
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : খোলা বাজারের মাংস ও দুধে থাকে স্বাস্থ্যঝুঁকি, অপরদিকে হিমায়িত মাংস ও দুধ অধিক নিরাপদ। হিমায়িত খাদ্যের পুষ্টিগুণ ও নিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য সারাদেশে ১২ মার্চ থেকে ১৮ মার্চ- ২০২৫ পর্যন্ত “হিমায়িত মাংস ও দুধ খাওয়ার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণা সপ্তাহ” পালন করা হচ্ছে।
এ উপলক্ষ্যে ১৬ মার্চ(রোববার) দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ‘বিশ্ব ব্যাংক’ এর সহায়তায় আইআরজি ডেভলোপমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড (আইআরজিডিএসএল) চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেনারি হাসপাতালে একটি বিশেষ ক্যাম্পেইন আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটিয়ার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হিমায়িত মাংস ও পাস্তুরিত দুধ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত, কারণ এটি আধুনিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত হয়। হিমায়িত মাংস সঠিক উপায়ে সংরক্ষণের ফলে এতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সুযোগ কম থাকে এবং এর পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে। একইভাবে, পাস্তুরিত দুধ উচ্চ তাপমাত্রায় প্রক্রিয়াকৃত হওয়ায় এতে থাকা ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস হয়, যা খাদ্যজনিত রোগের ঝুঁকি কমায়। অপরদিকে, বাজারের খোলা মাংস ও দুধ সংরক্ষণের মানদণ্ড অনুসরণ না করায় তা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। খোলা মাংসে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, যা ফুড পয়জনিংসহ নানা রোগের কারণ হতে পারে। তাছাড়া, কাঁচা দুধে টিবি, ব্রুসেলোসিস ও সালমোনেলা সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে, যা মানুষের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
দেশের বাজারে মাংস ও দুধের গুণগত মান নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাবার নিশ্চিতে হিমায়িত মাংস ও পাস্তুরিত দুধ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ খোলা মাংস ও কাঁচা দুধে জীবাণু থাকার সম্ভাবনা থাকে। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা হিমায়িত মাংস ও পাস্তুরিত দুধ বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
প্রাণিসম্পদ ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ ড. এস এম রাজিউর রহমানের মতে, খোলা বাজারের মাংসকে বেশি সতেজ ও সুস্বাদু মনে করা হলেও এটি একটি ভুল ধারণা। দীর্ঘ সময় খোলা অবস্থায় থাকা মাংস সহজেই জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে, যা দ্রুত নষ্ট হয়ে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে। অপরদিকে, সঠিকভাবে সংরক্ষিত হিমায়িত মাংসের প্রোটিন, আয়রণসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান তাজা মাংসের মতোই বজায় থাকে এবং চর্বির অক্সিডেশন কম থাকায় এর পুষ্টিগুণ দীর্ঘসময় অক্ষুণ্ণ থাকে। একইভাবে, পাস্তুরিত দুধ, ঠান্ডা দুধ এবং ইউএইচটি দুধ সম্পূর্ণ খাঁটি, স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ, কারণ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এসব দুধ জীবাণুমুক্ত করা হয়। তাই প্রতিদিনের সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গঠনে নিরাপদ ও সঠিকভাবে সংরক্ষিত দুধ-মাংস গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, প্যাকেটজাত দুধ ও মাংসে যথাযথ লেবেলিং থাকে বলে ট্রেসেবিলিটি নিশ্চিত করা যায়, যা খাদ্য নিরাপত্তা ও ভোক্তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশিষ্ট কৃষি ও প্রাণিসম্পদ অর্থনীতিবিদ ও প্রকল্প টিম লিডার প্রফেসর ড. এস এম ফখরুল ইসলাম, বলেন, পটিয়া বাংলাদেশের একটি অন্যতম দুগ্ধ উৎপাদনকারী অঞ্চল। এই এলাকার খামারিগণ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আবার দুধ ও মাংসের ভোক্তাদেরও রয়েছে কিছু কিছু সমস্যা ও ভুল ধারণা। যেমন, হিমায়িত মাংসের জোগানের অভাব, হিমায়িত দুধ ও মাংসের স্বাদ ও পুষ্টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকা ইত্যাদি। হিমায়িত খাদ্য সম্পর্কে বাংলাদেশের ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। ক্রেতাদের সচেতন করার জন্য আমরা সারাদেশে একটি সমন্বিত প্রচারণা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। তিনি আরও বলেন, চাহিদা বাড়লে বাংলাদেশে কোল্ড চেইন ব্যবস্থাপনার জন্য বিনিয়োগ বাড়বে ও খাদ্যের পচন কমিয়ে বাজারের মূল্য কমবে। ফলে খামারি, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাগণ উপকৃত হবেন।
প্রধান অতিথীর বক্তব্যে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করে এবং খাদ্যের পুষ্টিমান ঠিক রাখতে আমাদের অবশ্যই হিমায়িত খাদ্য মাংস ও দুধ খেতে হবে। খোলা বাজারের খাবারে নানা ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে কিন্তু হিমায়িত খাবার থাকে জীবাণুমুক্ত। আবার অনেক সময় রোগাক্রান্ত পশু জবাই করা হয় বা বিক্রির জন্য এক স্থান থেকে অন্য জায়গায় নেয়া হয়। এরফলে ঐ রোগ পুরা রাস্তায় বা ভোক্তার শরীরে ছড়াতে থাকে। তাই খাদ্য আমাদের নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।
আইআরজিএসএল এই প্রচারণা সপ্তাহে বিভিন্ন ব্যানার, লিফলেট, গণমাধ্যম প্রচার, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে সরাসরি সংলাপের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছে।
“সচেতন ভোক্তা, স্বাস্থ্যবান পরিবার—নিরাপদ খাবারে হিমায়িত দুধ-মাংসের অগ্রাধিকার!”
আপনার মতামত লিখুন :