• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০২:৫০ অপরাহ্ন

‘গমের ব্লাস্ট রোগ : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৮, ২০১৭, ৭:৫৭ PM / ৩৪
‘গমের ব্লাস্ট রোগ : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

এম.ও.এফ রুমী, ঢাকা : বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারী) রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে “গমের ব্লাস্ট রোগঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ তোফাজ্জল ইসলাম।

এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর মাননীয় ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ারুল হক বেগ। উক্ত সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষক, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীবৃন্দ, সুশিল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব, কৃষক প্রতিনিধি, কৃষি বিষয়ক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং কৃষি বিষয়ে অধ্যায়নরত এমএস, পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উদ্ভিদ রোগতত্ত বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম।

মূখ্য আলোচনা শেষে উপস্থিত সকলে এক প্রানবন্ত মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহন করেন। পর্বটি সঞ্চালন করেন বাংলাদেশ উদ্ভিদ রোগবিজ্ঞান সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি প্রফেসর ড. সালাহউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী। উক্ত সেমিনারটির মূখ্য সমন্নয়কারী হিসেবে ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ।

বক্তারা বলেন, পৃথিবীতে ফসলের ভয়াবহ রোগগুলোর মধ্যে গমের ব্লাস্ট রোগ অন্যতম, অনুকুল আবহাওয়ায় যা মহামারি আকারে দেখা দেয়। ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম এ রোগটি ব্রাজিলে দেখা দেয় এবং পরবর্তীতে দক্ষিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ম্যাগনাপরথি ওরাইজি ট্রিটিকাম নামক একধরনের ছত্রাকের সংক্রমনে এ রোগ হয়। গতবছর অনাকাংখিতভাবে এ রোগটি বাংলাদেশে প্রথম দেখা দেয় এবং দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের আটটি জেলার প্রায় ১৫,০০০ হেক্টর জমির গম বিনাশ করে। আক্রান্ত জমিতে ৪০-৫০ ভাগ, ক্ষেত্রবিশেষে শতভাগ ফসল নষ্ট হয়। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, গমের ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রনের জন্য একটি জাতীয় কারীগরি কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দেন। তিনি সকলকে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ সমস্যাটি উত্তোরনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলামের নেতৃতে গবেষকদল গতবছর এরোগের জীবানুর জীবনরহস্য উম্মোচন করেছেন। তাদের বর্তমান গবেষণার মূল লক্ষ্য, অত্যাধুনিক ক্রিসপার কাস ৯ জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জিনোম এডিটিং এর মাধ্যমে গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত তৈরি করা। এতে পরিবেশে জীবানু থাকলেও তা গমে আক্রমন করতে পারবেনা। গবেষকদলের মতে, নতুন রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন ছাড়া এ রোগ নির্মূল করা সম্ভব নয়। আক্রান্ত গম ক্ষেত পুড়িয়ে বা কেটে গবাদীপশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করে এ রোগের সংক্রমন রোধ করা যাবেনা। এছাড়াও সাময়িকভাবে গমচাষ বন্ধ করাও কোন কার্যকরী সমাধান নয়। তাই বিদেশী কারিগরি সহায়তায় ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। একাজে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের দ্য সেন্সবুরি ল্যাবরেটরি’র অধ্যাপক সোফিয়েন কামাউন এবং এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিকোলাস টেলবট। এছাড়াও রয়েছেন জার্মানীর গটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্ড্রিয়াস ফস টিডেমেন এবং সুইজাল্যান্ডের ইটিএইচ এর অধ্যাপক ডেনিয়েল ক্রল।

গবেষকদলের মতে, গমের এ রোগটি সফলভাবে দমনের জন্য জাতীয়ভাবে একটি সমন্মিত গবেষণা উদ্যোগ গ্রহন করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে এ রোগটি নতুন কিছু এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে বলে গবেষকদের ধারনা। তাই অতিসত্তর কোয়ারেন্টাইন/ সঙ্গনিরোধ নিষেধাঙ্গা আরোপ করে আক্রান্ত এলাকাসমূহ থেকে গম বীজ, শষ্য, গাছ, চারা বা অন্যান্য অংশ দেশের অন্যত্র পরিবহন নিয়ন্ত্রন করা উচিত। বিশেষকরে দেশের উত্তরাঞ্চলে এ রোগটির বিস্তার প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহন অত্যাবশ্যক। এজন্য সরকারীভাবে মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে সকলকে সতর্ক করা প্রয়োজন বলে গবেষকদল সুপারিশ করে।
মূলত দক্ষিন আমেরিকার গমের এ ভয়াবহ রোগটি অনাকাংখিতভাবে গত বছর বাংলাদেশে দেখা দেয়। বাংলাদেশ এশিয়ার একমাত্র দেশ, যেখানে এ রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগের জীবানু বায়োলজিক্যাল সেফটি ৩ ক্যাটাগরিভুক্ত হওয়ায় এটি নিয়ে গবেষণায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কোন এলাকায় এ জীবানুটি ছড়িয়ে পড়লে তা মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের পাশ্ববর্তী দেশগুলোসহ সারাবিশ্ব আজ উদ্ভিগ্ন। এমতাবস্থায় জাতীয় খাদ্য ও কৃষি নিরাপত্তায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমন্মিত উদ্দ্যোগের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান খুজে বের করা অপরিহার্য।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর উদ্ভিদ রোগতত্ত বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ বেলাল হোসেন এর সভাপতিত্বে উক্ত সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন কৃষি ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যন কৃষিবিদ তারিক হাসান, পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টাডিজ এর ডীন প্রফেসর ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস, প্রফেসর জামিলুর রহমান, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট এর সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মইনুল ইসলাম, প্রথম আলো সিনিয়র প্রতিবেদক ইফতেখার মাহমুদ, ডেইলি স্টারের বিশেষ প্রতিনিধি রিয়াজ আহমেদ, এনটিভি এর সিনিয়র রিপোর্টার মাকসুদুল হাসান প্রমুখ।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৭:৫৫পিএম/৮/২/২০১৭ইং)