• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:১৭ অপরাহ্ন

জয়পুরহাটে ‘জিবিএস’ রোগে ৫ জনের মৃত্যু : আক্রান্ত আরও ১০


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২৯, ২০১৮, ৮:১০ AM / ৬৫
জয়পুরহাটে ‘জিবিএস’ রোগে ৫ জনের মৃত্যু : আক্রান্ত আরও ১০

এস এম শফিকুল ইসলাম, জয়পুরহাট : জয়পুরহাটে গত দেড় মাসে নতুন রোগ “গুলেইন বারী সিনড্রোম” (জিবিএস) রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১৫ জন। এদের মধ্যে ইতোমধ্যে মারা গেছেন পাঁচ জন। হঠাৎ করে নতুন এ রোগে আক্রান্তদের মৃত্যু নিয়ে জেলাজুরে দেখা দিয়েছে সর্বত্র আতঙ্ক। এ রোগের কারণ জানতে মাঠ পর্যায়ে দিনে-রাত কাজ করছেন ঢাকা মহাখালির রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনষ্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ৫ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতা সম্পূর্ণ একটি মেডিকেল টিম। তবে এ রোগ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই এমন দাবি সিভিল সার্জনের।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জিবিএস রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর হাত-পাসহ সারা শরীর অব্স হয়ে যায়। এরপর দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট এবং পরের ধাপেই মৃত্যু। তবে জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডাইরিয়ায় অনেকে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে হাতুরে ডাক্তার বা ঝাঁড়ফুঁক দিয়ে রোগ ভাল করার চেষ্টা করেন। অথচ এ সকল সাধারণ রোগ বা উপসর্গ থেকেই হতে পারে প্রাণঘাতি এক রোগের, যা “গুলেইন বারী সিনড্রোম” নামে পরিচিত। এ রোগ সর্ম্পকে অনেক মানুষই জানেনা।
এলাকাবাসীর দাবি, শুধু সতর্কের পরামর্শ নয়, প্রকৃত কারণ উদঘাটন সহ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি এ রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার মাষ্টারপাড়ার রাব্বির ছেলে জেএসসি পরীক্ষার্থী মারুফ হোসেন (১৪) এবং সদর উপজেলার মাধাইনগর সুকানপুকুর গ্রামের সোবহানের ছেলে তাহমিদ জামান (২৩) জিবিএস রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৩ নভেম্বর মারা যায়। এরপর জেলা সমাজ সেবা অফিসের কর্মচারী আক্কেলপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামের হেলাল উদ্দিন (৫৫) এ রোগে আক্রান্ত হয়ে এক দিন পর গত ৭ নভেম্বর মারা যায় হাসপাতালে। আবার ৯ অক্টোবর মারা যায় সদর উপজেলার বারিধারা মহল্লার পিজুস কুমার সাহার স্ত্রী পিংকি রাণী সাহা (২২), ২৭ অক্টোবর মারা যায় সদর উপজেলার দড়িপাড়া গ্রামের ইমাম বক্সের ছেলে আব্দুল হাকিম (৫২)। এ ছাড়া এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও দশ জন রোগী। তারা হলেন, জয়পুরহাট শহরের সবুজ নগর মহল্লার মুনছুর আলী শাহিনের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম, সদর থানা পাড়ার দীপক চাকীর মেয়ে বনশ্রী চাকী, পাঁচবিবির দমদমা গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে জিয়াদ হাসান, সদরের সাহেবপাড়ার দিলদার হোসেন, সদর থানা এলাকার খলিলুর রহমানের স্ত্রী নাজমুন নাহার ফেন্সি, সদরের হানাইল গ্রামের ওসমান গনির ছেলে বজলুর রশিদ ও সদরের দোগাছী শিমুলতলী গ্রামের রোমানের ছেলে নাফিউল।
৯ থেকে ১০ লাখ টাকা চিকিৎসা বাবাদ ব্যায় করেও পরিত্রান পাচ্ছেনা এ রোগ থেকে। সুস্থ্য হওয়ার নিশ্চয়তা পাচ্ছে না আক্রান্ত রোগীরা। আবার অর্থাভাবে চিকিৎসাও নিতে পারছেনা অনেকেই। এ পর্যন্ত যারা মোটা অংকের অর্থ যোগান দিয়ে চিকিৎসা করেছেন তাদের মধ্যে অনেক পরিবারই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ফলে নতুন এ রোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের দিন কাটছে দু:চিন্তায়।
জয়পুরহাট শহরের সাহেবপাড়ার দিলদার হোসেন জিবিএস রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে এ রোগের লক্ষণ ও বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কথাও জানালেন নিহত মারুফের বাবা রাব্বি হোসেন এবং গৃহবধু পিংকি রাণীর স্বামী পিজুস কুমার।
জয়পুরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ হাবিবুল আহসান তালুকদার রেজা বলেন, জিবিএস রোগ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে বরং সর্তক থাকতে হবে আমাদের। ঢাকা থেকে আগত মেডিকেল টিম এ রোগের উৎস বা কারণ অনুসন্ধানে আক্রান্ত রোগীদের রক্ত, মল, গলা ও নাকের সর্দি-কফ নুমনা হিসেবে সংগ্রহ করেছেন। এ রোগ সংক্রামক বা ছোঁয়াচে নয় এবং আক্রান্ত ব্যাক্তিকে দ্রুত চিকিৎসা দিলে ভাল হয় বলেও জানান তিনি।
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/৮:১২এএম/২৯/১১/২০১৮ইং)