• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

কেনো দিন দিন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে তালাক?


প্রকাশের সময় : জুলাই ২৫, ২০২২, ৯:২৭ PM / ৪৪
কেনো দিন দিন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে তালাক?

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : তালাক, বর্তমানে আমাদের সমাজের জন্য ভয়াবয় একটি সমস্যা। রাজধানী ঢাকাতে প্রতি ঘন্টায় ১টি করে তালাক রেজিস্ট্রি হচ্ছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পারিবারিক সমস্যা নিয়ে আমার স্বরণাপন্ন হচ্ছে কেউ না কেউ। এর মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। সেইসব ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়- পারিবারিক অনুশাসন ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, সমাজ ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থার অভাব ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে দিন দিন বাড়ছে তালাক এর সংখ্যা। তবে স্যোশাল মিডিয়ার অবাধ বিচরণের কারণে একটা বিশাল প্রভাব পরছে তালাকের ক্ষেত্রে। কেননা স্যোশাল মিডিয়ার অবাধ বিচরণের ফলে খুব সহজেই পরনারী বা পরপুরুষে আসক্তির জায়গাটা তৈরি হচ্ছে। ফলে সহজেই সংসারগুলো ভাঙছে। এক্ষেত্রে পরকিয়ার জায়গা থেকে বিবাহিত পুরুষের সংখ্যাটাই বেশি। ফলে অন্য নারীর সাথে স্বামীর পরকিয়া ও নিজের প্রতি নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ফলে নারীরা সুস্থভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে ডিভোর্সের দিকে ঝুঁকছে বেশি। কখনও কখনও পরকিয়ায় আসক্ত পুরুষরা নিজের বলশক্তি ও অর্থনৈতিক শক্তি দিয়ে আইনীভাবে নারীদেরকে বাধ্য করছে স্বামী কতৃক তালাক মেনে নিতে। ঠিক একইভাবে পুরুষের দিক থেকেও স্ত্রীর পরকিয়া অথবা তার স্বাধীনচেতা ভাবে চলাফেরাকে মেনে নিতে না পেরে এডজাস্টমেন্টের যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তা থেকে এক সময় তালাকের দিকে ঝুঁকছে পুরুষরা। তবে স্যোশাল মিডিয়ার অবাধ বিচরণই বর্তমান সময়ে পরকিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী এবং এই পরকিয়া থেকেই পারিবারিক কলহের এক পর্যায়ে তালাকের মতো ঘটনাগুলো ঘটতে দেখা যায়। আর এর পরের অবস্থানেই রয়েছে- ধৈর্য্যহীনতা। সংসার করতে লাগে ধৈর্য্য, যা আমরা দিন দিন হারিয়ে ফেলছি। একই মায়ের পেটের ভাই-বোনের মাঝে যে পরিমান ঝগড়া হয়, তাতে করে সম্পূর্ণ ভিন্ন ২টি পরিবার-পরিবেশের মানুষ একসাথে একই ছাদের নিচে বসবাস করতে গেলে ঝগড়াঝাটি-মনোমালিণ্য হবেই। কিন্তু ভাই বোনের ঝগড়াগুলো যত সহজেই আমরা ভুলে যাই, ঠিক তত সহজেই যদি স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দম্ভ ও আত্মঅহংকার বাদ দিয়ে একে অপরকে ক্ষমা করে দেয়া এবং একে অপরকে ধৈর্য্যের সাথে বুঝতে পারার চেষ্টা আমরা করি, তাহলে সমাজ থেকে তালাকের হার কমিয়ে আনা সম্ভব। আর এর জন্য চাই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতা। কেননা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পান থেকে চুন খসলেই স্বামী বা স্ত্রীর পরিবার বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য উস্কানি দেয় তাদেরকে।- ‘‘আমার ছেলের জন্য কি বৌ এর অভাব, আমার মেয়ের জন্য কি জামাইয়ের অভাব’’… এই আচরনগুলোই আমাদেরকে সংসার ভাঙ্গার ক্ষেত্রে আগুনের মাঝে কেরোসিন ঢালার মতো ভয়ানক কাজ করে দেয়। সুতরাং নিজেদের নৈতিকতা ও পারিবারিক অনুশাসনের জায়গাটা আগে ঠিক করা উচিত। কোনো তালাকই কারও জন্য সুখকর হয় না। আর সংসারে সন্তান থাকলে তো ‘একটি তালাক মানেই কয়েকটি জীবন ধ্বংস’। আমাদের সমাজ থেকে তালাক নামের ব্যধিটি অচিরেই নিরাময় হবে বলে আশা ব্যক্ত করছি।

লেখক : সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী