• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১২:৪৪ অপরাহ্ন

ঘুষ নেয়া ভিক্ষাবৃত্তির শামিল : দুদক চেয়ারম্যান


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০২০, ২:০৩ PM / ২৭
ঘুষ নেয়া ভিক্ষাবৃত্তির শামিল : দুদক চেয়ারম্যান

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ঢাকা : কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ নেয়া প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, কেউ যদি ঘুষ খান তা ভিক্ষার শামিল। তিনি বলেন, জোর করে কেউ টাকা পকেটে দিয়ে যায় না। ঘুষ না চাইলে তো কেউ দেবে না। চাইতে হলে হাত পাততে হয়। আর হাত পেতে ঘুষ নেয়া ভিক্ষা একই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভিক্ষা করব কি না।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের ‘আয়কর আইন ও বিধানাবলী সংক্রান্ত বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্স ও উপ -করকমিশনারদের রিফ্রেশার্স প্রশিক্ষণ কোর্স’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান। সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর শান্তিনগরে বিসিএস (কর) একাডেমিতে এ প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করা হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (প্রশাসন) আরিফা শাহানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, যে ট্যাক্স দেয়ার কথা সেটি যদি কেউ না দেন তাহলে দুদক আইনে তা আত্মসাৎ বলে গণ্য হবে, আত্মসাৎ করা দুর্নীতি। কারণ সেটা জনগণের টাকা, জনগণের হক। দুদক কখনও গণ্ডির বাইরে গিয়ে কিছু করতে চায় না। আমরা ট্যাক্স সংগ্রহ করি না। ব্যাংকের ঋণ তদারকিও আমরা করি না। কিন্তু ঋণ নিয়ে পালিয়ে গেলে সেটা দেখার দুদকের এখতিয়ার রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা দুদক কর্মকর্তাদের বলেছি, আগে নিজেরা ট্যাক্স আইনটা জানেন। যৌথভাবে দেখুন। জালের মতো বিছিয়ে আছে ব্যুরোক্রেসি (আমলাতন্ত্র)। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, আমাদের কোনো ট্যাক্স বেইস নেই। এমন অনেক লোককে আমরা পেয়েছি যার কোনো ট্যাক্স ফাইল নেই কিন্তু বিএমডব্লিও গাড়ি হাঁকাচ্ছে। আমরা যখন দেখতে চাইলাম, এমন দামি গাড়ি কারা চালায়, তখন অনেকে সমালোচনা করেছে। আমরা চাই না কেউ জনগণের হক মেরে পোরশে গাড়ি (এক ধরনের বিলাসবহুল গাড়ি) চালাক।’

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এমনও লোক আছে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করেনি কিন্তু ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে। এটা আমরা বন্ধ করতে চাই। দেশের উন্নয়নকে যদি টেকসই করতে চান তাহলে ইন্টারনাল রিসোর্স সিস্টেম থাকতে হবে।

‘এনআইডি যার আছে তার ট্যাক্স ফাইল থাকবে না কেন? এই উত্তর এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) কবে দেবেন আমি জানি না। এনআইডি যার আছে তার ট্যাক্স ফাইল থাকতে হবে। ট্যাক্স বৃদ্ধির পক্ষে না। বরং ট্যাক্স কমান কিন্তু ট্যাক্স আদায় নিশ্চিত করেন। কারণ এই দেশের মালিক জনগণের হক যেন কেউ মেরে না যায়’-বলেন ইকবাল মাহমুদ।

ক্ষোভ প্রকাশ করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষ। কিন্তু ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করে ২০-২৫ লাখ মানুষ। এর থেকে লজ্জার আর কিছু নেই। এটা একটা জাতীয় লজ্জা। অথচ ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করার অর্থ হচ্ছে আপনি এদেশের মানুষ।

এনবিআরকে উদ্দেশ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘টাকা মানুষ ঘরে রেখে দেয়। কখনও বাসায় সার্চিং হয় না। হয়তো ইদানীং হচ্ছে। যদি সন্দেহ হয় তাহলে সার্চ করেন। ২০ লাখ লোক ট্যাক্স রিটার্ন দেয় আর ১২ লাখ ট্যাক্স দেয়-এটা সত্যি লজ্জাজনক। দুদক-এনবিআরের মধ্যে আমরা লিঙ্কআপ করতে পারছি না টেকনোলজি না থাকার কারণে।’

বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশিদের অনেকে ট্যাক্স দেয় না উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘অথচ তাদের খুব সহজেই ধরার সুযোগ আছে। এনবিআর এনআইডি ধরে কাজ করুক, স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও ইমিগ্রেশন শাখা সবাই কাজ করুন। ফিঙ্গারিং করুন। কে বেতন পাচ্ছে, কে ওভারটাইম স্টে করছে, ধরেন। চেইনের মধ্যে নিয়ে আসেন। তাদের ধরেন। দুঃখজনক যে এটা হচ্ছে না। জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশিরা চলে যাবে সেটা হতে দেয়া যায় না।’

ঠিকমতো ট্যাক্স আদায় না হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এমন অনেক তথ্য আমাদের কাছে আছে যে, দুই হাজার ডলার বেতন কিন্তু আর্নহ্যান্ড পাঁচ হাজার ডলার। কনসালট্যান্টদের অনেকে ইনকাম ট্যাক্স দেয়। কিন্তু এত এত কনসালট্যান্টদের সুবিধা অন্য কোথাও নেই। তাদের অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া, অতিরিক্ত ইনকামের সুযোগ দেয়া টাকা আত্মসাতের শামিল। চৌকিদার- তফাদার যদি দুই হাজার খানার ট্যাক্স আদায় করতে পারেন, তাহলে এনবিআর কেন পারবে না? তাহলে রাজউক, এনবিআর, সিটি করপোরেশন মিলে কেন ঢাকার হোল্ডিংস ট্যাক্স আদায় করা সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন, আমরা কোনো সৎ ব্যবসায়ীকে হয়রানি করতে চাই না। বরং তাদের সুবিধা, উন্নতিতে সহযোগিতা করতে চাই। বিনিময়ে তারা ট্যাক্স, রিটার্ন দেবেন।

ভ্যালু অ্যাডেট ট্যাক্স কেন কাস্টমসকে দিতে হয় তা আজও আমার বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘এটা তো ম্যানেজমেন্ট প্রবলেম। দুটো অথরিটির কাছে রেজিস্টার করতে হয়, এটা তো হ্যারেজমেন্ট। এটার প্রসেস সমন্বয় করার সময় এসেছে। আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা যখন কোথাও যায় ট্যাক্সের ব্যাপারে কথা বলার জন্য তখন শুনতে হয়, আমি তো ভ্যালু অ্যাডেট ট্যাক্স দেই। ভ্যাট আর ট্যাক্স মিলিয়ে হিসাব দেন। এটা তো হয় না, এটা আমাদের জন্য প্রবলেম। আর যত প্রসেস জটিল হবে ফাঁকির সুযোগ তত বেশি হবে।’

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/কেএস/২:০২পিএম/১৬/২/২০২০ইং)