• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন

উলিপুরে গমের বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৩, ১১:১৮ PM / ১৩২
উলিপুরে গমের বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুরে গমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন গম চাষিরা। গমের ব্যাপক ফলনে কৃষকের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক।

গত বছরের তুলনায় এবারে গমের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। গম চাষিরা দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন। শতশত একর জমিতে গমের চাষ করেছেন। রবি শস্যের মধ্যে অন্যতম একটি লাভজনক আবাদ হচ্ছে গম। বিগত সময়ে গমের আবাদ কম থাকলেও বর্তমানে এ উপজেলায় কৃষকরা আবারো গমের আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এবারে উপজেলায় গম চাষের লক্ষ্য মাত্রা ৬’শ ৯০ হেক্টর। এ পর্যন্ত অর্জিত ৬’শ ৯০ হেক্টর।
এবার উপজেলার হেক্টর জমিতে বারি গম-৩০, ৩২ ও ৩৩ জাতের অধিক ফলনশীল গমের চাষ করা হয়েছে। রোগবালাইয়ের তেমন আক্রমণ না থাকায় চলতি মৌসুমে গমের বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
লাভজনক এই গম চাষে চাষিদের আগ্রহী করার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মাঝে উন্নত জাতের গমবীজ, সার, বালাইনাশকসহ অন্যান্য উপকরণ প্রনোদনা হিসাবে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও চাষিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে আসছে উপজেলা কৃষি অফিস।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত জোড়া মাঠে গমের চাষ। একর ময় একর জমিতে গমের চাষ করেছে গম চাষিরা। বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের আবাদি জমিগুলোর দিকে তাকালে চোখে পড়ে শুধু সবুজের সমারোহ। গত বছরের তুলনায় এবারে গমের বাম্পার ফলন দেখা যায়। গম চাষিরা বলেন, এবারে গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো ফলন হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দ্বিগুণ লাভ হবে আশা করছেন তারা।

উপজেলার নন্দুনেফড়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিন গমচাষি বলেন, আমি প্রায় ১’একর জমিতে ৩ বস্তা (৬০ কেজি) গমের চাষ করেছি। যার মুল্য প্রায় ৪ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এবারে অনেক ভালো ফলন দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার টাকা। ফসল ঘরে উঠানো পর্যন্ত খরচ হবে প্রায় ১০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত বাম্পার ফলন দেখা যাচ্ছে আবহাওয়া অনুকূল থাকলে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মণ গম পাব। যা ভালো দাম থাকলে প্রায় ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা হবে। অধিক লাভের আশা করছেন তিনি।

এছাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের বীজ খামার চাষিদের মধ্যে হাফিজুর রহমান, হামিদুল, খালেক, রশিদ, নুরমোহাম্মদ, শাহ জামাল সহ আরও অনেকে বলেন, আমরা এ ব্লোকে প্রায় ১৫ জন গম চাষি বীজ উৎপাদন প্রদর্শনীতে বারী গম-৩৩ বীজ সংরক্ষণ করতে গম চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে গমের বীজ ও সার প্রনোদনা হিসাবে দেয়া হয়েছে। তারা বলেন উন্নত জাতের গমের বীজের সংকট যাতে না হয় সে কারণেই বীজ উৎপাদন প্রদর্শনীতে গমের চাষ করা হয়েছে। গমের বাম্পার ফলন হওয়ায় আমি অনেক খুশি। দিগন্ত জোড়া মাঠে অন্যান্য জাতের গমের ফলনের থেকে বারী গম-৩৩ এর ফলন অনেক ব্যাবধান দেখা যায়। তিনি আরও বলেন পরিবেশে অনুকূল থাকলে গমের বাজার দর ভালো থাকালে অনেক লাভবান হওয়ার আশা করেন।

এ ছাড়াও উপজেলার দলদলিয়া, থেতরাই, বজরা, গুনাইগাছ, নারিকেলবাড়ি, বাকরের হাট ও তবকপুর এলাকার গমচাষিদের মধ্যে জুয়েল, শফিকুল ইসলামসহ আরও অনেকে বলেন, বিগত সময়ের চেয়ে এবার গমের দানা খুব ভালো এসেছে। যদি আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত গমের অনুকূলে থাকে ও গমের বাজার ভালো থাকে তাহলে চাষিরা লাভবান হবেন। তারা আরও বলেন, গম চাষে তেমন পানি, সার, কীটনাশক, বালাইনাশক ও নিড়ানীর প্রয়োজন হয় না বলে খরচ অনেক কম। আর কম পরিশ্রমে অধিক লাভ করা যায়। এছাড়াও গমে পোকা-মাড়কের আক্রমনও তেমন একটা হয় না। গমের শীষ নেওয়ার পর গমের গাছ জ্বালানি ও বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এসব বিবেচনায় রাখলে নিশ্চিত করে বলা যায় গম চাষ একটি অধিক লাভজনক আবাদ।

উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নন্দুনেফড়ায় দ্বায়িত্বে থাকা কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, এবারে আমার ব্লোকে গত বছরের তুলনায় অনেক বাম্পার ফলন হয়েছে। এবারে গমে তেমন কোন পোকা-মাড়কের আক্রমন দেখা যায়নি। তবে যেখানে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিয়েছে আমাকে অবগত করার সাথে সাথেই সেখানে গিয়ে পোকামাকড় নিধনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আশা করছি এবারে গম চাষিরা অনেক লাভবান হবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে গমের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এ পর্যন্ত গমে তেমন উল্লেখ্যযোগ্য কোন রোগ-বালাইয়ের আক্রমন হয়নি। এছাড়াও গম চাষ করলে জমির উর্বরতা শক্তি যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি গম চাষের পর কৃষকরা ওই জমিতে ভালো ভাবে আউশ ধান কিংবা পাট চাষ করতে পারবেন। তবে আবহাওয়া অনুকূল থাকলে গমের বাজার দর ভালো থাকলে গম চাষিরা অনেক লাভবান হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।