• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১২:০২ পূর্বাহ্ন

ডুবে গেছে নওগাঁর ৬ উপজেলার পাকা ধান


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৭, ২০১৭, ১২:০২ AM / ৫২
ডুবে গেছে নওগাঁর ৬ উপজেলার পাকা ধান

 

ঢাকারনিউজ২৪.কম, নওগাঁ : নওগাঁয় কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়ায় ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি, শিলা ও ঝড় বাতাসে ধানের গাছগুলো মাটি আর পানিতে একাকার হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে জেলার কয়েকটি বিলের হাজার হাজার বিঘা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরের খাবার যোগাতে আধাপাকা ধান কেটে বাড়িতে আসছে কৃষকরা। এতে করে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তবে জেলার কৃষি বিভাগ বলেছে, ফসলের ক্ষতি হলেও ফলনের তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে জেলায় কি পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নিরূপণ করতে পারেনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪৬২ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমি অর্জিত হয়েছে। তুলনামূলক কমছে ধানের আবাদ। পানির স্তর দিন দিন কমে যাওয়ায় ফলে স্বল্প সময়ে ও স্বল্প পানিতে ফসল উৎপাদনে কৃষকদের রবি শস্যের প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে। ফলে ধানের আবাদ এ বছর কমে যাওয়ায় বৃদ্ধি পেয়েছে রবি শস্য।
সরজমিন জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র কয়েকদিন আগেও সোনালী ধানে ছেয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ। কৃষকদের বুক ভরা আশা, কয়েকদিন পর মাঠের ফসল ঘরে তুলবে কিন্তু কৃষকদের সেই আশাই যেন গুড়ে বালি হয়েছে কালবৈশাখী ঝড়, আর সাথে হালকা শিলাবৃষ্টি। সেই সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ধান ক্ষেতে জমেছে পানি। বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে ক্ষেতের কাঁচা, আধাপাকা ও পাকা ধানগাছগুলো মাটিতে শুয়ে পড়ে একাকার হয়ে গেছে।
উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে জেলার ছাতরা, আন্দরসুরা, বিল মুনসুর, হালতি, দিঘলী ও চলন বিলের আংশিক এলাকায় রোপণ করা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল এখন পানির নিচে। এছাড়াও টানা বৃষ্টিতে জেলার আত্রাই, রাণীনগর, মান্দা ও মহাদেবপুর, বদলগাছি ও সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ধানের ক্ষতি হয়েছে। ধান পরিপুষ্ট হয়ে পাকার আগেই মাটিতে পড়ে যাওয়া ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই ধান কাটতে হচ্ছে কৃষকদের। সময়ের আগে ধান কাটার ফলে ফলনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তারা। আবহাওয়ার এই অবস্থায় একই সাথে মাঠে ফসল কাটার শ্রমিকও সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে বেশি দামে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে কৃষকদের।
নওগাঁ সদর উপজেলার চকগ্রাণ গ্রামের কৃষক কামরুজ্জামান বলেন, ৪ বিঘা জমিতে আঠাস ধানের আবাদ করেছি, বাতাসের কারণে ধান গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে জমিতে এক হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যাওয়ায় পড়ে যাওয়া ধান গাছ পানিতে ভাসছে। প্রতি বিঘায় প্রায় ৪/৫ মণ ধান কম হবে। জিরা ও আঠাস ধান লম্বা হওয়ার কারণে বাতাসে মাটিতে পড়ে গেছে। আবহাওয়া খারাপের কারণে ২/৩ দিন আগেই কাঁচা ধান কেটে নিলাম। এছাড়া শ্রমিকও সংকট। তিন বেলা খাবার দিয়ে জনপ্রতি ৩৫০-৪৫০ টাকা মজুরি দিতে হয়েছে। মজুরি আরো বাড়তে পারে।
মান্দা উপজেলার ছাতরা বিল এলাকার কৃষক কেরামত আলী জানান, টানা বৃষ্টি আর ঢলের পানিতে বিলের ৫ থেকে ৬ হাজার হেক্টর বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এই ধান আমাদের বাঁচা মরার সম্বল। কয়েকদিন পরেই ধান কাটা-মাড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তার আগেই ধান তলিয়ে গেছে। এখন আধাপাকা ধান কেটে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তাতে শ্রমিক না থাকায় সেটাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে কিছু পরিমাণ জমিতে বোরো ধান হেলে পড়েছে। এখন বোরো ধান পাকা ও শক্ত অবস্থায় আছে। আশা করা যায় ফলনের তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করছি ৮০ ভাগ ধান পেকে গেলে অতিসত্বর তারা যেন ধান কেটে ঘরে তোলে।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১২:০০এএম/২৭/৪/২০১৭ইং)