• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন

সুনামগঞ্জ সীমান্তে কয়লা পাচারকালে ২ যুবকের মৃত্যু


প্রকাশের সময় : মার্চ ২০, ২০২৪, ১২:১৮ AM / ৫০
সুনামগঞ্জ সীমান্তে কয়লা পাচারকালে ২ যুবকের মৃত্যু

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তে ৩টি শুল্কস্টেশন থাকার পরও রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে প্রতিদিন ভারত থেকে পাচাঁর করা হচ্ছে হাজার হাজার মেঃটন কয়লা। এর ফলে একদিকে লাখলাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার অন্যদিকে চোরাই কয়লার গুহায় পড়ে বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল। কিন্তু সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য নেওয়া হচ্ছেনা জোড়ালো কোন পদক্ষেপ।
আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল থেকে ২ যুবকের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। মৃতরা হলো- জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের লাকমা নয়াপাড়া গ্রামের শাহাব উদ্দিনের ছেলে খাইরুল মিয়া (২৫) ও একই গ্রামের রমজান আলীর ছেলে মুখলেছ মিয়া (২৬)।
এলাকাবাসী ও বৈধ ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো গতকাল সোমবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে লাউড়গড় সীমান্তের দশঘর, পুরান লাউড়, শাহ আরেফিন মোকাম ও যাদুকাটা নদী এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী বায়েজিদ মিয়া ও জসিম মিয়াগং, চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলা, কড়ইগড়া, রাজাই, গারোঘাট, নয়াছড়া, রজনী লাইন এলাকা দিয়ে সোর্স আবু বক্কর, আলমগীর, রফিকুল ইসলাম, জম্মত আলী, সাহিবুর মিয়াগং, চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, এলসি পয়েন্ট, কলাগাঁও, জঙ্গলবাড়ি এলাকা দিয়ে সোর্স রফ মিয়া, আইনাল মিয়া, সাইফুল মিয়া, রিপন মিয়া, স্বপন মিয়া, বাবুল মিয়া, সাকিরুল মিয়া, সোহেল মিয়া, আনোয়ার হোসেন বাবলু, শরাফত আলী ও শামসুল মিয়াগং, বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের লামাকাটা, সুন্দরবন এলাকা দিয়ে গোলাম মস্তোফা, লেংড়া জামাল, মনির মিয়া, হযরত আলী, সুমন মিয়া, আলী হোসেনগং, বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট, লাকমা এলাকা দিয়ে সোর্স ইয়াবা কালাম, হোসেন আলী, জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়াগং ও টেকেরঘাট সীমান্তের রজনীলাইন, বুরুঙ্গাছড়া, বড়ছড়া ও চুনাপাথর খুনি প্রকল্প এলাকা দিয়ে গডফাদার তোতলা আজাদের নেতৃত্বে সোর্স পরিচয়ধারী শামীম মিয়া, কামাল মিয়া, ইসাক মিয়া, আক্কল আলী, শুভ্রত দাস, জম্মত আলী, রতন মহলদার ও কামরুল মিয়াগং বিজিবির নামে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চোরাই কয়লা থেকে ৫০টাকা ও সাংবাদিক-পুলিশের নাম ভাংগিয়ে প্রতিটন চোরাই কয়লা থেকে ১হাজার টাকা করে চাঁদা নিয়ে শতশত লোক দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা পাচাঁরের পাশাপাশি মাদকদ্রব্য ও চিনিসহ পেয়াজ, সুপারী, কসমেটিকস, গরু, মহিষ, ছাগল, মোটর সাইকেল, নাসিরউদ্দিন বিড়ি, সবজি, মাছ ইত্যাদি পাচাঁর শুরু করে।
এমতাবস্থায় রাত ১০টায় টেকেরঘাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের পিছনে অবস্থিত ভারতের চোরাই কয়লার গুহা থেকে কয়লা পাচাঁরের সময় গ্যাসের কারণে মাটি চাপা পড়ে খাইরুল মিয়া (২৫) ও মুখলেছ মিয়া (২৬) গুরুতর আহত হয়। পড়ে তাদের সহযোগীরা দুজনকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে রাত সাড়ে ১১টায় তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ওই দুই যুবকের শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত সুনামগঞ্জ পাঠায়। পরে রাত অনুমান সোয়া ১২টায় জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে পৌছার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ওই ২ যুবককে মৃত বলে ঘোষনা করে। এরআগে গত বৃহস্পতিবার (১৪) সকাল ৭টায় বরুঙ্গছড়া এলাকা দিয়ে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে চোরাই কয়লা গুহায় পাথর চাপা পড়ে আইয়ুব আলী (২৮) নামের এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত হয়। সে উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রজনী লাইন গ্রামের মজলু মিয়ার ছেলে। অন্যদিকে গত ৫ মার্চ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় কয়লা পাচাঁরের সময় সোর্স রফ মিয়া ও আইনাল মিয়ার ট্রলির নিচে চাপা পড়ে অনিন্দ্র দাস (১৩) এর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ৩ মাসে বালিয়াঘাট সীমান্তে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে চোরাই কয়লার গুহায় মাটি চাপা পড়ে ৭জনের মৃত্যু হয়েছে। আর লাউড়গড় সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান করতে গিয়ে বিএসএফের ধাওয়া খেয়ে যাদুকাটা নদীতে ডুবে এই পর্যন্ত শতাধিক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এতকিছুর পড়েও সোর্স পরিচয়ধারী ও তাদের গডফাদারের বিরুদ্ধে আইনগত কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে তারা দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সেই সাথে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন চোরাচালান বাণিজ্য করে ওরা এখন কোটিপতি। তাই এব্যাপারে সংশ্লিস্ট প্রশাসনের উপরস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।
এব্যাপারে তাহিরপুর থানার ওসি কাজী নাজিম উদ্দিন বলেন- থানা-পুলিশের কোন সোর্স নাই, সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধ করার দায়িত্ব বিজিবির। মৃত ২ যুবকের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এব্যাপারে আইনগত প্রক্রিয়া চলছে। সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক মাহবুবুর রহমানের সরকারী মোবাইল (০১৭৬৯-৬০৩১৩০) নাম্বারে বারবার কল করার পর ব্যস্ত পাওয়ার কারণে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।