• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন

জঙ্গিরা বোমা বানাতে চোরাই পথে আনা বিস্ফোর ব্যাবহার করছে


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২২, ২০১৭, ২:২৬ PM / ৭৫
জঙ্গিরা বোমা বানাতে চোরাই পথে আনা বিস্ফোর ব্যাবহার করছে

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

ও ডিনামাইটের মতো মরণঘাতী বিস্ফোরক। যার অধিকাংশ উপাদান বিদেশি। সরকারি নীতিমালা না মেনে এসব বিস্ফোরক তৈরির উপাদান চোরাই পথে আনা হয়েছে। পরে এসব দিয়েই সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গিরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বোমাসহ বিভিন্ন মরণঘাতী বিস্ফোরক তৈরি করছে।

অনুমোদন ছাড়া চোরাই পথে আনা বিস্ফোরক কিংবা উপাদান দিয়ে দেশে বোমা তৈরির ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়বদ্ধতা বেশি বলেও দাবি করেছে বিস্ফোরক অধিদফতর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা  বলেন, বিগত পাঁচ মাসে রাজধানীতে শক্তিশালী বোমার পাঁচটি চালান এসেছে। প্রতি চালানে পাঁচ-ছয়টি করে বোমা ছিল। গত ১৭ মার্চ আশকোনায় র্যা বের ব্যারাকে এবং বিমানবন্দর সড়কের গোল চত্বরের কাছে বিস্ফোরিত বোমা ও নিহত যুবকের ট্রলিব্যাগ থেকে উদ্ধার করা বোমার ধরন একই। এসবের সঙ্গে সীতাকুণ্ডের জঙ্গি আস্তানায় একই ধরনের উপাদানে তৈরি বোমা পাওয়া গেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বোমার চালান নিয়ে বাসে ঢাকায় আসার পথে গত ৭ এপ্রিল কুমিল্লায় গ্রেফতার হয় নব্য জেএমবির সদস্য আহমেদ আজওয়াদ। রিমান্ডে সে পুলিশকে জানায়, ইতোমধ্যে সে বোমার দুটি চালান ঢাকায় পৌঁছে দিয়েছে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দাবি করেন, অন্তত কয়েক দফায় বেশ কয়েকটি বিস্ফোরকের চালান এসেছে রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায়।

র‌্যাব সূত্র জানিয়েছে, গত ১৭ মার্চ আশকোনায় তাদের ব্যারাকে হামলাকারী একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় আরেকটি তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়। পরদিন রাজধানীর খিলগাঁওয়ে র‌্যাবের তল্লাশি চৌকির সামনে সুইসাইডাল ভেস্ট পরে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় আরেক যুবক।

২৪ মার্চ সন্ধ্যার দিকে বিমানবন্দর সড়কের গোল চত্বরের কাছে বোমা বিস্ফোরিত হয়ে মৃত্যু হয় এক জঙ্গির। পরে তার ট্রলিব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় আরও তিনটি শক্তিশালী বোমা।

ঘটনার পর কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিহত যুবকের ব্যাগে তিনটি ও শরীরে একটি বোমা ছিল। ওই যুবক বোমা নিয়ে বিমানবন্দরের ভেতরে যেতে চেয়েছিল।

Explosive

র‌্যাব ও পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নব্য জেএমবির সুইসাইডাল স্কোয়াডের সদস্যরা এসব বোমার বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে।

গত বছরের ২ নভেম্বর রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে আবু তাহের (৩৭), মিজানুর রহমান (৩৪), সেলিম মিয়া (৪৫) ও তৌফিকুল ইসলাম ওরফে ডা. তৌফিক (৩২) নামে নব্য জেএমবির চার সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে গ্রেনেড তৈরির মূল উপকরণ ৭৮৭টি ডেটোনেটর, একটি নাইন এমএম বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

সে সময় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জানায়, রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার অস্ত্র ও বিস্ফোরকের চালান এসেছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে। মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান ওরফে ছোট মিজানসহ একজন ভারত সীমান্ত থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহ করে তামিম চৌধুরী ও মারজানের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল।

সম্প্রতি দেশব্যাপী নব্য জেএমবির হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গ্রেনেড এসব ডেটনেটর ও জেল দিয়ে তৈরি। গ্রেফতারকৃতরা চোরাচালানের মাধ্যমে এগুলো নিয়ে আসত।

সর্বশেষ সিলেটের আলোচিত ‘আতিয়া মহলে’ অভিযান চালাতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পারে ওই ভবনে প্রবেশের প্রতিটি গেটে শক্তিশালী বিস্ফোরক লাগানো ছিল। এছাড়া ভবনের নিচে বাঙ্কারে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও গোলাবারুদসহ বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অবস্থান করছে জঙ্গিরা। পরে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামে অভিযান চালায় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা।

ওই অভিযান চলাকালে জঙ্গিরা একাধিক গ্রেনেড ও শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। যদিও কমান্ডো বাহিনী ২৮ মার্চ সফলভাবে অভিযান শেষ করে। তবে অভিযানের মধ্যেই জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহল’র কিছুটা দূরে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন মোট সাতজন। গুরুতর আহত র্যা বের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল আজাদও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

যোগাযোগ করা হলে বিস্ফোরক অধিদফতরের প্রধান পরিদর্শক মো. শামসুল আলম  বলেন, ডিনামাইট ও ডেটোনেটরের মতো বিস্ফোরক সরকার ও সরকার কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কারও আমদানির সুযোগ নেই। তবুও বিভিন্ন স্থান থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে উদ্ধার হচ্ছে বিস্ফোরক ও বোমা। এসব চোরাই পথে আনা বলে দাবি করেন তিনি।

মো. শামসুল আলম বলেন, পটাসিয়াম ক্লোরাইড, সালফার, আর্সেনিক সালফাইডের মতো বিস্ফোরক উপকরণ বাজারে বিক্রির অনুমতি নেই। ট্যানারি ও দেয়াশলাই কারখানায় এগুলো ব্যবহার করা হয়। এসব আমদানির জন্য দেশের মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অনুমোদিত। অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমদানি করতে চাইলে তাকে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে।

Explosive

তিনি বলেন, পটাসিয়াম ক্লোরাইড ল্যাবরেটরিতে অক্সিজেন তৈরির কাজে লাগানো হয়। আর সালফিউরিক অ্যাসিড ব্যবহৃত হয় টায়ার তৈরির কারখানায়। তবে এসব দিয়ে বোমাসহ বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরক তৈরি করা সম্ভব। যেমন- পটাসিয়াম ক্লোরাইড দিয়ে গানপাউডার যা বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

তিনি আরও বলেন, ডেটোনেটর পাথর ভাঙার কাজে ব্যবহার হলেও তা দিয়ে বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক বোমা তৈরি সম্ভব। সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গিরা এসব ব্যবহার করে বোমাসহ আত্মঘাতী বিস্ফোরক তৈরি করছে।

এসব দেখভালের দায়িত্ব কার -জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাজীপুরে একটি পটাসিয়াম ক্লোরাইড তৈরির কারখানা রয়েছে। তা দেখভালের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। এছাড়া বিস্ফোরক অধিদফতর হচ্ছে এক্সপার্ট ডিপার্টমেন্ট। বিস্ফোরক উদ্ধার কিংবা বিপথে ব্যবহারকারী সন্ত্রাসীদের ধরার কাজ আমাদের নয়। এ কাজ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর।

উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকগুলো দেশি না বিদেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গত আড়াই বছরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হওয়া পাঁচ শতাধিক বিস্ফোরক সম্পর্কে এক্সপার্ট অপিনিয়ন (বিশেষজ্ঞ মতামত) নিয়েছি। বেশিরভাগই ডেটোনেটর ও ডিনামাইটের মতো মরণঘাতী বিস্ফোরক। যার অধিকাংশই চোরাই পথে আনা। তবে বোমা, ককটেল কিংবা সুইসাইডাল ভেস্টগুলো দেশেই তৈরি।

জঙ্গিদের ব্যবহৃত বোমা এবং জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা বিস্ফোরক বিদেশ থেকে আমদানি করা নাকি দেশের ভেতর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জঙ্গি আস্তানার বিস্ফোরক দেশ থেকেই সংগ্রহ করা। এসব বাইরে থেকে আনার প্রয়োজন হয় না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জঙ্গিরা আলাদাভাবে এসব সংগ্রহ করে নিজেরাই বোমাসহ মরণঘাতী বিস্ফোরক তৈরি করছে।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম ০২.১৯পিএম/২২//২০১৭ইং)