• ঢাকা
  • বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন

চীনের নৌ ও বাণিজ্য ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা নাম ‘জেং হে’


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৫, ২০১৯, ৫:১২ PM / ৩৬
চীনের নৌ ও বাণিজ্য ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা নাম ‘জেং হে’

 

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : চীনের বাণিজ্য সম্পর্কে আমাদের সবারই কম বেশি ধারণা আছে। বিশেষ করে আধুনিককালের বাণিজ্য। বলা হয়ে থাকে সুই থেকে বিমান সব কিছুই উৎপাদন করে চাইনিজরা। চীনের বাণিজ্য ইতিহাসে যাদের অবদান অনস্বীকার্য তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন একজন নাবিক। ছয়শ বছর আগে ওই নাবিক সাতটি সমুদ্র অভিযান পরিচালনা করে বিখ্যাত হয়ে আছেন। মূলত চাইনিজ পণ্য ও গৌরব বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন বাজারে ছড়িয়ে দিতে তৎকালীন মিং রাজবংশ বেছে নিয়েছিলেন বন্দী জেং হেকে। যার অধীনে ছিল মূল্যবান মালামাল বোঝাই করা সবজাহাজ। তার পরিচালিত বাণিজ্যে অন্যতম প্রধান দুই পণ্য ছিল সিল্ক ও পোরসালিন বা চীনা মাটির তৈরি তৈজসপত্র। একসময়ের রাজবন্দি জেং হে পরিচালিত সমুদ্র অভিযানের পর চীন পরিণত হয় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী নৌশক্তিতে। এ লেখার আমরা জানবো চীনের নৌ ও বাণিজ্য ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা এ নাবিক ও তার অভিযান সম্পর্কে।

মজার বিষয় হলো চীনের সেরা নাবিক জেং হে বেড়ে ওঠেন পাহাড়ী এলাকায় সমুদ্রের ধারে নয়। চীনের ভবিষৎ নৌসেনাপতি জেং জন্মগ্রহণ করেন ১৩৭১ খ্রিষ্টাব্দে এক সম্ক্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তখন তার নাম ছিল ‘মা হে’। মা’র ছেলেবেলা কাটে মঙ্গল রাজবংশ নিয়ন্ত্রিত পাহাড়-পর্বত বেষ্টিত ইউনান প্রদেশে। সেসময় ওই এলাকা থেকে নিকটবর্তী বন্দরে পৌঁছাতে সময় লাগতো কয়েক মাস। মা যখন ১০ বছরের বালক তখন চাইনিজ বাহিনী মঙ্গলদের উৎখাত করে ইউনান দখল করে নেয় । ওই অভিযানে বাবা-মাকে হত্যা করে মা হেকে বন্দি করে নিয়ে যায় চাইনিজ বাহিনী। আর বন্দি হবার দিন থেকেই মা’র জীবনের নদী উল্লেখযোগ্য বাক নিতে শুরু করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে মা’র পরিচয় একসময় পাল্টে যায়, তিনি হয়ে উঠেন চাইনিজ নৌখাতের উল্লেখযোগ্য এক ব্যক্তিতে।

ইউনান প্রদেশ থেকে আটক করা কিশোরদের অনেককেই তৎকালীন রীতি অনুযায়ী খোঁজা করে মিং সাম্রাজ্যের ভবিষৎ সম্রাট জহু দি’র দরবারে পাঠানো হয়। যাদের মধ্যে ছিলেন মা হে। পরের কয়েক দশকের মধ্যে মা নিজেকে রাজপুত্রের ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত এক সেবকে পরিণত করেন। ওই সময় মা নিজেকে দক্ষ করে তোলেন যুদ্ধকৌশল, কুটনীতিসহ রাষ্ট্রকৌশলের বিভিন্ন দিকে। কারো কারো মতে সাত ফুট লম্বা গভীর ও ভারী কণ্ঠের অধিকারী মা ছিলেন প্রভাব বিস্তারকারী এক ব্যক্তিত্ব। একসময় সুযোগ পেয়ে বেইজিংয়ের নিকটবর্তী জেনগলুনবাতে সংগঠিত যুদ্ধে অবদান রেখে মা তার যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন । ১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহন করেন জহু দি। যুদ্ধ জয়ে অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ মা হে’র নতুন নামকরণ করা হয় ‘জেং হে’ নামে। জেং সম্রাটের সেবা করা অব্যহত রাখেন। যার ফলশ্রুতিতে একসময় চীনের সমচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজকীয় নৌবাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন। তার অধিনায়কত্বে চালানো হয় সাতটি নৌ অভিযান।

চাইনিজ নাবিকদের শত বছরের সমুদ্র বিচরণের ধারাবাহিকতায় জেং হে সমুদ্র অভিযানগুলো পরিচালনা করেন। আজকের সাংহাইয়ের কাছের এক বন্দর থেকে যাত্রা করেছিল জেং হের প্রথম অভিযানের জাহাজগুলো। তাদের গতিপথ ছিল পূর্ব চীন সাগর হয়ে জাপান অভিমুখে। মালবাহী জাহাজগুলোতে চাল, চা, ব্রোঞ্জের পাশাপাশি থাকতো বিভিন্ন কৌশল দক্ষতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ধারণা যেমন ক্যালিওগ্রাফি আর্ট, কনফুসিয়াজম এবং বুদ্ধিজম।

১১ শতকেই চাইনিজরা একাধিক পালের জাহাজ, রাডার ও পানিনিরোধক কম্পার্টমেন্ট (যার ফলে সমুদ্রে থাকা অবস্থাতেই ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ মেরামত করা সম্ভব হতো) উদ্ধাবন করতে সক্ষম হয়। সেসময় দক্ষিণ চীন সাগর পারি দিতে চীনের নাবিকরা কম্পাস ব্যবহার করতো। তখন সমুদ্রে চাইনিজদের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল আরবীয়রা যারা মূলত ইন্ডিয়ান ওসান বা চাইনিজদের ভাষায় ওয়েস্টার্ন ওসান এলাকায় বিভিন্ন ধরনের বিলাস দ্রব্য বাণিজ্যে প্রধান্য বিস্তার করতো। চীনের বিশালাকার বাণিজ্য জাহাজগুলো পূর্ব চীনের উপকূল ছেড়ে মালাক্কা প্রণালী পার হয়ে প্রতিদ্বন্ধী আরব জাহাজের মুখোমুখি হতো।

যদিও সং রাজবংশ ৯৬০-১২৭৯ খ্রিষ্টাব্দ সময়কালে সাজ-সরঞ্জামপূর্ণ এক নৌবাহিনীর গঠন করে। তবে সাগরে দুর্দান্ত এক নৌশক্তিতে পরিণত হতে চাইনিজরা ১২শতক পর্যন্ত সময় নেয়। ১১২৭ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ সং রাজবংশ উত্তর চীনে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারায় সেই সঙ্গে হারায় সিল্ক রোড ব্যবহার এবং পারস্য ও ইসলামী বিশ্ব থেকে সম্পদ আরোহনের সুযোগ। দক্ষিণ দিক হতে সরে আসতে বাধ্য হয়ে তারা নতুন রাজধানী স্থাপন করে কিয়ানতাং নদীর মুখে অবস্থিত বন্দর নগরী হাংজওতে। বিখ্যাত বণিক, লেখক মার্কো পলো ১২০০ শতকের দিকে তার লেখায় এ বন্দরের কথা উল্লেখ করেছেন।

শতাব্দিকাল সময় যাবত সং রাজবংশ জলপথের আধিপত্য ধরে রাখতে লড়াই করে যার ফলস্বরুপ নদীপথে তারা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়। পরে জলপথের ওই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সং রাজবংশ নৌবাহিনী গঠন করে। তবে মঙ্গল সম্রাট পরাক্রমশালী কুবলাই খানের দাপটের সঙ্গে পেড়ে উঠার মতো শক্তিশালী ছিল না সং সাম্রাজের নব গঠিত নৌবাহিনী। ১২৭৯ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ কুবলাই খান সং সাম্রাজের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। একই সঙ্গে গড়ে তোলে সত্যিকার অর্থেই সমীহ জাগানো এক নৌশক্তি। সেসময় লক্ষ লক্ষ নতুন গাছ রোপন করা হয়, নির্মাণ করা হয় নতুন শিপইয়ার্ড ।পরে সেসব গাছের কাঠ দিয়ে জাপান, ভিয়েতনাম এবং জাভা আক্রমনের জন্য কুবলাই হাজার হাজার জাহাজ নির্মাণ করেন।

কুবলাই খান নৌবাহিনীর আক্রমনের মাধ্যমে ওসব দেশ দখল করতে ব্যর্থ হলেও জাপান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রপথে নিজেদের আধিপত্য অর্জন ঠিকই করে নেয় চীন। মঙ্গলরা তখন নৌবাণিজ্য ও নৌভ্রমণের অগ্রগামিতাকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যায় যেমনটা তার আগে ইতিহাসে দেখা যায়নি। এদিকে ভূমিতে মঙ্গলদের জয় করা এলাকাগুলোতে ক্রমাগত বিদ্রোহ, অন্তর্দ্বন্ধের কারণে কোন স্থায়ী সরকার গঠন করা যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে ১৩৬৮ সালে চীন জুড়ে একদশকের বিদ্রোহের পর মঙ্গল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। ক্ষমতা আরোহণ করে মিং রাজবংশ। প্রথম সম্রাট হোং ওয়ু চীনকে প্রভাবশালী নৌশক্তি হিসেবে দেখতে চাইলেও নৌবাণিজ্যে বিবিধ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তিনের বেশি মাস্তুল ব্যবহার করলে মৃত্যদন্ডের বিধান রেখে ডিক্রি পর্যন্ত তিনি জারি করেন। মিং রাজবংশের তৃতীয় সম্রাট ইয়োগেল দক্ষিণ সাগর ও ভারত মহাসাগরে চীনা আধিপত্য বিস্তারের জোর দিলেও ব্যক্তিগত নৌবাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞার মাত্রা আরো বৃদ্ধি করেন। তার শাসনামলে ভিয়েতনাম দখল করার পাশাপাশি মালাক্কা প্রণালীর নিয়ন্ত্রণ নেয়া হয়। যার ফলে ভারত মহাসাগরের প্রবেশ পথে চীনাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে চীনের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারত মহাসাগরের যোগসূত্র স্থাপনকারী বাণিজ্য নৌপথে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে শক্তিশালী এক নৌবাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সম্রাট। পরিকল্পনা মতো গড়ে তোলা হয় নৌবাহিনী, যার নেতৃত্ব দিতে বেছে নেয়া হয় জেং হেকে।

জেং হেকে কখনো কখনো একজন অনুসন্ধানকারী হিসেবে বর্ণনা করা হয়। কিন্তু তার সমুদ্রঅভিযানের কোনটিই কোন কিছু অনুসন্ধানের উদ্দেশে করা হয়নি । সং রাজবংশের সময়ই চীনারা পৌছে গিয়েছিল সুদূর ভারত, পারস্য উপসাগর ও আফ্রিকা পর্যন্ত। মূলত তার অভিযানগুলোর উদ্দেশ্য ছিল চীনের ভেসেল স্টেটগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুসংহত করা এবং প্রধান প্রধান পণ্য যেমন ঔষধ, গোলমরিচ, সালফার, টিন ও ঘোড়ার রপ্তানি নিবিঘ্ন করা। ১৪০৫ থেকে ১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মোট ৭টি বিশালাকার অভিযান পরিচালনা করেন। তার প্রথম অভিযানের নৌবহরে জাহাজসংখ্যা ছিল ২৫৫টি। যাদের মধ্যে ৬২ টি ছিল মূল্যবান রপ্তানি পণ্যে ঠাসা। মালামাল ভর্তি বড় আকারের ওই জাহাজগুলোকে ম্থানীয়ভাবে বলা হতো বাউচুয়ান। আর মাঝারি আকারের জাহাজগুলোকে বলা হতো মাচুয়ান যেগুলোতে বহন করা হতো ঘোড়া আর অন্যান্য আকার আকৃতির জাহাজ বহন করতো নাবিক, সৈনিক এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের। ওই অভিযানে কর্মকর্তাদের সংখ্যা ছিল ৬০০। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিল চিকিৎসক, জোত্যিবিদ এবং মানচিত্রকার।

জাহাজগুলো নানজিং, হাঙ্গজওহু সহ চীনের অন্যান্য প্রধান প্রধান বন্দর ছেড়ে দক্ষিণের ফুজিয়ানে আসে। সেখান থেকে জাহাজে উঠে দক্ষসব নাবিক ও খালাসিরা। তারপর অল্পকিছু দিন আগে দখল করা ভিয়েতনামের কুইনহোন এলাকায় সব জাহাজ একত্রিত হয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে সাত অভিযানে কোনটির গন্তব্যই উত্তরমুখী ছিল না। অধিকাংশই জাভা ও সুমাত্রার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। পথে জাহাজগুলো মালাক্কা প্রণালীতে যাত্রা বিরতি দেয়। পশ্চিমের গন্তব্যে পৌঁছতে সহায়ক হবে তাই তারা সেখানে আসন্ন শীত মৌসুমের বাতাসের জন্য অপেক্ষা করে। তারপর তারা সিলনের (আজকের শ্রীলঙ্কা) উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। সেখান থেকে আসে দক্ষিণ ভারতের কালিকটে। প্রথম তিন অভিযাত্রার সমাপ্তি টানা হয়েছিল এই কালিকটেই। তবে চতুর্থ অভিযাত্রায় মা পারস্য সাগরের হরমুজ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। সর্বশেষ অভিযানে মা তার নৌবহর নিয়ে পশ্চিমের আরো গভীরে গিয়ে রেড সিতে প্রবেশ করেন, তারপর সেখান থেকে বাক নিয়ে চলে যান সুদুর কেনিয়া বা আরো দুরে কোথাও। মধ্যযুগের সবচেয়ে বিখ্যাত মানচিত্রকর্ম ইতালির মানচিত্রকার ফা মাউরো মানচিত্র যা ১৪৫০ সালে প্রথম তৈরি করা হয়। জেং এর সর্বশেষ অভিযানের ২৫ বছর পর ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ফা মাউরোর তৈরি করা এক মানচিত্রে ক্যাপশানে দেখা যায় ১৪২০ খ্রিষ্টাব্দে চীনের জাহাজগুলো বাতাসের স্বল্পতার কারণে মোড় ঘুড়িয়ে আনার আগ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ অব গুড পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল।

সেসময় চাইনীজ জাহাজগুলো তাদের আকারের জন্য আলোচিত ছিল। জেং হের একশত বছর আগে মার্কো পোলো তৎকালীন জাহাজ সম্পর্কে ধারণা দেন: সেগুলো ছিল চার থেকে ছয় মাস্তুলের জাহাজ। প্রতি জাহাজে থাকতো ৩০০ জন নাবিক, ৬০টি ক্যাবিন এবং বণিকদের জন্য ডেক। ১৪ শতকে চার মাস্তুলের প্রথম চাইনিজ জাহাজ ছিল মাললোরকা দ্বীপের‘কাতালান এটলাস’। ১৫৯৭ সালের এক অ্যাডভেঞ্চারভিত্তিক গল্পে জেং হের জাহাজের দৈর্ঘ্য ৪৬০ ফুট পর্যন্ত ছিল বলে বর্ণনা করা হয়। এ দৈর্ঘ্য সেসময় চলাচল করা অন্যসময় জাহাজের তুলনায় অনেক বেশি। তাই অনেকেই ধারণা করেন দৈর্ঘ্যের ওই পরিমাপ যথেষ্ঠই বাড়িয়ে বলা হয়েছে। কেননা অধিকাংশ নৌ বিষয়ক নৃতত্ত্ববিদরা মনে করেন ১৪শ থেকে ১৫শতকের জাহাজগুলোর দৈর্ঘ্য ১০০ফুটের বেশি ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক এক আবিষ্কার সবাইকে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করেছে। কেননা ওই আবিষ্কার হওয়া রাডারের দৈর্ঘ্য ছিল ৩৬ ফুট। এত লম্বা রাডার আবিষ্কারের পর ধারণা করা হচ্ছে জেং হের জাহাজের যে দৈর্ঘ্য বলা হচ্ছে তা আদতে অসম্ভব কিছু নয়।

১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দে অনেকটা আকস্মিকভাবেই সম্রাট ইয়ুনদের নির্দেশে জেং হের অভিযানের সমাপ্তি ঘটে। সং রাজবংশের সময় থেকে চীনকে নৌশক্তিতে পরিণত করার ওই প্রচেষ্টা ঠিক কি কারণে মিং রাজবংশ হঠাৎ করে বন্ধ করে দিয়েছিল সে সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে এর পেছনে কোন অর্থনৈতিক বিষয় ছিল না। কেননা সেসময় চীন বিপুর পরিমান অর্থ কর বাবদ আয় করতো। আর অভিযানের জন্য যা ব্যয় হয়েছিল তা ছিল ওই আয়ের ভগ্নাংশ মাত্র। এমন সিদ্দান্তের পেছনে রাজনৈতিক কারনই ছিল বলেই মনে করা হয়। মঙ্গলদের বিরুদ্ধে জয়ের পর মিং সাম্রাজ্যের মনোযোগ দক্ষিণের বন্দর গুলো ছেড়ে উত্তরের অভ্যন্তরীন গোলযোগের দিকে চলে যায়। অন্যদিকে সাম্রাজের প্রভাবশালী আমলারা ওই অভিযানগুলোর মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর শক্তিমত্তার বৃদ্ধিতে উদ্ধিঘ্ন হয়ে পড়েছিল। নৌবাহিনীকে এমন সন্দেহের চোখে দেখার সূচনা হয় ১৪২৪ সালে। সেবছর আসন্ন অভিযানের কার্যক্রম সীমিত আকারে বাতিল করে দিয়ে জেং হেকে চীনের উপরাজধানী নানজিংয়ের রক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়। যেখানে জেং (সিরামিক ইটের তৈরি) বিখ্যাত বোইয়েন প্যাগোডা নির্মাণের দায়িত্বপালন করেন।

মহান এই নৌসেনাপতি তার পরিচালিত সপ্তম ও শেষ অভিযানের সময় বা ওই অভিযান সমাপ্তির অল্পকিছুদিনের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে চীনের নৌশক্তি এতটাই নির্জীব হয়ে যে ২১ শতকের আগ পর্যন্ত তা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বর্তমান সময়ে নৌখাতে চীনের উচ্চাকাক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন মহান জেং হে। আজকের দিনে দেশটির সবচেয়ে বির্তকিত পদক্ষেপের একটি হচ্ছে নাইন ড্যাশ লাইন-যাতে প্রকাশিত এক মানচিত্রের মাধ্যমে চীন দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশ এলাকাই নিজের বলে দাবি করে। বিস্ময়কর বিষয় হলো ৬শতক আগে জেং হে তার বিখ্যাত নৌবহর ওই এলাকায় যেসব রুট ব্যবহার করেছিলেন বর্তমান মানচিত্রে ব্যবহৃত রুটগুলো প্রায় অবিকল এক।

#ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ও ব্রিটানিকা অবলম্বনে আনোয়ার হোসেন
(বণিক বার্তা)

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/৫:১৩পিএম/১৫/১/২০১৯ইং)