• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০১:০৭ অপরাহ্ন

এক সাহসিনীর জন্যে


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ২৬, ২০১৮, ১২:২৮ AM / ৩৭
এক সাহসিনীর জন্যে

অসীম সাহা
[স্নেহের তসলিমা নাসরিনকে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা]
______________________________________________________-

মাঘী পূর্ণিমার রাতে একদিন স্বর্ণসিংহাসন থেকে
যে-মেয়েটি নেমে এসেছিলো মৃত্তিকার কঠিন পাথরে,
অবরুদ্ধ ডানার নিষ্পাপ অহংকারে সে জয় করতে চেয়েছিলো
এক শিকারি বালকের কঠিন হৃদয়;
সে বোঝেনি কোনো কাম—
তাকে জাগ্রত করেনি কোনো শারীরিক তৃষ্ণা;
মোহগ্রস্ত কুয়াশার মতো ঘন পিপাসায়
শুধু ওঠানামা করছিলো তার বক্ষস্পন্দন,
আর শিকারি বালকের রোমকূপে-রোমকূপে
তখন কেবলি ক্ষুধার্ত বাঘের বীভৎস চিৎকার;
তার হিংস্র থাবার নিচে কেবলি শোনা যাচ্ছিলো আহত, দগ্ধ ও ক্ষতবিক্ষত
এক অপাপবিদ্ধ কিশোরীর ঝলসানো মাংসের আর্ত হাহাকার!

এরপরই তার ঘুরে দাঁড়ানো।
যেন জ্যোতির্ময় আলোকচ্ছটার ভেতরে তির্যক্ ত্রিশূল হাতে
অসুরবিনাশিনী এক নারীমূর্তির উদ্ধত আস্ফালনে
কেঁপে উঠছিলো সম্পূর্ণ পৃথিবী;
আর সেই কম্পমান পৃথিবীর এক অনিবার্য পরিণামের কথা জেনেও
সে একে-একে নানা রঙের মুখোশের ভেতর থেকে
একটু-একটু করে টেনে-হিঁচড়ে বের করে নিয়ে আসছিলো
সেই সব মানুষের বীভৎস কংকাল;
যারা এতোদিন মুখোশের আবরণে ঢেকে রেখেছিলো
নিজেদের অচেনা মুখমণ্ডল;
যাদের ক্ষুধা উন্মত্ত বাঘের চাইতেও ভয়ংকর
যাদের ঠোঁট থেকে ঝরে পড়া লালায় ভাসমান বঙ্গোপসাগর
যাদের পোশাকের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসা
সেই সব মুখর নগ্নতা—যা ছিলো অপ্রকাশ্য, অদৃশ্য এবং অন্তরালবর্তী।
এবার উন্মোচিত নগ্নতার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে যে-মুখ
তাদের সম্মিলিত ক্রোধের বহ্নিতে জ্বলে যাচ্ছে লোলাপাঙ্গীর গা
তার স্তনযুগলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে পচা মাংসের গন্ধ
যেন তার যোনিদেশ মানবজন্মের জন্যে উন্মুখ কোনো গুহামুখ নয়
যেন তা আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোতে ভরপুর এক তীব্র বিস্ফোরক
যা-একমুহূর্তে পৃথিবীকে ছিন্নভিন্ন করে পরিণত করতে পারে
এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে।

তাই এখন তোমাদের ক্রোধের অগ্নিতে জ্বলে উঠছে সবুজ প্রান্তর
একে-একে তোমাদের মুখোশগুলো খসে পড়ছে বলে
তোমরা সমস্বরে চিৎকার করে উঠছো
তোমাদের চোখের ভেতরকার অগ্নিগোলক থেকে
যে-স্ফুলিঙ্গ বেরিয়ে এসে দগ্ধ করে দিতে চাইছে
সেই দুঃসাহসী মেয়েটির বুক
সে এখন তোমাদের স্বর্ণমুদ্রার আস্ফালনে কিছুতেই মূক হয়ে যাবে না!
অন্ধকারের ভেতরে নগ্ন শ্বাপদের মতো
তোমাদের জিঘাংসার আগুন
এখন তার কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবে না;
কেননা সে তো এখন জ্যোৎস্নার আবরণের ভেতরে
স্বর্ণসিংহাসন থেকে নেমে আসা সেই ছোট্ট মেয়েটি নয়।
এখন সে তরঙ্গিনী, এখন সে মূর্তিমতী লোলাপাঙ্গী,
প্রাচীন নগর থেকে ছুটে আসা মৃত এক কামরাঙা মনিয়ার বোন।

সে এখন ছড়িয়ে গেছে আকাশে, পাতালে, গ্রহ ও নক্ষত্রে,
পৃথিবীর অনন্ত প্রদেশে।
ঐ দেখো, তার পায়ের কাছে পড়ে আছে
তোমাদের কদর্য মুখোশ;
সূর্যের আলোতে তোমাদের খণ্ডিত মুখগুলো
কেঁপে উঠছে তির তির করে;
তোমরা বোঝোনি, তোমাদের সব অদৃশ্য অহংকার
মুহূর্তেই তার পায়ের কাছে অনাঘ্রাত ঝরা ফুলের মতো
এমন করে লুটিয়ে পড়তে পারে।
অতএব সেই সাহসিনীর জন্যে
অনন্তকাল দূর কোনো নক্ষত্রের দিকে
করুণ চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া
তোমাদের আর কিছুই করার নেই।!

[অনেক আগে লেখা।ওকে দেখানো হয়নি। জন্মদিনে সকলের সামনে তা উপস্থাপন করলাম।]