• ঢাকা
  • সোমবার, ১৭ Jun ২০২৪, ১০:৫২ অপরাহ্ন

অন্তহীন সমস্যা ও সংকটে জর্জরিত বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স


প্রকাশের সময় : জুন ১৬, ২০১৭, ৫:২৭ PM / ৫৪
অন্তহীন সমস্যা ও সংকটে জর্জরিত বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

 

রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া : অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মাতৃ-প্রসূতি সেবায় ৭ বার জাতীয় পুরুস্কারপ্রাপ্ত এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘ প্রায় ২ বছর সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ ছিলো।ফলে ওই সময়ে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে প্রসূুতি রোগীদের। বিশেষ করে কার্ডধারী দরিদ্র প্রসূতি রোগীদের দূর্ভোগের শেষ ছিলোনা। সম্প্রতি ডা. মাহাবুব হোসেনকে দিয়ে এনেসথেসিয়া চিকিৎসকের এ পদটি পূরণ করা হলেও জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনী বিশেষজ্ঞ) তানিয়া আফরোজ’র সিজারিয়ান অপারশেনের মূল দায়িত্ব পালন করছেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রিতা রানী শীল।জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনী বিশেষজ্ঞ) ডা.তানিয়া আফরোজ’র বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বরিশাল শহর থেকে প্রাইভেটকার যোগে বানারীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিছু সময়ের জন্য এসে হাজিরা দিয়ে পূনরায় ফিরে গিয়ে বরিশালে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন সহ প্রাইভেট প্রাকটিসে ব্যস্ত সময় পাড় করেন।এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে মেডিসিন ও সার্জারী বিশেষজ্ঞ পদ শুন্য রয়েছে ।ফলে উন্নত সেবা থেকে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।দীঘর্ দিন ধরে ডেন্টাল ইউনিট অকেজো থাকায় চিকিৎসক থাকলেও ডেন্টাল সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার কার্যক্রমের অনুমোদন লাভ করলেও সেই থেকে পূর্বের ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে কার্যক্রম চলছে। দীর্ঘ ৬ বছরেও এখানে ৫০ শয্যা হাসপাতালের জনবল ও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ টি চিকিৎসক কোয়ার্টার নির্মান করা হলেও সেখানে আবাসস্থল নেই কারও। খোদ আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) ডাঃ রিতা রাণী শীল সহ সিংহভাগ চিকিৎসকের আবাসস্থল বরিশাল শহর।উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নব কুমার সমদ্দারের আবাসস্থল স্বরুপকাঠি উপজেলায়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও)’র সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালণের জন্য আবাসস্থল কোয়ার্টারে হওয়ার বিধিবিধান থাকলেও তারা তা মানছেন না।জানা গেছে আবাস স্থল বরিশাল শহর এলাকায় অনেক চিকিৎসক বিভিন্ন ক্লিনিক ও চেম্বার প্রাইভেট প্রাকটিস করে বাড়তি ইনকাম করে থাকেন।এদিকে ব্যবহার ও রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে ধংশ হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাসপাতালের কোয়ার্টারগুলো।চিকিৎসকরা না থাকায় অব্যবহৃত কোয়ার্টারগুলো মাদকসেবীদের নিরাপদ “মাদক আড্ডাখানা”ও “গবাদি পশু-পাখিদের” আশ্রয়স্থল ও হাসপাতাল ক্যাম্পাস ‘গরু-ছাগলের’ বিচরণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এদিকে পর্যাপ্ত ফুয়েল বরাদ্দ না পাওয়ায় হাসপাতালে জেনারেটর মেশিন অতি জরুরী প্রয়োজন মূহুর্ত ছাড়া ব্যবহার করা হয় না।আবার অনেক সময় জেনারেটর মেশিন বিকল হয়ে পড়লে বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের সময় ‘র্চাজার ও হ্যাজাক’ লাইট দিয়ে করা হয় অপারেশন। বিদ্যুৎ চলে গেলেই পুরো হাসপাতাল ভূতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়।তাপদাহের কারনে রোগীরা আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়েন।ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক পাখা না থাকায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।এদিকে দীর্ঘদিন পরে বিকল এক্স-রে মেশিনটি মেরামত করা হলেও রোগীদের হয়রানি বন্ধ হয়নি।এছাড়া নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া গেছে রোগীদের কাছ থেকে।রোগীদের ব্যবহৃত বাথরুমের অবস্থাও বেহাল।হাসপাতালের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন,নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর।রোগীদের সঙ্গে ডাক্তার, নার্স ও আয়াদের দুর্ব্যবহার নিত্যনৈমেত্তিক ঘটনা।ওষুধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টেটিভদের উৎপাতে অতিষ্ট রোগীরা।পত্রিকায় লেখালেখির কারনে ডাক্তারদের ফি নেওয়া বন্ধ হলেও রোগীরা নতুন দূভোর্গে পড়েছেন। দুপুর ২ টার পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দূভোর্গে পড়তে হয়।জরুরী বিভাগে দায়িত্ব পালণ করা একজন চিকিৎসকের পক্ষে ইনডোর ও আউট ডোরের রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভবপর হয় না। ফলে আগন্তুক রোগীদের বাধ্য হয়ে চেম্বারে ৪/৫ শত টাকা ভিজিট দিয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। মাতৃ স্বাস্থ্য ভাউচার স্কীম নিয়েও রয়েছে নানা অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ।হাসপাতালের সামনে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার থেকে মাসোয়ারা নিশ্চিত করতে রোগীদের সেখানে যেতে উৎসাহিত করারও অভিযোগ রয়েছে।এছাড়া ওই ক্লিনিকে গিয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সিজারিয়ান সহ বিভিন্ন অপারেশন করার অভিযোগ পুরোনো।এদিকে ১১ টি পদের বিপরীতে ৯ জন চিকিৎসক থাকলেও বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত হাসপাতালে না আসার অভিযোগ রয়েছে।এদের মধ্যে ডা. দিপান্বিতা পপি কাগজপত্রে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক হলেও উর্ধ্বতন মহলকে ম্যানেজ করে দায়িত্ব পালণ করছেন বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে। ফলে এখানে ৪/৫ জন চিকিৎসকের পক্ষে প্রতিদিন আউট ডোরে কয়েকশত রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া কষ্ট ও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।এদিকে জানা গেছে এনেসথেসিয়া ডা. মাহাবুব হোসেন ও ডা. মিজানুর রহমান ঈদের পর পরই উচ্চতর কোর্স সম্পন্ন করতে চলে যাচ্ছেন। ফলে তারা চলে যাওয়ার পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবার সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ হয়ে যাওয়া সহ চিকিৎসক সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে।এদিকে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ২০১২ সালে তৎকালীণ স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডাঃ আ ফম রুহুল হক সরেজমিন পরির্দশনে এসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চাখার ১০ শয্যা হাসপাতালের চার চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন।অপরদিকে চাখার ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে একজন চিকিৎসক দিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় রোগীরা ঠিকমত সরকারী স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেননা।সেখানে অন্তহীণ সমস্যা নিয়ে ঝুকিপূর্ণ হাসপাতাল ভবনে উৎকন্ঠার মধ্যে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।এদিকে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নবকুমার সমদ্দার জানান ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে ৫০ শয্যার হাসপাতাল চালাতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে নানা সমস্যা ও সংকটের মধ্যেও রোগীদের যথাযথ সেবা দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৫:২৭পিএম/১৬/৬/২০১৭ইং)