• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৭:২২ পূর্বাহ্ন

দ. ভোলায় পর্যটনের অপার সম্ভাবনা, দুয়ার খুলবে পদ্মাসেতু


প্রকাশের সময় : জুন ২৭, ২০২২, ৮:৪৪ PM / ৪৫
দ. ভোলায় পর্যটনের অপার সম্ভাবনা, দুয়ার খুলবে পদ্মাসেতু

রিপন শান : স্বপ্নবাস্তবের পদ্মাসেতু চালুর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় উপজেলা চরফ্যাশনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবার বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন বোদ্ধামহল ।
কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ খ্যাত ভোলা জেলার চরফ্যাসন উপজেলার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক অঞ্চল চরকুকরিমুকরি, ঢালচর, পাতিলার চর, বেতুয়াঘাট, বাবুরহাট খামারবাড়ি, তারুয়া সৈকত ঘিরে এমনিতেই সৌন্দর্য পিয়াসী পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণ বছরজুড়ে বিরাজমান থাকে । দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ওয়াচ টাওয়ার জ্যাকব টাওয়ার, শেখ রাসেল ডিজিটাল শিশু পার্ক, বেতুয়া প্রশান্তি পার্ক আর খামারবাড়ি রিসোর্টের সুনাম ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে দেশময় ।

এতদিন যোগাযোগ ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে পিছিয়ে ছিল এখানকার পর্যটন খাত। পদ্মাসেতুকে ঘিরে এখন নৈসর্গিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ এ
অঞ্চলকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করতে চলছে নানা সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ। পূর্বে মেঘনা আর পশ্চিমে তেঁতুলিয়া নদী। দক্ষিণ-পশ্চিমে বুড়াগৌরাঙ্গ, দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। সাগর মোহনার দ্বীপ চর উপজেলা চরফ্যাশন। নীলাকাশ, নীলাভ জল, সবুজ বন, রূপালী ইলিশ, দুরন্ত হরিণ, পাখির ঝাঁক, মহিষের বাথান, কালো ভোঁদর-সবই শোভা বাড়িয়েছে এখানকার প্রকৃতির। এখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। শঙ্খচিল আর মেঘ ছুয়ে যাওয়া বলাকাদের ডানাঝাপটে দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছুটে চলা এবং মেঘনার অসীম জলরাশি আর নদীর ঢেউয়ের দোলায় চিকমিক করা বালি কণা ছুঁয়ে দেখতে যে কারো মন ছুটে আসবে চরফ্যাশনের মেঘনার পাড়ে খেজুরগাছিয়ার মিনি কক্সবাজারে। বিচে বন্ধুদের সঙ্গে একটু প্রশান্তি খুঁজতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পর্যটকদের ভিড় পড়ে যায় ঈদ পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে। এতদিন ওই অঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক পর্যটকদের পছন্দের পর্যটন কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও ভ্রমণে আগ্রহ ছিল কম। পদ্মা সেতুর ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত চরফ্যাশন উপজেলার পর্যটন আকর্ষণগুলোতে ভ্রমণে আগ্রহ বাড়বে।
অন্যদিকে বেতুয়ায় মেঘনার পাড়ে গড়ে ওঠা প্রশান্তি পার্কের রেস্টিং বেঞ্চ, বেতুয়া কায়াকিং পয়েন্ট আর গোলঘরসহ নদীর কিনারায় রেলিং ধরে চা ও কপি’তে চুমুক দিয়ে জলের আলতো ঢেউয়ে শত শত চিলের মাছ শিকারের চিত্র দেখতেও মন্দ লাগবে না কারুর। বেতুয়ায় ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর বাস্তবায়নে নির্মিত বেড়িবাঁধের ঢালে ঘুরতে আসছে শত শত পর্যটক। নদীপথে যাতায়াতের কারণে অনেকে আবার আসতে চায় না। চরফ্যাশন শহরে আছে জ্যাকব টাওয়ার, শেখ রাসেল স্কয়ার শিশুপার্ক। জ্যাকব টাওয়ারে উঠলে মনে হবে আকাশের কাছে অবস্থান, পুরো উপজেলা আপনার চোখের সামনে। সবুজের ছাদ। নীল আর সবুজের মাঝে প্রসারিত দৃষ্টি। সবুজ আকাশ পেরিয়ে নদীর রেখা। মেঘনা নদীর মাঝ দিয়ে সাগরমোহনার ভাসানচর পর্যন্ত থেকে থেকে চর। এসব চরে শীতে আসে পরিযায়ী পাখি। ২২৫ ফুটের উচ্চতায় ১৬ তলাবিশিষ্ট জ্যাকব টাওয়ার পরিদর্শন করেই পর্যটকদের গন্তব্য থাকে বঙ্গপোসাগরের কুলঘেঁষে জেগে ওঠেছে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট কুকরি-মুকরি সী-বিচে। চরফ্যাশন থেকে বাস, মাইক্রো কিংবা মোটরসাইকেলে যেতে হবে কচ্চপিয়া ঘাট। সেখান থেকে ট্রলার, স্পিডবোট কিংবা লাইনের লঞ্চে কুকরি-মুকরি ম্যানগ্রোভ বনে যাওয়া যাবে। এ বনে হরিণ ছাড়াও নানারকম বন্যপ্রাণী এবং নদীতে ডলফিন জাতীয় ভোঁদর দেখা যাবে। মনে হবে সুন্দরবন। চারদিকে শত-সহস্রাধিক পাখির ডাক। খালে নৌকার দুই পাশে মাছের ঝাঁক সাঁতরে যায়। এ বনে আছে নারকেল বন, বিস্তীর্ণ বালিয়ারি বিচ। বন ফুল। বালুর চরে এক দৌড়ে ক্ষুধা লেগে যাবে। বেসরকারি সংস্থার লোকজন মাঝে-মধ্যে ছাতা বসিয়েছে পর্যটকদের একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য। কুকরি-মুকরির কেওরা ও ম্যানগ্রোভ বনে রয়েছে ২৭২ প্রজাতির উদ্ভিদ, চিত্রা হরিণ, বানর ও বুনো মহিশ সহ ৪৫ প্রজাতির প্রাণী এবং প্রায় ২০৯ প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশের মালদ্বীপ খ্যাত প্রকৃতির এ স্বর্গরাজ্যে পর্যটকদের জন্য রয়েছে রেস্টিং বেঞ্চ, ঝুলন্ত সেতু, জিপ ট্রাকিং, মাকরশার জাল, চাইনিজ রেস্তোরাসহ হোম স্টে সার্ভিস। এ কুকরি-মুকরি থেকেই যে কেউ আরও দক্ষিণের ঢালচর যেতে পারেন। ঢালচরেই আছে তাড়ুয়া সী-বিচ। নদীপথে, সবুজ বনের খালের দুই পাশে আপনার সঙ্গী হবে নানা রকম হাঁস, বক, পানকৌড়ি, হটটিটি আর মাছরাঙ্গা জলচর পাখিরা।

শীতের সাগর মোহনা আর মেঘনা-তেঁতুলিয়ার জল শান্ত-স্বচ্ছ। হাত ডোবালে হাতের রেখা দেখা যায়। রাতের চাঁদ, দিনের সূর্য এই নীল জলের বুকে পড়ে ঝিলিক মারে। কিছু দূর যেতে না যেতে সবুজ দ্বীপ এখানে।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বিনোদনের পর্যাপ্ত সুযোগ ও পর্যটক আকর্ষণে আরও বহুমাত্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাহলে কুকরি-মুকরি ও তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত এবং খেজুরগাছিয়াসহ বেতুয়া প্রশান্তি পার্কের পর্যটন এলাকা থেকেও সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট বোদ্ধাগণ।

চরফ্যাশন সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সভাপতি কবি কায়সার আহমেদ দুলাল বলেছেন, একসঙ্গে অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চরফ্যাসন উপজেলা একটি অসাধারণ জায়গা। তবে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ার পরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা গেলে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে অন্যান্য জায়গার তুলনায় চরফ্যাসন উপজেলা কোনো অংশেই কম হবে না। এমনকি এই উপজেলাকে ঘিরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠতে পারে একটি এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন।

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমানের ভাষ্য- চরফ্যাশনের উপকূলীয় অঞ্চলকে বিনোদনের অবকাঠামোয় গড়ে তোলার জন্য উপকূলীয় অঞ্চলকে সম্ভাবনাময় পর্যটনের দ্বারপ্রান্তে নিতে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। ইতোমধ্যে নানানরকম বিনোদনমূলক স্থাপনা নির্মাণ চলছে। এছাড়া কুকরি-মুকরি ও তারুয়া সমুদ্র সৈকতকে ইকো টুরিজমের আওতায় আনা হচ্ছে। আরযেহেতু স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হয়েছে, কাজেই দ্বীপজেলা ভোলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চরফ্যাশন উপজেলা পর্যটন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আশা করছি ।

ভোলা দক্ষিণ প্রেসক্লাব এর সাধারণ সম্পাদক ও চরফ্যাসন প্রেসক্লাব এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবি শহিদুল ইসলাম জামাল জানান- গত ২৫ জুন ২০২২ বাংলাদেশের জনগণমননন্দিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদ্মাসেতুর মহাউদ্বোধনের পর চরফ্যাসনের আপামর মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌন্দর্যের লীলাভূমি চরফ্যাসন পর্যটন খাতে বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়ে জাতীয় আয়ে ব্যাপক অবদান রাখবে বলে দৃঢ়বিশ্বাস এলাকার সচেতন মানুষের ।