• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১২:৪১ অপরাহ্ন

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী একটি নাম : একটি ইতিহাস


প্রকাশের সময় : জুন ১০, ২০২২, ১০:৪৩ AM / ৩৬
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী একটি নাম : একটি ইতিহাস

মীর আব্দুল আলীম : আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী একটি নাম; একটি ইতিহাস। এদেশের সাংবাদিক, পাঠক সমাজের কাছে এক উজ¦ল নক্ষত্র। সেই বাহান্ন থেকে ২০২২ সাল অব্দি তাকে ঘিরে
অনেক স্মৃতি। সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী “আমার ভাইয়ের রক্তে
রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী” ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে গানটি রচনা
করেন। এই কাল জয়ি গানের রচয়িতাই তিনি নন। দেশের বাঙ্গালী জাতির
কান্তিকালে তার কলম সব সময় গর্জে উঠেছে নানামুখী লিখনিতে। তবে বাস্তবতা
এটাই এই একটি গানই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে হাজার বছর। তার অন্য অবদানের কথা
না হয় নাই বললাম।
সৃষ্টিশীল মানুষ; কলমের যাদুকর আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। নতুন কিছু লেখার
নেশা বিভোর থাকতেন সারাটা সময়। তার ছিল চমৎকার লিখনী শক্তি। তিনি আমৃত্যু
দেশের জন্য লিখেছেন; দেশের মানুষের জন্য লিখেছেন। তাঁর কলম কাউকে ছেড়ে
কথা বলেনি। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও তিনি সমালোচনা করতে
ছাড়েননি। তবে তা ছিলো দিক নির্দেশনা মূলক; দেশের কল্যাণে লেখা। তাইতো
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তাঁকে ভালোবাসতেন সমিহ করতেন। শক্তিমান এই লেখক
যাদের সমালোচনা করে লিখতেন তাঁরাও কখনো চটে যাননি তাঁর উপর। কারনও ছিল
একটা। তিনি সবসময় গঠনমূলক সমালোচনা করতেন। যে বিষয়ে সমালোচনা করেছেন তার
সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেকি এক লেখুনীর
অনবধ্য যাদু ছিল তাঁর মধ্যে। সেই নতুনধারার আজকের কাগজ আর জনকন্ঠের
দাপুটে লেখক ছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। এদু’টি পত্রিকায় আমিও শুরু থেকে
শেষ অব্দি কাজ করেছি। আজও জনকন্ঠের সাথে যুক্ত আছি। বহুবার তাঁর সাথে
দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। আমি সবে ছাত্রজীবন শেষ করে লেখালেখি করি। তিনি
কোথাও এসেছেন জানতে পারলেই ছুটে যেতাম তাঁর কাছে। মানুষটির অসম্ভব লেখার
ভক্ত ছিলাম আমি। একদিন বললাম-‘আমি আপনার ছোট ভাই হয়ে থাকতে চাই; তাই ভাই
বলে ডাকার অনুমোতি দিবেন দয়া করে। মিষ্টি হেঁসে মাথায় হাত বুলিয়ে
বলেছিলেন তুমিতো আমার ছোট ভাইই। সেই থেকে প্রিয় গাফ্ফার ভাইকে অনুসরন
করেই পথ চলছি আমি। আজকের কাগজ কিংবা জনকন্ঠে লেখা ছাপা হতো সম্পাদকীয়
পাতার শুরু থেকে শেষ মাথা পর্যন্ত। দীর্ঘ লেখা পড়তে পড়তে কখন যে শেষ হতো,
ভাবতা আরকটু যদি লিখতেন। লেখায় কি যাদুইনা ছিল তাঁর লেখায়। শুরু করলে শেষ না করে ক্ষেন্ত ছিল না। প্রিয় লেখক গাফ্ফার চৌধুরীকে নিয়ে এদেশের হাজারো
পাঠকের কতনা স্মৃতি রয়েছে। সেসব স্মৃতি হয়তো কখনই লিখে শেষ করবার নয়।
আবদুল গাফফার চৌধুরী একজন পরিচ্ছন্ন লেখক। তিনি ছিলেন যেন এদেশের জীবন্ত
এক আরকাইভ। তাঁর ভান্ডারে এত তথ্য জমা ছিলো অন্য কোন লেখকের কাছেতা আছে
কিনা তাতে আমি সন্দিহান। যেটাই লিখতে সেটা হতো তথ্যবহুল। আমি যতদুর জানি
তিনি কাগজ কলমেই লিখতে। কম্পিউটারে নয়। একদিন দেশের শীর্ষস্থানীয়
পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে চায়ের আড্ডায় বসেছিলাম। হঠাৎ দৌড় ঝাপ শুরু
হলো। বলাবলি হচ্ছে “গাফ্ফার ভাইয়ের লেখা এসেছে”। ফ্যাক্সের একগাদা কাগজ
সম্পাদকীয় বিভাগের প্রধানের টেবিলে আনা হলো। সেই থেকে জানি তিনি
পত্রিকাগুলোতে হাতে লিখে পাঠাতেন। সেসব লেখা আসতো ফ্যাক্সে করে। এতো আরও
১০/১২ বছর আগের কথা। সর্বশেষ পত্রিকাগুলোতে কিভাবে লেখা পাঠাতেন তা জানতে
আমি আজ (৭ জুন) দেশের কয়েকটি শীর্ষ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের সাথে কথা
বলি। তিনি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত হাতেই লিখেছেন এটা নিশ্চিত হয়েছি। তবে
প্রিয় এই লেখকের মেয়ে বিনতী চৌধুরী জীবিত থাকতে পিতার লেখা স্কেনিং কওে
ফ্যাক্সেও পরিবর্তে ইÑমেইলে পাঠাতেন। জানলাম মেয়ে বিনীতা লন্ডনেই তাঁর
সাথে থাকতেন। শিক্ষকতা করতেন। তার মৃত্যুও পর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন
প্রিয় লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী। আসলে হাতে লেখার কথা টেনে আনলাম একারনে-
বিজ্ঞানের এ যুগে বিশেষ কওে আমরা যারা লেখালেখি করি গুগোল আমাদের সব সহজ
করে দিয়েছে। কোন তথ্য উপাত্তের জন্য গুগোলে সার্চ দিলেই সঠিক তথ্য পেয়ে
যাই তাৎক্ষনীক। আবদুল গাফফার চৌধুরীর গুগোল আর কম্পিউটা ছিলো তাঁর
মাথাতে। তাইতো তাকে আরকাইভ, তথ্য ভান্ডার বলি আমরা। মাথার মথ্যেই সব ডাটা
সংরক্ষিত থাকতো তাঁর। অনেক পত্রিকা অফিসের কোন তথ্য প্রয়োজন হলে গুগোল
থেকে না পেলে তাঁকে রিং কওে তথ্য নিতেন এমন কথাও আমরা জানি।
সেদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটরিয়ামে কবি হেলাল হাফিজের কবিতার আলোচনা
একং কবিতা সন্ধায় আলোচক হিসাবে আমন্ত্রণ পাই। সেখানে অসেনক গলিী কবিরা
ছিলেন। আলোচ হিসাবে ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবে সভাপতি ফরিদা ইয়সমিন আপাও।
ছিলেন কবি নাসির ভাই। আলোচনা শেষে কালাপকালে নাসির ভাই বললেন “আবদুল
গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে অপনি একটা লেখা লিখেন”। দৈনিক জনকন্ঠ যখন রমরমা
শীর্ষ পত্রিকা তখন কবি নাসির আহম্মেদ ঐ পত্রিকাতে ছিলেন। পত্রিকার
সম্পাদকীয় পাতা মানেই আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা। সব সময় তাঁর লেখা থাকতো
জনকন্ঠে। সেই থেকে নাসির ভাই আবদুল গাফফার চৌধুর কে মনে প্রাণে ধারন
করেছেন অন্যভাবে। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি আমাকে এই শক্তিমান লেখককে নিয়ে
লেখতে বললেন। আমি সেদিন একটা কথাই বললাম। আবদুল গাফফার চৌধুরকে নিয়ে
লেখার শক্তি আমার নেই। কোথায় ভুল হয়ে যায় সেই ভয়ও আছে। তবুও বললেন-
লিখেন। তাই সিাহস কওে লিখছি। এই অল্প এক-দেড় হাজার শব্দে প্রায়াত আবদুল
গাফফার চৌধুরকে নিয়ে কি এমন লিখতে পারব। ওনাকে নিয়ে লিখলেতো একটা বিশাল
মোটা বই হয়ে যাবে।
আবদুল গাফফার চৌধুরী জীবনে আর কিছু হয়তো পাওয়ার নেই। এক জীবনে মানুষের
কতইবা প্রয়োজন আছে। সাত দশকের অসংখ্য লেখালেখির পরও একটি গানের রচয়িতা
হিসেবেই তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।একটি গান- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো
একুশে ফেব্রুয়ারী..” তাকে বাঁচিয়ে রাখববে অনন্তকাল। একটা মানুষের জন্য
এতো ভালোবাস। কি চাই আর তাঁর।
একটু “৫২” এর কথায় আসি। ঢাকায় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের
মিছিলে যেদিন গুলি চলেছিল, তার দু’দিন পর দুই বন্ধু আবদুল গাফফার চৌধুরী
আর শফিক রেহমান যোগ দিয়েছিলেন এক প্রতিবাদ মিছিলে। দু’জনেই তখন ঢাকা
কলেজের ছাত্র, শফিক রেহমান তখন পরের মাসে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেয়ার
জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছাত্র জীবনেই দেশের জন্য ত্যাগী ছিলেন প্রিয় এই
লেখক। মিছিলটি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে দিয়ে যাচ্ছে,
পুলিশের হামলায় আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। এক সময়
ঢাকার সাড়া জাগানো পত্রিকা যায় যায় দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান সেদিন
মিছিলে ছিলের তাঁর সাথে। তিনি লিখেছেন- “তখনই বেশ লম্বা-চওড়া, মোটা-সোটা
ছিলেন গাফ্ফার চৌধুরী। আমি ছুটে গিয়ে তাকে তুললাম, আমার কাঁধে ভর দিয়ে
কিছুদূর হাঁটার পর একটা রিকশা পাওয়া গেল। সেই রিকশায় করে আমি তাকে নিয়ে
গেলাম ৩৭ নম্বর বেচারাম দেউরিতে, সেই বাড়িতেই তখন আমরা থাকি। আমার বাবা
তখন ঢাকা কলেজের হোস্টেলের সুপারিন্টেনডেন্ট”। পরের কয়েক মাস আবদুল
গাফফার চৌধুরী ঐ বাড়িতেই কাটিয়েছেন। এখানে বসেই তিনি লিখেছিলেন সেই
কবিতা: “আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে
পারি…”, যেটি পরবর্তীকালে আলতাফ মাহমুদের সুরে পরিণত হয় বাংলাদেশের
ভাষা আন্দোলনের প্রধান সঙ্গীতে।
খ্যাতিমান এই লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯শে মে ২০২২ লন্ডনে ৮৭-বছর বয়সে
মারা যান। সাত দশকের বেশি সময় ধরে দুই হাতে লিখে গেছেন তিনি। মৃত্যুও আগ
পর্যন্ত অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের
রাজনীতি, সমাজ, দুর্নীতি, বাংলাদেশের সব ধরণের উত্থান-পতনকে বুকে ধরে
যিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন এই প্রিয় লেখক। যতদিন বাংলা ভাষা, শহীদ মিনার, ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গান থাকবে
ততদিন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বাঙালির মাঝে বেঁচে থাকবেন।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে দীর্ঘদিনের প্রবাসজীবন ছিল তাঁর। সেখানে বসেই কলম
চালাতেন দেশের জন্য। জেগে থাকতেন দেশের মানুষের কল্যাণ ভাবনায়। দীর্ঘদিন
অসুস্থ ছিলেন এই লেখক। মেয়ের মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙ্গেও পড়েন। তবু
চলেছে কলম জোড়ছে। একজন মানুষের কর্মের লক্ষ্য থাকে সাফল্য। সেই সাফলৌর
চেয়ে বেশিই হয়তো পেয়েছেন এই লেখক। সাফল্যই তাকে কিংবদন্তি করে তুলেছে।
প্রবাদতুল্য এই মানুষটির জন্য কতনা ভালোবাসা মানুষের। তাঁর প্রয়াণে
মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সব
বিশিষ্ট-গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি শোক প্রকাশ করেছেন। ভারতের শীর্ষ
আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, “প্রয়াত হলেন ঢাকার বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের
নীলকণ্ঠ পাখি”। তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক জ্ঞানের চর্চায় নিবিষ্ট থাকা এক
মানুষ। তাঁর পুরা দেহটা ছিলো দেশ প্রেমে ভরা। বাংলাদেশ, জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম ও শর্তহীন আনুগত্য,
ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। আমাদেও অনন্ত ভালোবাসা শ্রদ্ধাও রইলো দেমপ্রেমী এই
লেখকের প্রতি।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। বরিশালের
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ার এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যখন
রক্ষণশীল রাজনৈতিক বিশ্বাসের বাইরে আসতে নারাজ তখন অনুরূপ এক পারিবারিক
পরম্পরার যে মানুষটি সেদিন দেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে
সম্পৃক্ত করেছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন, পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে
বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে কলম ধরেছেন তিনি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।
মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সরকারের প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক ‘জয়
বাংলা’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। বাঙালির ভাষা
আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে
একাত্ম হয়ে রয়েছে গাফ্ফার চৌধুরীর নাম।
১৯৭৪ সাল থেকে গাফফার চৌধুরী লন্ডন প্রবাসী। স্বাধীনতার পর স্ত্রীর
চিকিৎসার জন্য বেছে নেন লন্ডনের স্থায়ী প্রবাস জীবন। অজানা এক ভাইরাসের
আঘাতে তার স্ত্রীর শরীর অবশ হয়ে যায়, পরিশেষে তাকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়।
টানা চল্লিশ বছর তিনি হুইলচেয়ারেই কাটিয়েছেন। দীর্ঘকাল শয্যাশায়ী থাকার
পর ২০১২ সালে তিনি পরলোক গমন করেন। অসুস্থ স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তানকে নিয়ে
জীবননির্বাহ করতে গিয়ে তাকে লন্ডনের গ্রোসারি শপেও কাজ করতে হয়েছে। এখন
জীবিত এক পুত্র ও তিন কন্যার সবাই উচ্চশিক্ষিত। মাত্র এক মাস আগে তার
আরেক মেয়ে বিনীতার অকাল মৃত্যু হয়েছে। লন্ডনে স্থায়ী নিবাস গড়ে তুললেও
তিনি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেননি। প্রবাসে থেকেও নিজের লেখনীর
মাধ্যমে তিনি মুক্তবুদ্ধি এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের স্বপক্ষে জনমত গড়ে
তুলেছেন, বাংলাদেশকে নিয়ে লিখেছেন কলাম-গল্প-কবিতা-উপন্যাস। বহুমাত্রিক
কলমযোদ্ধা আবদুল গাফফার চৌধুরী ছিলেন একাধারে সাংবাদিক, কবি, প্রাবন্ধিক
ও কলামিস্ট।
একজন লেখক বলেছেন- আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ‘কলম পেশা মজুর’ ছিলেন। শব্দটা
বেশ ভালো লেগেছে। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জীবনটিই কেটেছে লেখালেখির মধ্য
দিয়ে। তিনি তার জীবন চালানোর মূল মাধ্যম হিসেবে কলমকেই বেছে নিয়েছিলেন।
যেখানে অন্যকিছুর ধারের কাছেরও ছিলেন না গাফ্ফার চৌধুরী। ১৯৫০ সালেই
গাফফার চৌধুরীর কর্মজীবন পরিপূর্ণভাবে শুরু হয়। এ সময়ে তিনি ‘দৈনিক
ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক
সংবাদ’ প্রকাশ হলে গাফফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। ১৯৫৩ সালে
মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের ‘মাসিক সওগাত’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন
গাফফার চৌধুরী। এসময় তিনি ‘মাসিক নকীব’ও সম্পাদনা করেন। একই বছর তিনি
আবদুল কাদির সম্পাদিত ‘দিলরুবা’ পত্রিকারও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। ১৯৫৬
সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। ওই বছরই তিনি
প্যারামাউন্ট প্রেসের সাহিত্য পত্রিকা ‘মেঘনা’র সম্পাদক হন। তিনি
বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রায় প্রতিটি পত্রিকায় কলাম লিখেছেন। একজ
মানুষের জীবনে আর কি চাই।
একুশের গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯ মে বৃহস্পতিবার লন্ডনের একটি
হাসপাতালে একজন খ্যাতিমান কলমযোদ্ধার জীবনাবসানের সঙ্গে সঙ্গে একটি
জীবন্ত ইতিহাসেরও পরিসমাপ্তি ঘটল। তিনি নানা জটিলতায় ভুগছিলেন; ডাক্তার
আগাম মৃত্যু সংবাদ দিয়েছিলেন, ডাক্তারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই তিনি
আমাদেও সবাইকে শোকের সাগওে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। ‘আর্থ-সামাজিক
প্রেক্ষাপটে, গাফ্ফার চৌধুরী সর্বদা বস্তুনিষ্ঠ কলাম লিখতেন যাতে জাতিকে
অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা থাকতো।
আমরা এখন এই কলামগুলো থেকে বঞ্চিত হব।
তার হৃদয়জুড়ে বিরাজ করতো প্রিয় মাতৃভূমি; যা তার লেখনিতে প্রকাশ পেয়েছে
সবসময়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের
নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর লেখুনী; তাঁর অবদানের কথা
“আমরা কি কখনো ভুলিতে পারি“। বিশ্বখ্যাত একজন বরেণ্য সাংবাদিক হিসেবে
তার অবদান বাঙালি জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে সবসময়। ভালো থাকবেন
প্রিয় লেখক। শ্রদ্ধা।
৥ লেখক- মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সমাজ গবেষক।