• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৪:৩৮ অপরাহ্ন

শহীদ মিনারে লাকী আখান্দকে শ্রদ্ধা


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২২, ২০১৭, ১:৫৩ PM / ১৬৬
শহীদ মিনারে লাকী আখান্দকে শ্রদ্ধা

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। বৃষ্টির সঙ্গে মিশেছে সমবেত সর্বস্তরের মানুষের চোখের জল। তাঁরা হৃদয়ের সশ্রদ্ধ ভালোবাসা জানাতে এসেছেন প্রিয় শিল্পীকে। মুক্তিযোদ্ধা, সুরকার, সংগীত পরিচালক লাকী আখান্দের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়েছে। সেখানে আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার একটু পরে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এরপর চলছে শ্রদ্ধা নিবেদন।

ছবি: সাজিদ হোসেন

লাকী আখন্দকে শ্রদ্ধা জানান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল-সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ।

বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা হবে। মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হবে।

লাকী আখান্দ্ স্মরণে বক্তব্য দিচ্ছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ছবি: সাজিদ হোসেনলাকী আখান্দ্ স্মরণে বক্তব্য দিচ্ছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। 

সকাল ১০টার একটু পরে পুরান ঢাকার আরমানিটোলা মসজিদের সামনের মাঠে শিল্পীর প্রথম জানাজা হয়। তখনো ছিল বৃষ্টি। চোখের জলে আর শ্রদ্ধায় তাঁকে বিদায় জানানো হয় সেখানে।

ফুসফুসের ক্যানসারের আক্রান্ত এই শিল্পীর চিকিৎসা দীর্ঘদিন ধরে চলছিল। সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পুরান ঢাকার বাসায়। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।

শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ছবি: সাজিদ হোসেনশ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। 

লাকী আখান্দের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ অনেকে।

শহীদ মিনারে শিল্পীকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা। ছবি: সাজিদ হোসেনশহীদ মিনারে শিল্পীকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা। 

লাকী আখান্দের সুর করা গান সত্তর ও আশির দশকে তরুণ প্রজন্মের মুখে মুখে ফিরেছে। ‘এই নীল মনিহার’, ‘আমায় ডেকো না’ থেকে শুরু করে ‘আবার এল যে সন্ধ্যা’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ প্রভৃতি গান কালের সীমানা ডিঙিয়ে এখনো সমান জনপ্রিয়। আবার সমকালে জেমসের গাওয়া জনপ্রিয় গান ‘লিখতে পারি না কোনো গান’ লাকীর সুর করা। সমকালীন কণ্ঠশিল্পীরা তাঁকে বলেন সুরের ‘বরপুত্র’।

.

লাকী আখান্দের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: সাজিদ হোসেনলাকী আখান্দের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। 

পারিবারিক সূত্র জানায়, গুরুতর অসুস্থ হয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হলে ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে লাকী আখান্দের। এরপর ব্যাংককে ছয় মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। অবস্থার একটু উন্নতি হলে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে এনে তাঁকে ভর্তি করানো হয় বিএসএমএমইউতে। প্রায় আড়াই মাস এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর অতি সম্প্রতি আরমানিটোলার বাসায় ফেরেন তিনি। ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত শিল্পীর শারীরিক অবস্থা আরও গুরুতর হলে গতকাল সন্ধ্যায় আরমানিটোলার বাসা থেকে তাঁকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখানকার চিকিৎসকেরা শিল্পীকে মৃত ঘোষণা করেন।

লাকী আখান্দ্‌: ১৯৫৫–২০১৭লাকী আখান্দ্‌: ১৯৫৫–২০১৭

মুক্তিযোদ্ধা এই শিল্পীর চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকেও সহায়তা করা হয়েছিল। ‘ট্রিবিউট টু স্যার লাকী আখান্দ্’ শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গত বছর অনুষ্ঠিত হয় দুদিনব্যাপী কনসার্ট।

লাকী আখান্দের জন্ম ১৯৫৫ সালে, পুরান ঢাকায়। মাত্র ১৪ বছর বয়সে এইচএমভি পাকিস্তানের সুরকার এবং ১৬ বছর বয়সে এইচএমভি ভারতের সংগীত পরিচালক হিসেবে নিজের নাম যুক্ত করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে যোগ দেন লাকী আখান্দ্। আরেক কিংবদন্তি ছোট ভাই হ্যাপী আখান্দের সঙ্গে তাঁর যুগলবন্দী অনেক বিখ্যাত গানের জন্ম দিয়েছিল। ১৯৮৭ সালে শিল্পী হ্যাপী আখান্দের অকালমৃত্যুর পরপর সংগীতাঙ্গন থেকে অনেকটাই স্বেচ্ছানির্বাসন নেন লাকী। পরে আবার ফিরে আসেন।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম ০১.৪০পিএম/২২//২০১৭ইং)