মরণের ভয় দেখিয়ে ঘরের কোণে বসিয়ে রাখতে পারবে না কেউ। এমনকি শশ্মানকেও সজীব করে তুলতে পারে সে। সে খেয়ালী বিধির বক্ষ চিরে দিতেও দুঃসাহসী হয়ে উঠলো। প্রকৃতির খেয়াল অর্থাৎ অদৃষ্টবাদিতায় হাতে সবকিছু সঁপে দিয়ে অসহায় হয়ে সে বসে থাকবে না আর। নিজের ভাগ্য সে গড়ে নেবে নিজেই; নিজের ভালমন্দ বেছে নিজেই। সে আরও দেখলো সে নিজেই সৃষ্টি, নিজেই ধ্বংস।

তাই কাউকেই তার পরওয়া করার কিছু নেই। আবার অন্যদিকে তার সৃষ্টির ক্ষমতাও তুলনাহীন। তার একহাতে রণতুর্য আর অন্যহাতে বাঁশি। সে গান গেয়ে পৃথিবীকে ভরে দিতে পারে সুরের সুধায়, সে প্রেমিক সেজে ভালোবাসায় ভরে তুলতে পারে মানব-মানবীর বুক; জলের বান হয়ে খরাকবলিত মাটিকে করে তুলতে পারে সজলউর্বরা; সে অর্ফিয়ূসের বাঁশি হয়ে সুরে সুরে নিভিয়ে দিতে পারে নরকের অগ্নিযন্ত্রণা; সে তার হাতের ছোঁয়ায় মরুভূমিকে করে তুলতে পারে পুষ্প-উদ্যান; সে অপমানিতের বুকের জ্বালা দূর করে সেখানে সৃষ্টি করতে পারে সুখ-সাচ্ছন্দ্যের গতি; সে প্রকৃতির মতো সচ্ছল বলে তার কোনো অভাব নেই। সে বিধাতার মতো নির্র্ভীক বলে তার কোনাকিছুকেই ভয় পাওয়ার কারণ নেই। সে জন্ম-স্বাধীন বলে কোনো দাসত্বের শেকলে বা ক্ষতিকর বিধিবিধানের বৃত্তে বন্দী থাকা তার স্বভাববিরুদ্ধ। সে সকল প্রকার শক্তির শির আর অদৃশ্যঅলৌকিক গতির ডানা পাকড়াও করতে পারে বলে কেউ তাকে ছাড়িয়ে যেতে সমর্থ নয়। পরশুরামের কুঠারের সমান তার যুদ্ধবিরোধী শক্তি; পৃথিবীকে যুদ্ধবাজদের কবল মুক্ত করতে তার সমকক্ষ আর কেই নেই। তার ক্লান্তি নেই, শ্রান্তি নেই চোখের সামনে যতক্ষণ না সুখশান্তির স্বপ্নের পৃথিবী গড়ে ওঠে স্থায়ী নিশ্চয়তায়। কোনো তুচ্ছ লোভের কাছে সে নিজেকে বিকোবে না, কারণ, তার রয়েছে মহৎ মহালক্ষ্য। কোনো পরাধীন সুখে সে তৃপ্ত থাকবে না। কারণ, স্বাধীনতাই তার জন্মসুখ। সে স্রষ্টার ফাঁকি আর সৃষ্টির চাতুরী ধরে ফেলেছে বলে সেসব লংঘন করে যেতে পারে নির্ভয়ে। এমনকি ‘ভূয়ো ঈশ্বর’ যা করতে পারেনি, সেই অসাধ্যও সাধন করতে পারে সে। তার হাতে যে শারীরিক শক্তির অনিঃশেস মজুদ সেটা যুদ্ধবাজ স্বার্থান্ধ অমানুষদের প্রতিহত ও পরাজিত করার প্রয়োজনে; তবে তার মূল শক্তি তার হৃদয়ে, তার মনে ও মননে। সে শক্তির কাজ হচ্ছে পৃথিবীকে প্রত্যাশিত মাত্রায় সকল প্রাণীর শান্তি পূর্ণ সহাবস্থানে বাসযোগ্য করে তোলা। ওই পৃথিবীর নেতৃত্বের পতাকা থাকবে মানুষের হাতে, অন্য কোনো প্রকৃতিক বা অতিপ্রাকৃতিক শক্তির খেয়ালী হাতে নয়।

নজরুলের আমি ইউরোপিয়ান ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের স্বার্থপর সংকীর্ণ আমি নয়; ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে সে অবাধ আদিম জৈবিক প্রবৃত্তি, সীমাহীন ব্যক্তিগত ধনলিপ্সা কিংবা বিবেকহীন ক্ষমতালিপ্সার দাস নয়। তার যৌনক্ষুধা-খ্যাতির বাসনা-অর্থের প্রয়োজনবোধ সবই আছে বটে, কিন্তু সে এসবের কোনোটিরও সে গোলাম নয়। আবার সমাজতন্ত্রের শৃঙ্খলিতপ্রাণ বিকাশরুদ্ধ-প্রাণীও নয় সে। সে সংসারবিমুখ প্রাচীন ভারতীয় সন্ন্যাসীর আমি নয়। তারও রয়েছে জৈবিক-মানসিক ক্ষুধা এবং উত্তম পন্থায় সে ক্ষুধা নিবারণে তার ইচ্ছা বা চেষ্টা। এই আমি ফ্রয়েডের জন্ম হতে মৃত্যু অবধি যৌনতার দাস আমিও নয়। তার যৌন ক্ষুধা রয়েছে; তবে একইসঙ্গে রয়েছে প্রেম-পিপাসাও।

যৌনক্ষুধা তার সবকিছুর পরিচালন-শক্তি নয়। সামাজিক দায়বোধ এবং মানবিক বিবেচনা তার কর্মপ্রচেষ্টার পেছনে মূল চালিকা-শক্তি। সে অদৃষ্টবাদী আমি-এর বিপরীত আমি। অতিপ্রাকৃত শক্তির করণাভিখারী সে নয়, সে নয় প্রকৃতির খাময়োলীর হাতে পরাজিত অসহায় অস্তিত্ব। প্রকৃতির বহুবিধ শক্তিকে জয় করে সে মহাশক্তিধর। সে আপন-আলোকে আপনার সামনে উদ্ভাসিত মহাসম্ভাবনাময় এক আলোকিত সত্তা। সে নিজেকে চিনেই চিনে ফেলেছে কে তার প্রভু, কে তা নয়; কোন্ কোন্ শক্তিকে বশ মানিয়ে নিজের কাজে লাগানোর চাবি তার নিজেরহাতে আর নিজবশে আনা যায় না এমন শক্তি প্রকৃতিতে কিংবা প্রকৃতির আড়ালে আদৌ আছে কি নেই। এই আমি সংকীর্ণ জাতীয়তাবোধে আক্রান্ত আমিও নয় যে আমি অন্যজাতিকে ঘৃণা করে কিংবা তাদের দাবিয়ে রাখার মানসে তাদের ওপর সাম্রাজ্যবাদী শোষণ কিংবা যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। সে অন্যায় যুদ্ধবিরোধী, সকল প্রকার লোভী আগ্রাসনের প্রতিরোধশক্তি।কিন্তু সে দেবতাও নয়; তারও রয়েছে মাটির মানুষের মনোদৈহিক চাহিদা, ক্লান্ত শ্রান্ত হওয়ার মানবীয় সীমাবদ্ধতা। নজরুলের এই আমি কোনো ক্ষুদ্র কালখন্ডে বা ভূগোলে, কোনো পার্টিকুলার নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্তায় বা ধর্মীয় বৃত্তে সীমায়িত আমিও নয়। নজরুলের আমি নিজের মধ্যে আত্মস্থ করেছে আন্তঃভৌগলিক পরিসর, ত্রিকালীয় মহাগভীরতা, বহু ধর্ম-পুরাণ-কিংবদন্তীর সস্কৃতির উত্তরাধিকার এবং সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধবাজদের কবল হতে মুক্ত (নিঃক্ষত্রিয়) করে শোষণ-নিপীড়ন-বঞ্চনামুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার মহামানবীয়-সর্বমানবীয় সর্বজনীন অঙ্গীকার:“আমি বিশ্ব-তোরণে বৈজয়ন্তী, মানব-বিজয়-কেতন।” নজরুলের হাতে উদ্বোধিত ও উন্মোচিত ‘আমি’ বিচারবুদ্ধিপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠতম মানবগোষ্ঠীর আলোক-উদ্ভাসিত প্রতিনিধি।

(প্রতিকৃতি: আনিস মামুন)
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/কেএস/১২:৪৬পিএম/২৯/৮/২০১৯ইং)