• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন

গাজীপুর সিটি নির্বাচন : ফলাফল প্রত্যাখ্যান করল বিএনপি


প্রকাশের সময় : জুন ২৭, ২০১৮, ২:০২ PM / ৬০
গাজীপুর সিটি নির্বাচন : ফলাফল প্রত্যাখ্যান করল বিএনপি

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ঢাকা : নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরকার গাজীপুরে বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ এনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছে দলটি। সেইসঙ্গে ফলাফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

আজ বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরকার গাজীপুরে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা রাষ্ট্রের সকল যন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে। এই নির্বাচন নির্বাচনের নামে শুধু একটি তামাশা হয়েছে। ভোট ডাকাতির নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করে তা প্রয়োগ করেছে। আমরা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ফলাফল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। এই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার আবার প্রমাণ করল তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও নির্লজ্জভাবে একের পর এক নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করে সকল নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করছে। খুলনায় নতুন কৌশলে ভোট ডাকাতি করে তারই ধারাবাহিকতায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গাজীপুরের নির্বাচনে আর এক কলংকময় অধ্যয় সংযোজন করল। জনগণের আশা-আকাঙ্খাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে স্বৈরাচার এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে সমাহিত করছে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি ভোটারবিহীন প্রহসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হতেই ধারাবাহিকভাবে প্রায় প্রতিটি উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নজীরবিহীন ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে এবং প্রমাণ করেছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধীন মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিলের ফলে আওয়ামী সরকারের অধীনে নির্বাচন কখনই সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনী, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিচ্ছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই গণগ্রেফতার, সাদা পোশাকের পুলিশ দিয়ে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, ভাংচুর, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকতে না দেওয়া, নির্বাচনের আগের রাত হতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স বোঝাই করা, নির্বাচনের দিন এজেন্টদের জোরপূর্বক বের করে দেওয়া সম্পর্কে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের প্রার্থী ও দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে ক্রমাগত অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন কোন কিছুই আমলে নেয়নি। বিশেষ করে গাজীপুরের পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব ও নির্যাতনের বিষয়ে বার বার অভিযোগ করেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন তাদের নিজেদের আইন কখনই প্রয়োগ করে নাই।

তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের ভোটাধিকার মানবাধিকার সংরক্ষণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মুক্ত গণমাধ্যম ও সুশাসনের জন্য দীর্ঘকাল সংগ্রাম করছে। সরকারের নির্যাতন দমননীতি খুন, গুম, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার এমনকি মিথ্যা মামলায় গণতন্ত্রের জন্য যিনি সারা রাজনৈতিক জীবন সংগ্রাম করেছেন, জনগণের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে তিন বার প্রধানমন্ত্রী এবং দুই বার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে কারাগারে আটক রেখে বাংলাদেশকে একটি স্বীকৃত স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সরকারের এই নির্লজ্জ গণবিরোধী চরিত্র উন্মোচনের জন্য এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছি আন্দোলনের অংশ হিসেবে। আসন্ন বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনগুলোতে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি একই কারণে। এই জনবিচ্ছিন্ন সরকারের প্রকৃত চেহারা উন্মোচন, নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও পক্ষপাতিত্ব প্রমাণিত হচ্ছে এই নির্বাচনগুলোর মধ্য দিয়ে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা, সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে গণবিরোধী স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠবে এবং ভোট ডাকাত গণবিরোধী এই সরকারকে পরাজিত করে নিরপক্ষে সরকারের অধীনে যোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সকল দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। আমরা অবিলম্বে গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি এবং আসন্ন নির্বাচনগুলোতে নির্বাচন কমিশনকে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের জন্য এবং জনগণকে এই ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।

গতকাল গ্রেফতার মেজর (অব.) মিজানুর রহমান সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা প্রচারণা শুরু করেছে এবং বাইরের প্ররোচণার কথা বলা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেজর মিজানকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের নীল নকশার অংশ হিসেবে। আমরা এই চক্রান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে মেজর মিজানকে মুক্তি দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মলনে দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/২:০০এম/২৭/৬/২০১৮ইং)