• ঢাকা
  • বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন

গোপালগঞ্জে স্কুল শিক্ষিকার মিথ্যে অভিযোগে বার বার হয়রানীর শিকার শিক্ষা কর্মকর্তা


প্রকাশের সময় : জুলাই ১০, ২০১৮, ৬:৫৯ PM / ৪৫
গোপালগঞ্জে স্কুল শিক্ষিকার মিথ্যে অভিযোগে বার বার হয়রানীর শিকার শিক্ষা কর্মকর্তা

 

নিজস্ব প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার মিথ্যা অভিযোগে বার বার হয়রানীর শিকার হচ্ছে মুকসুদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলাম। তিনি বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানা গেছে।
প্রধান শিক্ষিকা সাবিহা শারমিনের করা বিভিন্ন অভিযোগ ও কয়েকটি মামলা থেকে জানা যায়, ২০১২ সালে তিনি কাশিয়ানী উপজেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় তৎকালীন এটিও মুন্সী রুহুল আসলামের সাথে তার প্রেমজ সম্পর্ক তৈরী হয়। প্রেমজ সম্পর্কের পাশাপাশি তাদের উভয়ের মধ্যে দৈহিক সম্পর্কও তৈরী হয়। এরই জের ধরে শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলাম ১০/০৮/২০১২ ইং তারিখে খুলনায় তার এক বন্ধুর বাসায় কাজি ডেকে বিয়ে করেন শিক্ষিকা সাবিহা শারমিনকে এবং শিক্ষিকা সাবিহা শারমিনকে তার পিতার বাড়ীতে নিয়ে কয়েকবার দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।
শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলামের সাথে শারীরিক সম্পর্কের কারনে এক সময় গর্ভবতী হয়ে পড়েন শিক্ষিকা সাবিহা শারমিন। কিছু দিন পর ২৭/১০/২০১৪ ইং তারিখে তার কোল জুড়ে আসে একটি পুত্র সন্তান। সেই পুত্র সন্তানের পিতার দাবী নিয়ে বার বার তিনি ছুটে যান শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলামের কাছে। কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলাম তার কথার কোন গুরুত্ব না দিয়ে বার বার ফেরত পাঠান শিক্ষিকা সাবিহা শারমিনকে। যার কারণে শিক্ষিকা সাবিহা শারমিন বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও আদালতের দারস্থ হয়ে কয়েকটি মামলা করেন মুকসুদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলামের বিরুদ্ধে।
শিক্ষিকা সাবিহা শারমিনের জীবনে বিগত ২০১২ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনা সে সময়ে তিনি কোন প্রতিকার না করে দীর্ঘ ৬ বছর পর ২০১৮ সালে মানবাধিকার সংস্থায় আবেদন ও গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতে পর পর দুটি মিথ্যা মামলা করে তাকে হয়রানি করছেন বলে জানান মুকসুদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলাম।
তিনি আরো জানান, শিক্ষিকা সাবিহা শারমিন আমাকে সমাজে হেয় করার জন্য ও আমাকে হয়রানি করার জন্য প্রথমে আমার বিরুদ্ধে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে আবেদন করেন। অথচ মানবাধিকার কমিশনের শুনানির দিন আমি স্বশরীরে উপস্থিত থাকলেও শিক্ষিকা সাবিহা শারমিন উপস্থিত ছিলেন না। এরপর তিনি প্রথমে আমার বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে একটি মামলা করেন যার নং-১৬৪/১৮ তারিখ ০৯/০৪/২০১৮ ইং ও পরবর্তীতে তিনি আমার বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে আরও একটি ধর্ষন মামলা করেন যার নং-২৭৬/১৮ তারিখ ১১/০৬/২০১৮ ইং। এতেও তিনি ক্ষ্যান্ত না হয়ে বর্তমানে আমাকে মোবাইল ফোনে এবং আমার অফিসে লোক পাঠিয়ে আমাকে প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছেন। আমি ও আমার পরিবারের কথা চিন্তা করে মুকসুদপুর এবং কাশিয়ানী থানায় কয়েকটা সাধারন ডায়েরী করেছি যার বাদি আমি ও আমার স্ত্রী।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও আদালতের দুটি মামলার নথি থেকে জানা যায়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে করা আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন ১০/০৮/২০১২ ইং তারিখে খুলনায় তার এক বন্ধুর বাসায় কাজি ডেকে তাকে বিয়ে করেন শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলাম। আদালতে করা ১৬৪/১৮ নম্বর মামলার অভিযোগে দেখা যায় ১০/০৮/২০১২ ইং তারিখে শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলাম তার কাশিয়ানীর ভাড়া বাসায় শিক্ষিকা সাবিহা শারমিনের সাথে দৈহিক সম্পর্কে মিলিত হন। পরবর্তীতে শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলাম নাকি শিক্ষিকা সাবিহা শারমিনের পিতার নিকট যৌতুক বাবদ ১০ লক্ষ টাকা দাবী করেন। আবার আদালতে করা ২৭৬/১৮ নম্বর মামলার অভিযোগে দেখা যায় ১০/০৮/২০১২ ইং তারিখে শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলাম কাশিয়ানীতে তার জন্ম দিনের অনুষ্ঠান শেষ করে শিক্ষিকা সাবিহা শারমিন কে নিয়ে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে ছোটফা গ্রামে শিক্ষিকা সাবিহা শারমিনের বাবার বাড়ীতে আসেন এবং রাতে সেখানে অবস্থান করেন। আসলে কোন ঘটনাটা সঠিক তা তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেননী।
শিক্ষিকা সাবিহা শারমিন এক একটি মামলায় এক এক রকম অভিযোগ এনেছেন একই তারিখ উল্লেখ করে শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলামের বিরুদ্ধে। বার বার ওই শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষিকা সাবিহা শারমিনের মিথ্যা অভিযোগ আনায় বিষয়টি এখন হ-জ-ব-র-ল অবস্থায় পরিনত হয়েছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুকসুদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানায়, আমাদের শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলাম স্যার একজন অনেক ভালো মানুষ। শিক্ষিকা সাবিহা শারমিন শুধু শুধু বার বার আমাদের স্যারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে স্যারকে হয়রানী করছেন। তিনি এখন বদলী হয়ে গোপালগঞ্জে চাকরি করলেও স্যারের পিছু ছাড়েনী। তারা আরো বলেন যেহেতু আদালতে মামলা হয়েছে দেখা যাক আদালতে এর কি সুরাহা হয়।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুকসুদপুরে কর্মরত কয়েকজন স্কুল শিক্ষক জানায়, আমাদের টিও স্যারের মত মানুষ হয় না। তিনি অনেক ভালো একজন মানুষ। কেন কি কারনে শিক্ষিকা সাবিহা শারমিন আমাদের টিও স্যারকে বার বার হয়রানির করছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। যেহেতু আদালতে মামলা হয়েছে দেখা যাক আদালত এর কি সুরাহা করেন।
এ ব্যাপারে শিক্ষিকা সাবিহা শারমিনের ব্যবহৃত মোবাইল ০১৭৭৯-৮০৭৩৮২ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলাম আমাকে বিয়ে করেছেন। আমার সন্তানের পিতার দাবীতে আমি তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছি। আদালত বিষয়টির সুরাহা করবে। আপনারা এ ব্যাপারে কোন নিউজ করবেন না। কখনো নিউজ করার প্রয়োজন মনে হলে আমি আপনাদের খুজে নিবো। আমি প্রয়োজনে মিডিয়ার সাথে কথা বলবো। এ সময় তিনি নিউজটি না করার জন্য বার বার অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে তিনি কয়েকজন ব্যাক্তিকে দিয়ে এই প্রতিনিধিকে ফোন করান নিউজটি না করার জন্য।
বর্তমানে মুকসুদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলাম ও শিক্ষিকা সাবিহা শারমিনের বিষয়টি মুকসুদপুর, কাশিয়ানীসহ প্রতিটি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আলোচ্য বিষয় হিসাবে রুপ নিয়েছে। এ নিয়ে সব সময়ই চলে আলোচনা-সমালোচনা। সকলে এখন তাকিয়ে আছে আদালতের দিকে এ ঘটনার কি সুরাহা হয় তা জানতে।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৬:৪৮পিএম/১০/৭/২০১৮ইং)