• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন

অননুমোদিত পাঠ্যবই প্রাথমিক-মাধ্যমিক সিলেবাসে


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১২, ২০১৭, ৪:০৪ PM / ৫৫
অননুমোদিত পাঠ্যবই প্রাথমিক-মাধ্যমিক সিলেবাসে

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অননুমোদিত বিভিন্ন পাঠ্যবই। এসব বইয়ের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কোনো অনুমোদন নেই। ফলে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করায় শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বাড়তি বইয়ের বোঝা।

সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে মাধ্যমিক স্কুলের হালচালের এমন চিত্র উঠে এসেছে।

জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের সিলেবাসে বাড়তি বই যোগ করে বুকলিস্ট তৈরি করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। মূলত বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে এটা করা হচ্ছে। অনুমোদনহীন এসব বই কেনা ‘বাধ্যতামূলক’- এমন নির্দেশনা জুড়ে দিয়ে চড়া দামে ওইসব বই শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।

আর এসব বই বিক্রির একটা অংশ যাচ্ছে স্কুলের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির পকেটে। শিক্ষার্থীদের ওপর বইয়ের বোঝা কমাতে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও তা ভেস্তে যাচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাতক্ষীরা উপজেলার শিক্ষক সমিতির নেতা ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্যদের যোগসাজশে এনসিটিবির অনুমোদনহীন বই পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ জেলার সাতটি উপজেলার ৩১৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোট নয় হাজার ৭০৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। তাদের সমন্বয়ে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা ‘মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’ নামে কমিটি করা হয়েছে। তারাই এসব বই প্রণয়ন ও মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন।

অননুমোদিত বই পাঠ্যবই হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে শিক্ষকদের মাথাপিছু এক থেকে দুই হাজার টাকা, আর স্কুল কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয় ২০ হাজার টাকা।

মূলত সমিতির নেতারা স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ দলীয় লোকদের ম্যানেজ করে এ বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। ফলে সাতক্ষীরার উপজেলাগুলোতে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কাছে জিম্মি জেলার স্কুলগুলোর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে এনসিটিবি নির্ধারিত বইয়ের বাইরে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) শিক্ষার্থীদের জন্য মোহাম্মদ আবুদল হাফিজের ‘শৈলী বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি’, মো. গোলাম মোস্তফার ‘সেতু বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি’, নাজমা বানুর ‘ভাষা প্রদীপ বাংলা ব্যাকরণ’, মো. মোসলেম উদ্দিনের ‘ফায়াদ বাংলা ব্যাকরণ’, রুহুল আমিন বাবলুর ‘অভিনব বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিত’, মোস্তাফিজুর রহমানের ‘আমার সহজ বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি’, নজরুল ইসলামের ‘Fahad English Grammar & Compositon’, মো. সামসুল হকের ‘Basic A+ English Grammar & Composition’, হোসেন আলীর ‘Easy Potential English Grammar, নজরুল ইসলামের ‘An Excellent Communication English Grammar’ বইগুলো সিলেবাসে যোগ করা হয়েছে। এসব বই নানান ভুলে ভরা ও নিম্নমানের।

কিন্তু সিলেবাসে থাকায় শিক্ষার্থীদের তা কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। কথিত প্রকাশকরা এসব বইয়ের যোগান দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

এ চিত্র শুধু সাতক্ষীরাতে নয়, একই অবস্থা দেশের অন্যান্য বিভিন্ন জেলায়।

এনসিটিবির অনুমোদন ছাড়া কোনো বই পড়ানো বা বুকলিস্ট তৈরি করা নিষিদ্ধ। বিষয়টি উল্লেখ করে সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা।

তিনি বলেন, এনসিটিবির নির্ধারিত পাঠ্যবই ছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ক্লাসে কোনো পাঠ্যবই পড়ানো যাবে না। এর বাইরে সিলেবাস তৈরি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।

তবে বিষয়গুলো মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ওয়াহেদুজ্জামান। এমন কাজের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

এদিকে, অনুমোদনহীন বই-বাণিজ্যের চিত্র আরও ভয়াবহ রাজধানীতে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রাজধানী মোহাম্মদপুর প্রিপারেটররি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীর এক অভিভাবকের দেয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রথম শ্রেণির ইংরেজি ভার্সনে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নিধারিত তিনটি বই থাকলেও সেখানে ১২টি বই পড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বইগুলোর মধ্যে New Oxford Modern English (Course Book-1), New Oxford Modern English (Work Book-1), Adventures with Grammar and Composition(Book-1), Success with Maths Ahead (Book-2), Computer Ahead (Class-1), Amazing Science (Class-1) ছাড়াও  Religious, Children General Knowledge ও Drawing বই রয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রূহী রহমান বলেন, এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন না থাকায় অনুমোদনহীন পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ কারণে শিক্ষার্থীদের বইয়ের ভার বেড়ে যাচ্ছে। শিক্ষা আইন বাস্তবায়নের পর এসব অন্যায় কার্যক্রমের সুনির্দিষ্ট শাস্তি নির্ধারণ করা হবে।

সম্প্রতি এমন অভিযোগে যশোরের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জরিমানা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব অনিয়ম বন্ধে শিক্ষা আইনে নোট-গাইড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি এনসিটিবির অনুমোদন ছাড়া ক্লাসে কোনো বই পড়ানো যাবে না বলেও আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। শিগগিরই এ আইন বাস্তবায়ন করা হবে বলে।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম /০৪.০০ পিএম/১২//২০১৭ইং)