• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫:৩৭ অপরাহ্ন

কালাইয়ে হিমাগারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমান মজুত আছে আলু, তবুও দাম বৃদ্ধি


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১, ২০১৮, ১২:৪১ PM / ৩৯
কালাইয়ে হিমাগারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমান  মজুত আছে আলু, তবুও দাম বৃদ্ধি

 

এস এম শফিকুল ইসলাম,জয়পুরহাট : জয়পুরহাটের কালাইয়ে হিমাগারগুলোতে এখনও পর্যাপ্ত পরিমান আলু মজুত আছে। সংরক্ষিত আলু উত্তোলনের শেষ সময় ১৫ নভেম্বর পেড়িয়ে গেলেও বর্তমানে উপজেলার ১০টি হিমাগারে পর্যাপ্ত পরিমান আলু মজুত থাকতে দেখা গেছে। বাজারে আলুর চাহিদা থাকা শর্ত্বেও ব্যবসায়ীরা বেশী লাভের আশায় উত্তোলন না করে ধরে রেখেছেন বলে অভিযোগ খুচরা বিক্রেতা ও সাধারণ ক্রেতাদের। ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে বর্তমানে বাজারে আলুর সংকট সৃষ্টি করেছে। এ সুযোগে বেশী লাভে বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। আলুর দাম গত ১ মাসের ব্যবধানে হঠাৎ করে দ্বিগুন হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়ীরা জোটবদ্ধ হয়ে আলু মজুত রেখেছে। সংকটের কারনে আলুর চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে। এতে করে চরম দূর্ভোগে পড়েছে সাধারণ ক্রেতারা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। দাম বেশীর সাথে মজুতের কোন সম্পর্ক নেই। এ ক্ষেত্রে হিমাগার মালিকরা বলছেন, আলু সংরক্ষণের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১৫ নভেম্বর। বর্তমানে আলুর বাজার দামও বেশী। কি কারণে ব্যবসায়ীরা তাদের সংরক্ষিত আলু উত্তোলন করছেন না তা আসলে আমাদের জানা নেই।
শুক্রবার কালাই পৌর দৈনিক বাজার ও উপজেলার বৃহত মোসলেমগঞ্জ হাটে গিয়ে খুচরা বিক্রেতা ও সাধারণ ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১ মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন জাতের ১ কেজি আলু ১৪ থেকে ১৬ টাকা বেশী দরে বেচাকেনা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় হিমাগারগুলোতে এ সময় আলুর সংরক্ষণও রয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ব্যবসায়ীদের আড়ৎঘরে এবং হিমাগারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমান আলু মজুত থাকার পরও, খুচরা বাজারে চাহিদা বেশী হওয়ার কারণে দিন দিন আলুর দাম বেড়েই চলছে।
বর্তমান বাজার অনুযায়ী গত ১ মাস আগে আলুর দাম ছিল, গ্র্যানোলা (সাদা) জাতের ১ কেজি ১০-১১ টাকা, কার্ডিনাল ও স্টিক (লাল) ১৩-১৪ টাকা, ডাইমন্ড (সাদা) ১৪-১৫ টাকা, দেশী পাকরি (লাল) ১৭-১৮ টাকায় এবং রুমানা (পাকরি) ১৪ টাকা।
শুক্রবার কালাই পৌর দৈনিক বাজার ও মোসলেমগঞ্জ হাটে গ্র্যানোলা (সাদা) জাতের ১ কেজি আলু ২১-২২ টাকা, কার্ডিনাল ও স্টিক (লাল) ২৪-২৫ টাকা, ডাইমন্ড (সাদা) ২৫ টাকা, দেশী পাকরি (লাল) ২৮-২৯ টাকা এবং রুমানা (পাকরি) ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ করে বাজারে আলুর দাম বৃদ্ধি হওয়ায় ১ কেজির উপর দাম বেড়েছে গড়ে ১৪-১৬ টাকা।
উপজেলার ১০টি হিমাগারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ নভেম্বর ব্যবসায়ীদের সংরক্ষিত আলু উত্তোলণের শেষ দিন ছিল। তারপরও গত শুক্রবার পর্যন্ত পুনট কোল্ড স্টোরেজে মজুত রয়েছে (প্রতি বস্তা ৮৪ কেজি ওজন) বিভিন্ন জাতের সাড়ে ৩ হাজার বস্তা, শিমূলতলী আর.বি স্পেশালাইস্ট কোল্ড স্টোরেজ সাড়ে ৪ হাজার বস্তা, সড়াইল নরওয়েস্ট কোল্ড স্টোরেজে ২ হাজার ৬শ’ বস্তা, মোলামগাড়ীহাট নর্থ কোল্ড স্টোরেজে ৩ হাজার ৭০০ বস্তা, বৈরাগীরহাট সাউথপোল কোল্ড স্টোরেজে সাড়ে ৫ হাজার বস্তা, নিশ্চিন্তা পল্লী হিমাগরে ৩ হাজার ৪০০ বস্তা, বালাইট সালামিন কোল্ড স্টোরেজে ২ হাজার ৫০০ বস্তা, সড়াইল এম ইসরাত হিমাগারে ৪ হাজার ৩০০ বস্তা এবং মোসলেমগঞ্জ চৌধুরী হিমাগারে ৪ হাজার বস্তা।
কালাই পৌর দৈনিক বাজারের খুচরা বিক্রেতা ছাইদুর রহমান বলেন, মহাজনদের ঘরে এবং হিমাগারে আজও অনেক আলু আছে। কিন্তু তারা বিক্রি করছেন না। অন্যভাবে বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশী দিতে চাইলে আবার আলু ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের করার কি আছে। যেভাবে কিনছি, দু/এক টাকা লাভে বিক্রি করছি।
মোসলেমগঞ্জ হাটের খুচরা বিক্রেতা আব্দুল জলিল বলেন, শুক্রবারে মোসলেমগঞ্জ চৌধুরী হিমাগারে গিয়ে বৃহস্পতিবারে চেয়ে আলুর দাম বস্তা প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশী হওয়ায় ফেরত এসেছি। হাটের দিন আজ (শুক্রবার) আমার দোকানে আলু নেই, তাই বিক্রি করছি না।
এ ব্যাপারে দৈনিক পৌর বাজার ও মোসলেমগঞ্জ হাটে আলু কিনতে আসা আঁওড়া গ্রামের আব্দুল মান্নান, মান্দাই গ্রামের আবুল হোসেন, ভাটাহার গ্রামের কফিল উদ্দিনসহ অনেকেই জানান, গত কয়েক দিন আগে ১ কেজি আলু কিনেছি ১৫ টাকায়। সেই আলু আজকে (শুক্রকার) কিনতে হচ্ছে ২৮ টাকায়।
পুনট পাঁচপাইকা গ্রামের আলু ব্যবসায় মিঠু ফকির বলেন, এবার উপজেলার তিনটি হিমাগারে ৬ হাজার বস্তা বিভিন্ন জাতের আলু সংরক্ষণ করেছিলাম। দাম বেশী হওয়ায় কয়েকদিন আগে সব আলু বিক্রি করেছি। সব খরচ বাদ দিয়ে এবার লাভ হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। হিমাগারগুলোতে আলু মজুত আছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হিমাগারে আলু সরক্ষণের সময় শেষ। আগের চেয়ে বর্তমান বাজারে আলুর দাম আরও বেশী। যারা ধরে রেখেছে, তাদের উদ্দেশ্য অবশ্যই ভাল না। তাছাড়া এ এলাকায় আলু রোপনও প্রায় শেষ। মজুত আলু বীজের নয়। আমার জানামতে এ উপজেলার সবকটি হিমাগার মিলে এখনও ৪০ হাজার বস্তা আলু মজুত আছে।
৪ হাজার বস্তা আলু মজুত আছে পাঁচশিরা বাজারের ব্যবসায়ী আফছার উদ্দিনের। শেষ সময়ে মজুতের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরও একটু লাভের আশায় আলু ধরে রেখেছি। আগের চেয়ে আজ (শুক্রবার) দাম বেড়েছে। আগামী দু/একদিনে মধ্যে সব আলু বিক্রি করে দিব।
বালাইট সালামিন কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক রতন কুমার বলেন, আলু উত্তোলনের সময় শেষ হয়েছে। কৃষকের কোন আলু নেই। তবে ২ হাজার ৫০০ বস্তা আলু এই স্টোরেজে এখন আছে,যা ব্যবসায়ীদের। আলু উত্তোলনের জন্য তাদের সাথে মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তারা আলু উত্তোলন করছেন না। আমার মনে হয় বেশী লাভের আশায় তারা ধরে রেখেছেন।
ঢাকারনিউজ২৪.কম/কেএস/১২:৪৫পিএম/০১/১২/২০১৮ইং