• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১২:১৬ অপরাহ্ন

অন্তরঙ্গ ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় তরুণীর আত্মহত্যা


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০১৭, ১০:২৫ PM / ৪৭
অন্তরঙ্গ ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় তরুণীর আত্মহত্যা

 

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : ইতালিতে অন্তরঙ্গ ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় আত্মহত্যা করলেন তিজিয়ানা কান্তনী নামে নেপালি বংশোদ্ভূত এক তরুণী। আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে কান্তনীর সম্ভবত কয়েক সেকেন্ডও সময় লাগেনি, এমনটাই জানালেন কান্তনীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু তেরেসা পেট্রোসিনো। কান্তনীর সঙ্গে প্রায় ১৫ বছরের বন্ধুত্ব ছিল তার।
পেট্রোসিনো বলেন, ‘কান্তনী অসম্ভব সুন্দর ছিল কিন্তু একেবারে শেষ হয়ে গেল।’
২০১৫ সালের এপ্রিলে নেপালের উপশহর মুগনানো থেকে ৩১ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কয়েকটি অন্তরঙ্গ ভিডিও পাঁচজন ব্যক্তির কাছে পাঠান। যাদের কাছে এই ভিডিওগুলো পাঠানো হয়েছিল এদের মধ্যে কান্তনী’র প্রেমিক সার্জিও ডি পেলোও ছিল, যার সঙ্গে কান্তনীর সম্পর্কটা কিছুদিন ধরে খারাপ যাচ্ছিল। ভিডিও দেখা যাচ্ছে মেয়েটি কয়েকজন অপরিচিত লোকের সঙ্গে যৌন ক্রিয়া-কলাপ করছে, জানান কান্তনীর বন্ধু।
কান্তনীর বন্ধু জানান, ভিডিও খুব দ্রুত শেয়ার হয় এবং কয়েকটি প্রাপ্ত বয়স্কদের ওয়েবসাইটে আপলোড হয়। ভিডিওটিতে শারীরিক কার্যকলাপ স্পষ্ট ছিল না। কিন্তু একটি শব্দ শোনা গিয়েছিল। যার হাতে ক্যামেরা ছিল তাকে উদ্দেশ্য করে মেয়েটি বলছিল, ‘তুমি কি ভিডিও করছ?’
পেট্রোসিনো বলেন, ‘যে শারীরিক সম্পর্কের সময় ভিডিও ধারণ উপভোগ করে তারপক্ষেই এমন ধরনের মন্তব্য করা সম্ভব। যাই হোক ভিডিওটা কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতা ছাড়াই অনেকে দেখেছিলেন। সে যদি ভিডিও ধারণ উপভোগ করত তবে সে এসব বিষয়ে কিছু মনে করত না। কিন্তু ইটালিয়ানরা সেটা দেখার চেয়েও আরো বেশি কিছু করেছে। অনেকেই এই ভিডিওটা দেখে বাজে বাজে মন্তব্য করেছে। পরবর্তীতে তার ছবি বিভিন্ন টি-শার্ট ও প্যারডি ওয়েবসাইটে দেখা যায়। তার জীবনে এটা কি প্রভাব আনবে সেটা কেউ চিন্তা করেনি। সবাই ভেবেছিল এতে সে খুব খুশি হবে কিন্তু এটা একটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।’
এ প্রসঙ্গে সমাজ কর্মী সেলবাজিয়া লুকারেল জানান, মানুষের মধ্যে একটা ভুল ধারণা ছিল যে একজন লজ্জাহীন ব্যক্তি এই ধরনের ভিডিওয়ের মাধ্যমে ভাইরাল হতে চাচ্ছে। আপনি ভিডিও শুট করতে পারেন, কিছু মানুষের সঙ্গে সেটা শেয়ার করতে পারেন কিন্তু আপনি এগুলো যদি আরো বেশি শেয়ার করতে চান তবে এ বিষয়ে একটি মৌন সম্মতি থাকতে হবে।
তাজিনিয়া কান্তনী অনেক দুর্বল মানসিকতার ছিল এবং এগুলো দেখে সে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। সে এবং আমি এগুলোর বিস্তারিত বিষয়ে কখনো আলোচনা করেনি, জানান তেরেসা। তিনি বলেন, ‘আমি এগুলো কখনো দেখেনি এবং দেখতেও চাইনি। সে খুব মানসিক অস্থিরতায় ভুগছিল তবে সে মানসিকভাবে অনেক শক্তও ছিল।’
তেরেসা জানান, কান্তনী এ ব্যাপারে আইনি লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু ভিডিওটি ওয়েবসাইট থেকে নামানোর তাৎক্ষনিক কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সে আদালতে একটি মামলা করল। মামলার আরজিতে সে উল্লেখ করল, তার সম্মতি ছাড়াই ভিডিওটি বিভিন্ন সাইটে আপলোড করা হয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যেখানে তার স্বাভাবিক জীবন-যাপন কঠিন হয়ে পড়ল।
যেহেতু মানুষ তাকে ভালোভাবে মূল্যায়ন করছে না এই কারণে সে বাড়ির বাইরে যেতে চাইত না। ভার্চুয়াল জগত ও বাস্তব জগত তার কাছে একই মনে হল। বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে দেখল যে, এই পরিস্থিতি সহজে স্বাভাবিক হবে না। সে ভাবল তার সম্ভাব্য স্বামী ও সন্তানরা এই ভিডিওটি দেখবে, যেহেতু ভিডিওটি এখান থেকে সরানো যাবে না। হতাশায় কান্তনী সে তার নিজ শহর নেপালের মুগনানোতে চলে গেল, এমনটাই জানালেন কান্তনীর বন্ধু তেরেসা পট্রোসিনো।
বিবিসি’র ওই সাংবাদিককে কান্তনীর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে প্রায় এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কান্তনীর মা মারিয়া তেরেসা গিগলিও বলেন, ‘আমার মেয়েটা অনেক ভালো ছিল কিন্তু তার জীবনে কিছু হতাশা ছিল। জন্মের পর থেকে সে তার বাবার আদর পায়নি। এমনকি সে তার বাবার সঙ্গে কখনো দেখাও করতে পারেনি। এটা তার জীবনকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
কান্তনী ও তার মা একসঙ্গে থাকতেন। তেরেসা গিগলিও জানান, সে ইতালির সঙ্গীত শিল্পীদের তালিকায় নাম লিখিয়েছিল, সে নিয়মিত উপন্যাস পড়ত এবং পিয়ানো বাজাত। কিন্তু ওই ঘটনার পর সে সবকিছু ছেড়ে দিল। তার জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেল। মানুষ তাকে নিয়ে মজা করা আরম্ভ করল। সে ভিডিওটা পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইটে আপলোড হওয়ার পর মানুষ তাকে অন্য নামে ডাকা আরম্ভ করল।
গেল বছরের সেপ্টেম্বরে নেপালের আদালত বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সার্চ-ইঞ্জিন থেকে ওই ভিডিও সরানোর নির্দেশ দেয়। তার খরচ হিসেবে আমাদের ২০ হাজার ইউরো দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য, জানান কান্তনীর মা মারিয়া তেরেসা।
কান্তনীর মা মারিয়া বলেন, ‘১৩ সেপ্টেম্বর আমি অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমার মেয়ে বাড়িতেই ছিল। আমার এক প্রতিবেশী আমাকে ফোন করল, শান্ত গলায় সে আমাকে বাসায় আসতে বলল। বাড়িতে গিয়ে দেখি আমার বাসার সামনে পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্স। আমার বুঝতে বাকি রইল না কি ঘটেছে। আমার প্রতিবেশী আমাকে শান্ত হওয়ার জন্য বললেন। এমনকি অনেকে আমাকে গাড়ি থেকেও নামতে দেননি। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। আমি আমার মেয়েকে শেষ দেখাটাও দেখতে পাইনি। সে যেদিন মারা গেল, সেইসাথে আমার জীবনও শেষ হয়ে গেল।’
একদিন পর তার অন্তোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হল। সে অন্তোষ্টিক্রিয়া ছিল খুব ভালো ও সুন্দর কিন্তু সে বিষয়টা আমাকে বিষয়ে তুলেছিল, জানান মারিয়া তেরেসা।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১০:২২পিএম/১৩/২/২০১৭ইং)