• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

অর্থ মন্ত্রণালয় টেলিটককে নতুন কোনো ঋণ দেবে না


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৪, ২০১৭, ১:১৯ PM / ২৯
অর্থ মন্ত্রণালয় টেলিটককে নতুন কোনো ঋণ দেবে না

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

সরকারের মালিকানাধীন মুঠোফোন অপারেটর টেলিটককে নতুন কোনো ঋণ দিতে রাজি নয় অর্থ মন্ত্রণালয়। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে সংস্থাটির প্রায় ৬৭৬ কোটি টাকার একটি ঋণ প্রস্তাব আটকে দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, সরকারের তহবিল থেকে টেলিটককে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হলে তা বাজার প্রতিযোগিতার জন্য সহায়ক হবে না। একই সঙ্গে এ ধরনের ঋণ প্রতিষ্ঠানটিতে নৈতিক সংকট ও অদক্ষতা বৃদ্ধি করবে। এতে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে অর্থের সংস্থান নিয়ে সংকটে পড়েছে টেলিটক।

সারা দেশে দ্বিতীয় (টুজি) ও তৃতীয় (থ্রিজি) প্রজন্মের ২ হাজারের বেশি নতুন টাওয়ার তৈরির জন্য গত বছর প্রকল্পটি হাতে নেয় টেলিটক। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গত ২১ জুন প্রকল্পটির অনুমোদনও দেওয়া হয়। এতে মোট ব্যয় ধরা হয় ৬৭৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের ঋণ হিসেবে ৬০৭ কোটি টাকা আর টেলিটকের নিজস্ব তহবিল থেকে ৬৮ কোটি দেওয়ার কথা ছিল।

প্রকল্পটির জন্য ১ শতাংশের কম সুদ হারে ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করে এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। তবে একনেকের পরামর্শ অনুসারে টেলিটককে ১ শতাংশের কম সুদে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় রাজি নয় বলে জানা গেছে। এর কারণ ব্যাখ্যায় মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বলছে, টেলিটক বর্তমানে যে সেবা দিচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক। প্রতিষ্ঠানটি বাজারে প্রতিযোগিতা করে যাতে নিজেই চলতে পারে এ জন্য শুরু থেকেই একে কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেলিটককে ১ শতাংশের কম সুদে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব যুক্তিযুক্ত নয়।

একনেক প্রস্তাবিত উপায়ে ঋণ না দিয়ে এ জন্য প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এর একটি হলো টেলিটকের যত দায়-দেনা আছে তা পরিশোধ করে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বাজারমূল্যে ঋণ নেওয়া। এ জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাধ্যমে একটি সমন্বিত প্রস্তাব তৈরি করে অর্থ বিভাগে জমা দিতে টেলিটককে বলা হয়। আরেকটি প্রস্তাব হলো, দায়-দেনা পরিশোধের পর টেলিটক যাতে সহজেই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পেতে পারে, সে জন্য প্রয়োজনে ব্যাংক গ্যারান্টিসহ যেকোনো উদ্যোগ অর্থ বিভাগ নেবে। গত নভেম্বরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জালাল আহমেদের সভাপতিত্বে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে প্রকল্পটির অর্থায়নের বিষয়ে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব জালাল আহমেদ বলেন, গত নভেম্বরে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো প্রস্তাব এখন পর্যন্ত জমা দেয়নি টেলিটক। এই বিষয়ে প্রস্তাব পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টেলিটক ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বকেয়ার পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে থ্রিজি তরঙ্গের জন্য বিটিআরসির কাছে বকেয়া রয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণ আছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

প্রকল্পটির বিষয়ে একনেকের অনুমোদন পাওয়ার পর টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে, অ্যালকাটেল-লুসেন্ট (বর্তমানে নকিয়া) ও নকিয়া নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে টেলিটক। চুক্তি হলেও অর্থের অভাবে এসব প্রতিষ্ঠান এখনো কাজ শুরু করেনি। এর ফলে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করা সম্ভব হবে না বলে টেলিটকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বর্তমানে সারা দেশে টেলিটকের মোট ৩ হাজার ৭৫০টি টাওয়ার আছে। এর মধ্যে টুজি টাওয়ার আছে ২ হাজার ২০০ আর থ্রিজি টাওয়ার আছে দেড় হাজারের কিছু বেশি। টেলিটকের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা দেশে নেটওয়ার্ক না থাকা বর্তমানে অপারেটরটির সবচেয়ে বড় সমস্যা। গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংকের প্রতিটিরই ৮ হাজারের বেশি টাওয়ার আছে। সেখানে মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাওয়ার নিয়ে অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন।

এ বিষয়ে জানতে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. গোলাম কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, টেলিটকের সেবার মান বাড়াতে হলে নেটওয়ার্ক উন্নয়নে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ না পেলে পরিকল্পনামাফিক কাজ করা সম্ভব নয়।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম /০১.১০ পিএম/০৪//২০১৭ইং)