• ঢাকা
  • সোমবার, ১৭ Jun ২০২৪, ০৪:০৭ অপরাহ্ন

কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা মানুষ : ১ সপ্তাহে ২শ’ পরিবার গৃহহীন


প্রকাশের সময় : জুলাই ১১, ২০১৮, ৫:৩০ PM / ১০০
কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা মানুষ : ১ সপ্তাহে ২শ’ পরিবার গৃহহীন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমার সাথে সাথে তিস্তার করাল গ্রাসে দিশেহারা হয়ে পরেছে কয়েক শ’ পরিবার। গত এক সপ্তাহেই ভাঙনে বাড়িভিটা ছাড়তে হয়েছে প্রায় ২শ’ পরিবারকে। বারবার নদী ভাঙনে নিঃস্ব পরিবারগুলো এখন আশ্রয় হারিয়ে অন্যের ভিটায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে। স্থানীয়ভাবে কাজকর্ম না থাকায় দুবেলা খাবার জোটাতে পারছে না তারা। অসহায় এই পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছে ওই এলাকার সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার তারামণি রানী।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়,  লালমনিরহাটের তিস্তা ব্রীজ থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৯কিলোমিটার ব্যাপি উন্মুক্ত জায়গায় প্রতিবছর তিস্তা নদীর ভাঙনে নি:স্ব হচ্ছে শতশত পরিবার। জেলায় ৭টি পয়েন্ট চিহ্নিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৪২ কোটি টাকার প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহন করলেও তা এখন ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে। ফলে ভাঙনে দিশেহারা পরিবারগুলো পাচ্ছে না মাথা গোঁজার ঠাঁই। গত কয়েকদিনে তিস্তা নদীর ভাঙনে উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও গুনাইগাছ ইউনিয়নে প্রায় ১০টি পাড়ায় চলছে ভয়াবহ ভাঙন। গত এক সপ্তাহেই থেতরাই ইউনিয়নের হোকোডাঙ্গা ওয়ার্ডের ফকিরপাড়া, ডাক্তারপাড়া, মেম্বারপাড়া, ভারতপাড়া, পাটোয়ারীপাড়া, মাঝিপাড়াসহ ৭টি গ্রামে প্রায় দুশো বাড়ীঘর ভেঙে গেছে। নদ-নদীতে পানি কমার সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভাঙনের তীব্রতা। বিলিন হয়ে গেছে গাছপালা, রাস্তাসহ অনেক ফসলী জমি। বসতভিটা ও জমি হারিয়ে বিপাকে পড়েছে ভাঙন কবলিত মানুষ। মাথা গোঁজার জায়গা না পেয়ে বুক ফাটা কান্নায় ভারী হয়ে আসছে আকাশ-বাতাস।
হোকোডাঙ্গা এলাকার মজিবর (৫০), জাহিদুল (৩০), আঞ্জুয়ারা (৫০) ও রাখালচন্দ্র (৬০) জানান, এক একটি পরিবারের প্রায় ৫ থেকে ৭ বার করে বাড়ী ভেঙেছে। একবার মেইন ল্যান্ডে আরেকবার বালুচরে বাঁধতে হয়েছে বাসা। রাক্ষুসী তিস্তা মাইলের পর মাইল জমিন গ্রাস করেছে। ভূমিহীন পরিবারে পরিণত করেছে শতশত মানুষকে। কিন্তু সরকারিভাবে কোন ধরণের উদ্যোগ না নেওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকায় গৃহহীনদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে।
এই এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান জানান, তিস্তার ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। আশ্রয়ের শেষ জায়গাটিও ভেঙে গিয়ে এখন দিশেহারা ভিটেমাটি হারানো পরিবারগুলো। সংশ্লিষ্ট বিভাগ ভাঙন রোধে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় বাড়ছে ভুক্তভোগীদের সংখ্যা।

থেতরাই ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার তারামণি রানী জানান, মাস খানেক আগে ৪৮টি বাড়ি নদীগর্ভে ভেঙে বিলিন হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রায় দুশো পরিবার বিলিনের পথে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকূল আবেদন জানাচ্ছি ভাঙন কবলিতদের যেন সুব্যবস্থা করে এবং তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উলিপুর-চিলমারীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, তিস্তায়  প্রায় ৭টি পয়েন্টে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এই নদী ভাঙন থেকে স্থানীয় জনগণকে রক্ষা করতে ২৪২ কোটি টাকার প্রকল্প পরিকল্পনা বোর্ডে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তিস্তা নদীর বাম তীরের ভাঙন থেকে জনগণ রক্ষা পাবে। এতে এলাকার জনগণ অন্যান্য সুবিধাও পাবে।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/৫:২৮পিএম/১১/৭/২০১৮ইং)