• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০২:২০ অপরাহ্ন

খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ


প্রকাশের সময় : জুলাই ১১, ২০১৭, ১:০৩ PM / ৩৬
খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ

মাওলানা মিরাজ রহমান : মসজিদের শহর ঢাকায় সেই প্রাচীনকাল থেকে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মসজিদ। প্রতিটি মসজিদের রয়েছে নানান ইতিহাস, নানান গল্প। তার মাঝে অনেক গল্পই হারিয়ে গেছে কালের বিবর্তনে। কিন্তু মসজিদগুলো আজও দাঁড়িয়ে স্বমহিমায়। খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ ঢাকার প্রাচীন একটি মসজিদ। মসজিদটির নাম খুব কম মানুষই জানেন। এমনকি এলাকার সবাই ও জানেন না।

পুরনো ঢাকার লালবাগে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। খান মোহাম্মাদ মৃধা মসজিদ তারমধ্যে অন্যতম। মসজিদটির অবস্থান পুরানো ঢাকা এলাকার আতশখানায়। প্রাচীন এই মসজিদটি দেখতে হলে লালবাগ কেল্লার মেইন গেইট থেকে ৫ মিনিট হাঁটবেন। তাহলেই দেখা পেয়ে যাবেন নিশ্চিত। আরও সহজ করে বললে, লালবাগ কেল্লা থেকে ২০০ গজ পশ্চিমে এই মসজিদের অবস্থান। তবে স্থানীয়রা একে খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ— এতো বড় নামে চেনে না। তারা দোতলা মসজিদ হিসেবেই চিনে থাকেন প্রাচীন এই স্থাপনাটিকে।

এটি ১৭০৬ খ্রিস্টাব্দে নায়েবে নাযিম ফররুখশিয়ারের শাসনামলে নির্মিত হয়। যদিও এটা হলফ করে বলা যায় না। কেননা, তবে অনেকেই ধারণা করেন, ১৭০৪-১৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদটি নির্মাণ করেন। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের মতে— ঢাকার প্রধান কাজী ইবাদুল্লাহের আদেশে খান মোহাম্মদ মৃধা এটি নির্মাণ করেছিলেন।

এটির উচ্চতা ৩৮ মিটার। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই মসজিদ কম্পাউন্ডে মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে হাতের বাম দিকে রয়েছে মূল মসজিদ কাঠামো। মূল মসজিদের কাঠামো তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এবং এর চারিদিকে ছোট ছোট প্রায় বিশ-পঁচিশটি মিনারের মত কাঠামো রয়েছে। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির ভিত্তি প্রায় ১৭ ফুট উঁচু একটি প্ল্যাটফর্মের ওপর। প্ল্যাটফর্মের নীচে রয়েছে টানা করিডোর, এরপাশে রয়েছে ছোট ছোট প্রকোষ্ঠ। এখানে আলো বাতাসের খেলা এক মনোমুগ্ধকর।

নামাজ ঘরের উত্তর-পূর্ব দিকে মাদ্রাসা। মসজিদ ও মাদ্রাসা ছাড়া বাকি অংশ উন্মুক্ত। ধারণা করা হয়, এখানেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হতো। আর নীচের ঘরগুলো থাকার জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। নীচের ঘরগুলো ছিল থাকবার জায়গা।

মসজিদের চারপাশে আছে আদি লাল ইটের প্রাচীর। ছোট্ট একটি ফোকর দিয়ে মসজিদের ভেতরে ঢুকতে হয়। দোতলা মসজিদটির নিচতলার ঘরগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে লালবাগ কেল্লার কর্মচারীদের থাকার ঘর হিসেবে। মসজিদের দোতলার প্রধান ঘরটিতে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। ঘরটির দেয়ালের ওপরের দিকে আছে কালো পাথরের একটি ফলক। দোতলায় আছে ইমামের থাকার ঘর। খাদেমদের থাকার জন্যও একটি ঘর রয়েছে। আর অতিথিদের থাকার জন্য একটি বিশ্রামঘর রয়েছে।

মসজিদের ডানদিকে রয়েছে বিস্তৃত বাগান। সেখানে আছে তিলোত্তমা বা হুরহুরে ফুলের বাহার। বাগানের কাছে একটি পরিত্যাক্ত কুয়া রয়েছে। একসময় সেই কুয়ার পানি দিয়ে মুসল্লিদের অজু এবং অন্যান্য ব্যবহার্য পানি সরবরাহ করা হত। মসজিদের মূল প্রবেশ পথ দক্ষিণ পাশ দিয়ে। মসজিদে প্রবেশ করতে হলে সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে হবে। কেননা, মূল মসজিদটি উপরে, দোতলায়।

মসজিদের সাথেই রয়েছে একটি সাইনবোর্ড, যাতে— বিজ্ঞপ্তি, সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। কোন ব্যাক্তি এই পুরাকীর্তির কোন রকম ধ্বংস বা অনিষ্ট সাধন করলে বা এর কোন বিকৃতি বা অংগচ্ছেদ ঘটালে বা খোদাই করলে বা কোন চিহ্ন বা দাগ কাটলে ১৯৬৮ সালের ১৪নং পুরাকীর্তি আইনের ১৯ ধারার অধীনে তিনি সর্বাধিক এক বৎসর পর্যন্ত জেল বা জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দনণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। পরিচালক, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সরকার। অর্থাৎ, বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে রয়েছে। তবে নামাজের জন্য মসজিদটি স্থানীয়রা রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। [তথ্যসূত্র : ১. এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাপিডিয়া। ২.উইকিপিডিয়া। ৩. বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। ৪. মসজিদের শহর ঢাকা, ইসলামি ফাউণ্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ।]

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১:০৩পিএম/১১/৭/২০১৭ইং)