• ঢাকা
  • সোমবার, ১৭ Jun ২০২৪, ০২:২৬ অপরাহ্ন

‘জিনের বাদশা’ সেজে নারীদের সর্বনাশ করত ভন্ড পীর


প্রকাশের সময় : জুন ১, ২০১৮, ৯:৩৬ AM / ৬১
‘জিনের বাদশা’ সেজে নারীদের সর্বনাশ করত ভন্ড পীর

ঢাকারনিউজ২৪.কম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটবাউর এলাকায় জিনের বাদশা হিসেবে পরিচিত কথিত এক পীরের ধোঁকাবাজিতে পড়ে নারী ও সাধারণ মানুষ তাদের সম্মান, টাকা-পয়সা, গরু-বাছুরসহ সবকিছুই খোয়াচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।

কথিত এই জিনের বাদশা্র নাম তাহের আলী (৫৭)। তার বাড়ি সদর উপজেলার ভাটবাউর গ্রামে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের আদালতে বিচারপ্রার্থী হিসেবে সাক্ষী দিতে আসা ১৯ বছরের গৃহবধূ মিতু আক্তারের ওপর নাকি জিনের বাদশা তাহের পীর ভর করেছেন।

বিচারের সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ কথিত ওই পীর সেখানে উপস্থিত হন। তখন পীরের চোখ পড়ে ওই নারীর দিকে। তাকে দেখেই ওই নারী সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে এবং ছটফট করতে থাকেন। সুস্থ মানুষ অস্বাভাবিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় গ্রামীণ আদালতে উপস্থিত সবার ভেতর কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। এ খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা। এরপর বেরিয়ে আসতে থাকে কথিত ওই পীরের কুকীর্তির নানা কথা।

তাহের আলীর প্রধান টার্গেট থাকে গ্রামে যাদের বিয়ের পর সন্তান হয় না, এমন নারীদের প্রতি। অভিযোগকারীর একজন লুৎফর রহমান। লুৎফর একসময় ওই পীরের প্রতি গভীর বিশ্বাস করতেন। সে সুবাদে তার শিষ্য হয়েছিলেন। বছর আড়াই হলো লুৎফর রহমান বিয়ে করেন সুন্দরী মিতু আক্তারকে। বিয়ের পর সরল মনে স্ত্রীকে পরিচয় করিয়ে দেন তাহের আলীর সঙ্গে। এতেই ওই গৃহবধূর দিকে দৃষ্টি পড়ে তাহেরের।

লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি খুব বিশ্বাস করতাম তাহের আলী পীর সাহেবকে। আমার স্ত্রীর সন্তান হচ্ছিল না। তখন পীরের কাছে নিয়ে যাই। তখন পীর আমাকে জানিয়ে দিলো তোর স্ত্রী বন্ধ্যা। সে সন্তান লাভ করতে পারবে না। তোর স্ত্রীকে একা  আমার কাছে (পীরের) পাঠিয়ে দিবি। তারপর বিষয়টা দেবো।

পীরের কথায় সরল মনে স্ত্রীকে তার কাছে পাঠাই। সেখান থেকে এসে আমার স্ত্রী আমাকে বলে, তোমার ওই পীর লোক ভালো না।’

স্বামী লুৎফর রহমান স্ত্রীর কাছে বিষয়টি জানার চেষ্টা করলে তার স্ত্রী জানান, তাহের আলী পীর বলে দেয় সে কখনোই মা হতে পারবে না। বন্ধ্যা। তবে উপায় একটা আছে। যদি পীরের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে, তবেই গর্ভে সন্তান আসবে। আর এ কথা যেন কেউ না জানে। এ কাজটা জিন দ্বারা করতে হবে।

লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমার স্ত্রী যখন এসব কথা আমাকে বলে সেদিন থেকে ওই পীরের সঙ্গে আমি কথা বলা এবং তার বাড়িতে আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেই। এতে সে আমার এবং আমার স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সময় কুফরি কালাম দিয়ে আমার স্ত্রীকে অসুস্থ করে তোলে। ওই পীরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে আমি চেয়ারম্যানের আশ্রয় নেই। বিচার চাই তার কাছে। বিচারে সাক্ষী দিতে এলে সে আমার স্ত্রীকে কুফরি করে জবান বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়। পরে পুলিশের সহায়তায় স্ত্রীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করি।’

ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘ভণ্ড পীর আবু তাহের কুফরি কালাম জানে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে সহজ-সরল মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়। কলেজে ভর্তি ও চাকরির কথা বলে মানুষজনের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেয়। এ ছাড়া নারীলোভী ওই পীর অনেক নারীর সর্বনাশ করেছে। আমার একটি গরু ও বাছুরকে কুফরি কালাম দিয়ে হত্যা করেছে।’

দিঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিন মোল্লা বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দিঘি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম্য আদালতে ভণ্ড পীরের বিরুদ্ধে বিচারের আয়োজন করা হয়।

এতে প্রমাণিত হয় তাহের আলী একজন ভণ্ড পীর। এলাকার অনেক নারী তার লালসার শিকার হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, চাকরি, জেল থেকে জামিন, কলেজে ভর্তি, রোগ সারিয়ে দেয়াসহ নানাভাবে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা-পয়সা ও নারীদের ইজ্জত লুটে নিত।

এসব অভিযোগ ফৌজদারি হওয়ায় গ্রাম্য আদালতে বিচারবহির্ভূত। উত্তেজিত এলাকার লোকজন একপর্যায়ে তাই ওই ভণ্ড পীর তাহেরকে গণপিটুনি দেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে আটক করেন।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনা জানার পর ভণ্ড পীর তাহের আলীকে আটক করে থানায় আনা হয়। এরপর লুৎফর রহমান নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ওই ভণ্ড পীরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। সে এখন জেলহাজতে।’

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/৯:৩৫এএম/১/৬/২০১৮ইং)