• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন

কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্রের চরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ‘চর ভগবতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়’


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৮, ২০২৩, ১১:৫২ PM / ৮৩
কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্রের চরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ‘চর ভগবতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়’

আতাউর রহমান বিপ্লব, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের চরা লে উচ্চ বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার দ্যুতি ছড়াতে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্রের দুর্গম চরে প্রতিষ্ঠিত ‘চর ভগবতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়’। এ বছরেই প্রথম শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে বিদ্যালয়টি। মাত্র একমাসেই এ বিদ্যালয়ে পাঠদানের কথা ছড়িয়েছে আশেপাশের বিভিন্ন চরে। প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে নতুন নতুন শিক্ষাথর্ী।
সরেজমিন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের দুর্গম চরে নির্মিত চর ভগবতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় শিক্ষাথর্ীদের কলকাকলী। স্কুলের মাঠ থেকেই দেখা যায় দূরের ব্রহ্মপুত্রের ওপারে ভারতীয় সীমান্ত। ব্রহ্মপুত্র পাড়ের লাল রঙের চমৎকার দৃষ্টিনন্দন স্কুলের ৪টি রুমে পাঠদান চলছে।
স্কুলের ৬ষ্ট শ্রেণির শিক্ষাথর্ী কহিনুর, আতিক, আয়েশা আকতার বলে, এই হাই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা না হলে আমাদের হয়তো লেখা পড়ায় বন্ধ হয়ে যেত। কেননা প্রাইমারি পাশ করে দূরে পড়তে যেতে হয় আমাদের। আমাদের অভিভাবকরা গরিব মানুষ আর এখান থেকে শহর যাওয়াটাও সমস্যা।
৭ম শ্রেণির শিক্ষাথর্ী রবিউল, খুশি, জিমা এবং ৮ম শ্রেণির শিক্ষাথর্ী রুমি, রোজিনা, বিপাশা আখতার জানায়, আমরা ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে যাত্রাপুর ও নুনখাওয়া এলাকার স্কুলে ভর্তি হয়ে ছিলাম। কিন্তু নদীপথ ও দূরের কারণে ঠিক মতন ক্লাশ করতে যেতে পারতাম না। এখন বাড়ির কাছে এবং বাড়ির কাছাকাছি চরে স্কুল হওয়ায় নিয়মিত ক্লাশ করতে পারছি।
স্কুলের শিক্ষক সেলিনা পারভীন মুক্তি, ফারুক আহমেদ, আমির হোসেন ও রাজু আহমেদ জানান, এ বছরে শুধু মাত্র ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান শুরু করেছি আমরা। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন শিক্ষাথর্ী ভর্তি হওয়ার জন্য আসছে। মাত্র ৪টি রুমে পাঠদান করার জায়গা সংকুলান করতে আমাদের হিমসিম অবস্থা হয়েছে।
চর ভগবতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির আজীবন সদস্য ইউসুফ আলমগীর জানান, ১৬ নদ-নদী বেষ্টিত কুড়িগ্রামের চরা লগুলোতে মুলত: প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও উচ্চ বিদ্যালয় নেই বললেও চলে। ফলে এসব চরের শিশুরা প্রাথমিক পাশ করলেও নদী পাড়ি দিয়ে মুল ভূখন্ডে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়াটা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। আর এ কারণে শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ার পাশাপাশি মেয়ে শিশুরা বাল্য বিয়ের শিকারও হয়। এমন বাস্তবতায় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় আমরা গড়ে তুলেছি এই উচ্চ বিদ্যালয়টি। প্রথম বর্ষেই জায়গা সংকুলান করতে পারছি না। প্রত্যাশা করছি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিগত সহায়তা পেলে আমরা বিদ্যালয়ের পরিসর বৃদ্ধি করতে পারবো।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: জহুরুল ইসলাম জানান, প্রথম বছরে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠদান শুরু হয়েছে। যেখানে প্রায় দেড় শত শিক্ষাথর্ী পাঠদান করছে। আশা করছি আগামী বছর থেকে নবম শ্রেণি অর্থাৎ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাথর্ীরা এই বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করবে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও চর ভগবতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাসেদুল হাসান জানান, সরকারি আর্থিক সহায়তায় বিদ্যালয়টির মাত্র ৪টি রুমের একটি চরউপযোগি টিনসেড ভবন আমরা নির্মাণ করেছি। সেই সাথে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্মানী এবং বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য একটি আর্থিক তহবিল গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সেখানে স্থানীয় এমপি, জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান, কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়রসহ স্থানীয় অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সকলের পৃষ্টপোষকতা পেলে স্কুলটি আরও বিকশিত হবে। সেই সাথে চরের মেয়ে শিশুরা বাল্য বিয়ের হাত থেকে মুক্ত হবে।