• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:৫৩ অপরাহ্ন

উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে সাধারণ মানুষ, পাল্টে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিত্র


প্রকাশের সময় : জুলাই ২৯, ২০১৮, ৩:২৬ PM / ৩৭
উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে সাধারণ মানুষ, পাল্টে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিত্র

আজমাল হোসেন মামুন : পাল্টে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে সারা দেশে। সর্বপশ্চিমের জেলা হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জও অনেক এগিয়েছে। জেলার পরিশ্রমী মানুষরা পাল্টে দিচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চালচিত্রকে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের এ জেলার অধিকাংশ গ্রাম ছিল জরাজীর্ণ ঘর-বাড়ি আর দারিদ্র্যের আঘাতে জর্জরিত।কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সর্বক্ষেত্রে।

জেলার অধিকাংশ মানুষ ছিল দরিদ্র শ্রেণির। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ তাদের নিয়তির লিখন বলে বিবেচিত হতো। সময়ের বিবর্তনে সেই ছবি বদলে গেছে। সর্বত্র লেগেছে দিন বদলের ছোঁয়া। এখন গ্রামে কুঁড়েঘর খুঁজে পাওয়া কঠিন। তার বদলে গড়ে উঠেছে টিনের ঘর ও পাকা বাড়ি। এমনকি গ্রামাঞ্চলেও ফ্লাট বাড়ি তথা নজর কাড়া বাড়িও তৈরি হচ্ছে। হাড্ডিসার মুখগুলোও নেই। এর বদলে কর্মজীবী মানুষ আছে, পকেটে টাকাও আছে। ঘরে আছে রঙিন টেলিভিশন,ফ্রিজ আর মোটর সাইকেল। কারও আবার কম্পিউটার,তাতে জুড়ে দেওয়া ইন্টারনেট। ঘরে বসে এখন বাংলাদেশের কোনো এক প্রান্তের মানুষ হাতের মোবাইল টিপে মুহূর্তেই যোগাযোগ করছে প্রবাসের প্রিয়জনের সঙ্গে। একসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ অসুস্থ্য হলে চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেত না। এখন সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে ওঠেছে। চিকিৎসার জন্য মানুষ ছুটে চিকিৎসকের কাছে। শিক্ষা ক্ষেত্রেও এগিয়েছে আশাতীত। উচ্চ শিক্ষার জন্য রয়েছে একটি নামকরা ও মানসম্পন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি পলিটেকনিক ও ৩টি সরকারি কলেজে অনার্স কোর্স। পাশাপাশি মাস্টার্স কোর্সও চালু করেছে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে। কারিগরি শিক্ষার দিক দিয়ে অনেক এগিয়েছে।  বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠেছে বিভিন্ন বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩ শতাংশের কাছাকাছি। বিশেষ করে, রাস্তাঘাট উন্নয়নের পাশাপাশি ৫৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৪৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘শেখ হাসিনা সেতু’ নির্মিত হওয়ার পর সদর উপজেলার ৭টি ইউপির কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেছে যা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জন্য শুধু নব অধ্যায়ের সূচনা নয়, একটি ইতিহাসও বটে। সেতুটি নির্মিত হওয়ার পর কয়েকটি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ কৃষি, ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেমন আশার আলো দেখেছে তেমনি জেলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখার সুযোগও পেয়েছে যা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিক্ষার ক্ষেত্রে এক মাইলফলক। সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২০০ শয্যায় উন্নিতকরণসহ সড়ক ও পদ্মা নদীর বাধ নির্মাণ করেছেন যা   শতকরা ৮০ ভাগের বেশি মানুষ ছিল দরিদ্র শ্রেণির। মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৬ বছর।এখন গড় আয়ু প্রায় ৭০ বছর।একসময় বেশির ভাগ বাড়িতে ছিল কুঁড়েঘর ও মাটির গৃহ। স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ছিল না বললেই চলে। নিরাপদ পানি ব্যবহারের হারও ছিল নগণ্য। জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত এক দশক থেকেই ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে সাম্প্রতিক বছরে ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সর্বশেষ খানা জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে খানা বা পরিবারপ্রতি মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৪৫ টাকা। দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ২৪ শতাংশে। একজন মানুষের দৈনিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার গ্রাম। ২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী, ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রায় অর্ধেক বাড়িঘর টিন ও কাঠের তৈরি। উপরন্তু প্রায় ৩০ শতাংশ রয়েছে পাকা বাড়ি। প্রায় ৯৫ শতাংশ পরিবার নিরাপদ পানি পান করছে। বেড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবহারের হারও। ২০১০ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৫৭ দশমিক ৯ ভাগ; ২০১৬ সালে এ হার বেড়ে হয়েছে ৬৫ দশমিক ৬ ভাগ। বাংলাদেশের এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে সাধারণ মানুষের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে। সেই দিক থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অনেক এগিয়েছে। কৃষিকাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ এ জেলার পুরো চিত্র পাল্টে দিয়েছে। নেই ধর্মে ধর্মে কোন বিভেদ, নেই হানাহানি। বর্তমানে প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে মুক্ত এ জেলা বলা যেতে পারে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক এই প্রত্যাশা সকলের।

লেখক :
আজমাল হোসেন মামুন
শিক্ষক ও কলাম লেখক

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৩:০৮পিএম/২৯/৭/২০১৮ইং)