• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন

তিনদিন ব্যাপী পুলিশ কনফারেন্সে পারষ্পরিক সহযোগিতায় জঙ্গি দমনের অঙ্গীকার


প্রকাশের সময় : মার্চ ১৪, ২০১৭, ৯:১২ PM / ৫২
তিনদিন ব্যাপী পুলিশ কনফারেন্সে পারষ্পরিক সহযোগিতায় জঙ্গি দমনের অঙ্গীকার
  • স্টাফ রিপোর্টার

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসসহ আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনের অঙ্গীকার গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হলো তিনদিন ব্যাপী চিফ অব পুলিশ কনফারেন্স। ১৪ দেশের পুলিশ প্রধান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে গত রবিবার থেকে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে শুরু হওয়া এই সম্মেলন গতকাল মঙ্গলবার শেষ হলো। ইন্টারপোল ও বাংলাদেশ পুলিশের যৌথ উদ্যোগে ঢাকায় প্রথমবারের মতো এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তিনদিন ব্যাপী এই সম্মেলন শেষে বেশ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো। তিন দিনব্যাপী বৈঠকে বাংলাদেশ বেশ কিছু দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেছে। সম্মেলনটি শেষ হয়েছে একটি যৌথ ঘোষণার মধ্য দিয়ে।

সম্মেলন শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র ডেপুটি মিনিস্টার আব্দুল রহমান, অষ্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশের সিনিয়র লিঁয়াজো অফিসার স্টুয়ার্ট ডেভিড অ্যালেন, রয়্যাল ভুটান পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ প্রধান নিংরা ওয়াংদি ও রয়্যাল ব্রুনাই পুলিশের অ্যাসিসট্যান্ট পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হাসান আহমেদ। বিবৃতিতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পুলিশের পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করে সহিংসতা ও সীমান্তে সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন করা হবে। এজন্য পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

‘চিফ অব পুলিশ কনফারেন্স অব সাউথ এশিয়া অ্যান্ড নেইবারিং কান্ট্রিস অন রিজিওনাল কো-অপারেশন ইন কার্ভিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম’ শীর্ষক এই সম্মেলনে আরও বলা হয়, চারটি উদ্দেশ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সন্ত্রাস দমনের লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে সম্পকোন্নয়ন এবং অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি, সীমান্তে সংঘবদ্ধ অপরাধ ও সহিংসতা রোধে সম্মিলিত কৌশল তৈরি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঝে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্র তৈরি করা, সন্ত্রাস মোকাবিলায় একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্মে সবাইকে একত্রিত করা। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বর্তমান বিশ্ব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই অঞ্চল ও বিশ্বের অন্যান্য সংস্থাগুলোরও এই সমস্যা মোকাবিলায় একত্রিত হওয়া প্রয়োজন।

সম্মেলনে ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জেনারেল উপস্থিত ছিলেন। আরও ছিলেন আফগানিস্তান, অষ্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা। এছাড়া ফেসবুক ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই), যুক্তরাষ্ট্রের আইজিসিআই, আসিয়ানপোলসহ বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ মোট ৫৮ জন বিদেশি অতিথি অংশগ্রহণ করেন।

সম্মেলনে কাউন্টার ভায়োলেন্ট টেরোরিজম, মানব পাচার, মাদক চোরাচালান, অস্ত্র পাচার বিষয়ক অপরাধের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। শেষ দিনে বিভিন্ন দেশের পুলিশ প্রতিনিধি, বাংলাদেশ পুলিশ ও ইন্টারপোল একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এজন্য সন্ত্রাস মোকাবিলায় সবাই একই কৌশল অবলম্বন করবেন বলে জানান। এনসিবি ও ইন্টারপোলের সদস্যদের সঙ্গে সরসারি যোগাযোগ করা হবেও বলেও সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

এছাড়া ইন্টারপোলের আওতায় এই অঞ্চলের পুলিশ প্রধানদের নিয়ে একটি ফোরাম গঠন করার বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সন্ত্রাস দমনে তথ্য আদান-প্রদানসহ সব ধরনের সহযোগিতার জন্য একটি প্রযুক্তিগত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। এই আইটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশ তাদের সীমান্তে সংঘটিত অপরাধ থামাতে তথ্য সরবরাহ করবে। নিজেদের মধ্যে ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাব ও প্রশিক্ষণেরও সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারেও একমত হয়েছে অংশ নেওয়া দেশগুলো। এই ফোরাম বিশ্বের অন্যান্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে এবং সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিংসহ অন্যান্য অপরাধ মোকাবিলা করা হবে। সন্ত্রাসী হামলার পরবর্তী পদক্ষেপ বিষয়ে অভিজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে পরিকল্পনা তৈরি করা হবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।

সম্মেলনের অনুষ্ঠান শেষে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতায় সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো ‘ওয়ান টু ওয়ান কমিউনিকেশনে’র (সরাসরি যোগাযোগ) ব্যাপারে একমত হয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের তথ্য বিনিময়ের পাশাপাশি, এক দেশের জঙ্গি অন্য দেশে লুকিয়ে থাকলে তাকে হস্তান্তরে দেশগুলো কাজ করবে। এক প্রশ্নের জবাবে এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘মিয়ানমার এর আগে কখনো আমাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। এবারই প্রথম তারা সাড়া দিয়েছে। মাদক সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সাক্ষরে আগ্রহ দেখিয়েছে।’ মিয়ানমার ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও চীন সমঝোতা স্মারক সাক্ষরে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান তিনি।

এসএস/ক্যানি