• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪:০৪ অপরাহ্ন

ছন্নছাড়া আবাহনী!


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২২, ২০১৭, ৮:২৭ AM / ৪৩
ছন্নছাড়া আবাহনী!

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

এএফসি কাপে তিন ম্যাচ খেলেও ঢাকা আবাহনী পয়েন্টশূন্য। আগামী তিন ম্যাচে হয়তো খুলবে পয়েন্টের খাতা। কিন্তু তাতেই-বা কী যায় আসে, গাণিতিকভাবে সম্ভাবনা ক্ষীণ থাকলেও বাস্তবতা বলছে কঠিন সত্য কথা—আবাহনী কখনোই এএফসি টুর্নামেন্টের দল নয়।

এবার দারুণ সম্ভাবনার জায়গায় দাঁড়িয়েছিল আবাহনী। গত জানুয়ারিতে সমাপ্ত লিগে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, জিতেছে ফেডারেশন কাপ। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে দলটাও ব্যালান্সড ছিল। কিন্তু এএফসি কাপ আসতে আসতেই সেই চ্যাম্পিয়ন দল ভাঙা হাটে রূপ নিয়েছে। সর্বশেষ বেঙ্গালুরু এফসির বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচটি খেলে এসে দলের লেফট ব্যাক ওয়ালী ফয়সালের উপলব্ধি, ‘আমাদের এর চেয়ে ভালো খেলার সুযোগ নেই। মিডফিল্ড না থাকলে একটা দল খেলবে কী করে। দুই মিডফিল্ডার ফাহাদ আর ইমন বাবু ইনজ্যুরড। এখন তাদের জায়গায় খেলছে দুই ডিফেন্ডার রায়হান ও ইয়াসিন। মাঝমাঠে আমরা বলই রাখতে পারি না, প্রতিপক্ষ দ্রুত উঠে আসে আমাদের ডিফেন্স সীমানায়। ’ আতিকুর রহমান ফাহাদের হাঁটুর অপারেশন হয়েছে, ইমন বাবু প্রথম ম্যাচ খেলার পর গোড়ালির ব্যথায় মাঠের বাইরে। মাঝমাঠে আছে শুধু সোহেল রানা, চট্টগ্রাম আবাহনী থেকে আসা এই মিডফিল্ডার দুই ডিফেন্ডারকে নিয়ে একাই লড়ছেন মাঝমাঠে। একটি দলের জন্য এটা বিশাল ঘাটতি, ওখান থেকে ভালো ফাইনাল পাস বের হচ্ছে না ফরোয়ার্ডদের জন্য।

ওয়ালীর হিসাবে এটা দাঁড়াচ্ছে একদম নতুন দল, ‘গত মৌসুমে আমাদের যে দল ছিল, সেটি থাকলে এ টুর্নামেন্টে দারুণ খেলত আবাহনী। একটি দল থেকে পাঁচজন নিয়মিত খেলোয়াড় চলে গেছে। দুই গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি লি টাক ও সানডে নেই। একদম নতুন দল নিয়ে আমরা এএফসি কাপে খেলছি। ’ লিগ শেষে চট্টগ্রামে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ টুর্নামেন্ট শেষেই নীল-আকাশি ছেড়ে গেছেন জুয়েল রানা, তপু বর্মণ, হেমন্ত ভিনসেন্ট, আরিফুল ইসলাম ও শাকিল আহমেদ। এঁদের পাশাপাশি অ্যান্ড্রু লি টাক ও সানডে চিজোবাকে হারাতেই বিশাল ক্ষতি হয়েছে। ইংলিশ প্লেমেকার লি-ই ছিলেন মাঝমাঠের জ্বালানি। খেলা নিয়ন্ত্রণ করা, ফাইনাল পাস বাড়ানো ও ফ্রিকিক—সব কাজের কাজি এই প্লেমেকার। তাঁর সঙ্গে নাইজেরিয়ান স্কোরার সানডের জুটিই ছিল আবাহনীর সাফল্যের আসল রসায়ন। এই দুই বিদেশির সঙ্গে ওই পাঁচ দেশি হাতছাড়া হওয়ায় বদলে গেছে চ্যাম্পিয়ন দলের চেহারাও। সানডের জায়গা নিয়েছে নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার এমেকা ডার্লিংটন। ওয়েলসের ফরোয়ার্ড জোনাথন ডেভিড ও ঘানাইয়ান ডিফেন্ডার সামাদ ইউসিফ ছিল আগে থেকেই। কিন্তু সামাদ থেকেও নেই, পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া মোহনবাগানের ম্যাচ খেলতে যেতে পারেননি, তারপর পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়িয়ে ঢাকায় ফিরেও শেষ মুহূর্তে ভিসা না পেয়ে মিস করেছেন বেঙ্গালুরু এফসির ম্যাচ। এ নিয়ে অনেকে দুষেছেন টিম ম্যানেজমেন্টকে। দলের মিডফিল্ডার প্রাণতোষ পারিবারিক কারণে স্কোয়াডে না থাকলেও তাঁর বিশ্লেষণে আবাহনী পিছিয়ে পড়েছে বিদেশি কোটা পূরণ করতে না পারায়, ‘বিদেশি কোটা চারজন হলেও শেষ দুই ম্যাচে আমরা খেলাতে পেরেছি মাত্র দুজন। এখানেই তো আমরা পিছিয়ে পড়েছি। ’ এফসি কাপে একজন এশিয়ান বিদেশি কোটার ফুটবলারসহ চার বিদেশি খেলানোর নিয়ম আছে। এই নিয়মটাও আবাহনী ম্যানেজার সত্যজিত্ দাস রূপু ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেননি বলে এই কোটায় কাউকে নিতেও পারেনি তারা। এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। অথচ এএফসি কাপ শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে এই ম্যানেজারের গলায় বেশ আশা শোনা গিয়েছিল।

কিন্তু ইতিহাস বলছে, এএফসির টুর্নামেন্টে আবাহনীর স্বপ্ন দেখাই যে বারণ। আগে তারা প্রায়ই এএফসি প্রেসিডেন্টস কাপ খেলত। তুলনামূলক কমজোরি দলের বিপক্ষেই খেলা, এর পরও নীল-আকাশির ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি। একবার-দুইবার নয়, পাঁচবার বিদায় নিতে হয়েছিল এএফসির এই টুর্নামেন্টের প্রথম পর্ব থেকে। এবারও এএফসি কাপে গ্রুপের প্রথম তিন ম্যাচ হেরে নাজুক অবস্থায় আছে। একটি বিদেশের মাটিতে হলেও দুটি ম্যাচ ‘হোমে’ আছে। পয়েন্টের মুখ দেখলেও তা হয়তো পরের রাউন্ডে ওঠার জন্য যথেষ্ট হবে না। আসলে এএফসির টুর্নামেন্টকে ঘিরে তাদের যথেষ্ট আন্তরিকতা এবং প্রস্তুতি থাকে কি না, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। এটা ক্লাব কর্মকর্তাদের ভাবায় কি না কে জানে। ঘরের মাঠে তাদের অজেয় কিছু নেই। পাঁচবার পেশাদার লিগসহ অনেক টুর্নামেন্টে জয়ের কীর্তি আছে তাদের। কিন্তু ঘরের মাঠের সেরারা পারেনি ‘আন্তর্জাতিক দল’ হয়ে উঠতে!

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম ০৮.২৬এএম/২২//২০১৭ইং)